২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

হতাশা কাটিয়ে পাটের দামে খুশি কুষ্টিয়ার চাষিরা

কুমারখালীতে পাট ধুতে ব্যস্ত কৃষক : নয়া দিগন্ত -

অবশেষে অনেক হতাশার পর ভালো দাম পেয়ে খুশি কুষ্টিয়া অঞ্চলের পাটচাষিরা। পুরো বর্ষায় অনাবৃষ্টির কারণে পাটের মান এবং দাম কী রকম পাওয়া যাবে তা নিয়ে বেশ হতাশায় ছিলেন তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ মৌসুমে সোনালি আঁশের দাম আগের বছরের তুলনায় বেশি পেয়ে বেশ খুশি পাটচাষিরা। তারা জানান, এবার পাটের ফলনও আগের বছরের তুলনায় ভালো।
কৃষকরা জানান, গত বছর এ সময় প্রতি মণ পাটের দাম ছিল এক হাজার ৭০০ টাকা থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা। এ বছর মৌসুমের শুরুতে বাজারে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৫০০ টাকা থেকে দুই হাজার ৯০০ টাকায়। প্রতি বিঘার পাট বিক্রি করে এবার কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। সেই সাথে পাটখড়ির দাম যুক্ত করলে প্রতি বিঘায় এবার কৃষকের লাভ হচ্ছে প্রায় ২০ হাজার টাকার মতো।
কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলার ছয়টি উপজেলায় এ বছর এক লাখ এক হাজার ২৮৪ একর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে, যা গত বছরের থেকে ৩০ ভাগ বেশি। এবার জমিতে দেশী, রবি-১, মেস্তা, জেআরও এবং তোষা জাতের পাট চাষ করা হয়। তবে উচ্চ ফলনশীল তোষা জাতের পাট চাষ হয়েছে সবচেয়ে বেশি।


পাটচাষিরা জানান, এবার বৃষ্টি কম হওয়ায় পুকুর-নালা, খাল-বিল ও ডোবাতে পানি ছিল না। ফলে পাট জাগ দিতে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। অনেক দূর থেকে পাট বহন করে এনে নদীতে জাগ দিতে হয়েছে। দাম বেশি পাওয়ায় তারা এবার খরচ পুষিয়ে লাভ করতে পারছেন।
সূত্র আরো জানায়, প্রতি বিঘায় আট থেকে ১০ মণ পাট হয়। অনেকে এখনো জমির পাট কাটছেন। নদীতে জাগ দিচ্ছেন। সেই হিসেবে এখনো পাটচাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। অনেকে জাগ দেয়া পাটের আঁশ ছাড়িয়ে, পানিতে ধুয়ে শুকিয়ে বিক্রির জন্য বাজারে নেয়ার জন্য প্রস্তুত করছেন।
দৌলতপুর উপজেলার কৃষক হামিদুর বলেন, এ বছর চার বিঘা জমিতে পাটের চাষ করেছি। বিঘাপ্রতি ১২ মণ পাট হয়েছে। খরচ বাদে লাভ হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার চাষি খাদেমুল জানান, এবার দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করে ২০-২২ মণ পাট ঘরে তুলেছি। আগের বছরের চেয়ে দামও বেশি, ফলনও এবার বেশি।
কৃষকরা জানান, বিগত বছরের তুলনায় দাম ভালো পাওয়ায় আগামী বছর পাটের চাষ বাড়বে। পাটের সাথে পাটখড়ির চাহিদাও বেশি। প্রতি বিঘায় প্রায় পাঁচ হাজার টাকার পাটখড়ি পাওয়া যায়। জ্বালানির কাজ ও বেড়া দেয়ার কাজে পাটখড়ির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
কুষ্টিয়া জেলা পাট অধিদফতরের মুখ্য কর্মকর্তা সোহরাব উদ্দিন বিশ্বাস জানান, গত বছর কৃষকরা সর্বশেষ ২৪০০-২৫০০ টাকা পর্যন্ত মণ হিসেবে পাট বিক্রি করেছেন। যখন পাট ওঠে তখনও দাম ছিল ১৭০০-২২০০ টাকা। এবারে পাটের দাম শুরু থেকেই আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার দুই শ’ টাকা মণ হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। তিনি আরো জানান, কৃষকদের উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে সহায়তা করা হয়ে থাকে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ জানান, এবার পাট চাষের উপযোগী আবহাওয়া ছিল। তাই ফলন ভালো হয়েছে। পাট অধিদফতর ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর পাটচাষিদের প্রণোদনা প্রকল্পের মাধ্যমে পাটবীজ, রাসায়নিক সার দেয়া হয়েছে। মূলত পাটের দাম ভালো হওয়ায় চাষিরা পাট চাষে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement