১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বড় কষ্টে আছে মিরসরাইয়ের নিম্ন আয়ের মানুষ

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতে কমে গেছে কাজ রোজগার নেই বললেই চলে
ভাড়ার অভাবে কর্মহীন ভ্যানচালকরা : নয়া দিগন্ত -

দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন রুটে বাসের লাইনম্যান হিসেবে কাজ করছেন ফিরোজ হোসেন। দিনে যা আয় হয় তা দিয়ে আগে মোটামুটি চলে যেত সংসার। সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সড়কে বাসের সংখ্যা কমে গেছে। সেই সাথে কমে গেছে তার আয়।
আগে প্রতিদিন ৭০০-৮০০ টাকা আয় হতো, এখন ৩০০ টাকাও হয় না। অনেক কষ্টে দিন কাটছে তার। গত শনিবার সকালে ফশফন বলেন, আমার একটি মাত্র ছেলে। কাল ইলিশ মাছ নিতে বলেছিল, পারিনি। কাল আয় করেছিলাম ৩৬০ টাকা, তা দিয়ে তো ইলিশ কেনা যায় না। পরে লইট্টা মাছ কিনে নিয়েছি। জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। কিন্তু আমাদের আয় কমে গেছে অনেক।
একই দিন সকাল সাড়ে ১০টায় মিরসরাই সদরে ফুটওভার ব্রিজের নিচে আলমগীর, মীর হোসেন, শাসছুল হক, নুরনবীসহ ৮-১০ জন ভ্যান নিয়ে বসে আছেন। আলমগীর বলেন, সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বসে আছি। এখনো কোনো ভাড়া পাইনি। আগের মতো ভাড়া নেই। তার উপর জিনিসপত্রের দাম প্রতিদিন বাড়ছে। পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টে আছি।
দ্রব্যমূল্য লাগামহীন বেড়ে যাওয়ায় ভয়াবহ কষ্টে দিন কাটছে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বিভিন্ন পেশার নিম্ন আয়ের মানুষদের। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়ছে প্রত্যেকের নিজ নিজ পেশায়ও। অথচ এই মানুষেরা কাউকে কিছু বলতে পারছেন না। বুকের ভেতরে শুধু বোবা কান্না গুমরে মরছে। শুধু নিম্ন আয়েরই নয়, দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতিতে কষ্টে রয়েছে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোও।
বারইয়ারহাট-বড়দারোগাহাট রুটে চলাচল করা লেগুনার হেলপার আবদুর রহমান বলেন, বারইয়ারহাট থেকে মিরসরাই সদর পর্যন্ত এসেছি খালি গাড়ি নিয়ে। যাত্রী নেই। তেলের দাম বাড়ার পাশাপাশি লেগুনার ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় যাত্রী কমে গেছে।
পান দোকানদার নুরুল আলম বলেন, বেচাকেনা নেই বললেই চলে। এই দোকানের আয় দিয়েই সংসার চলে। কিছুদিন ধরে বেচাকেনা একেবারে নেই। তার উপর পান সিগারেটের দামও গেছে বেড়ে। বেচাকেনা না বাড়লে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।
নির্মাণ শ্রমিকের সহকারী আবু বক্কর বলেন, কাজ থাকলে দিনে ৪০০ টাকা করে পাই। এ টাকায় কিছুই হয় না। চাল, ডাল, তেলসহ বিভিন্ন সবজির দাম বেড়েছে, কিন্তু বেতন তো বাড়েনি। সংসার চলবে কিভাবে?
কলেজ ছাত্র সাদমান বলেন, মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের খাবারের তালিকার মধ্যে ছিল ব্রয়লার মুরগি ও মুরগির ডিম। কিন্তু ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দামও বেড়ে গেছে। এ বিষয়ে চোখে পড়ার মতো প্রশাসনেরও কোনো নজরদারি নেই। বাজারে একেক দোকানে জিনিসপত্রের দাম একেক রকম।
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান বলেন, শুধু মিরসরাই কেন? জিনিসপত্রের দাম সারা দেশেই তো বেড়ে গেছে। বাজার মনিটরিংয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য অভিযান চালিয়েছি। দু-এক দিনের মধ্যে বাজারমূল্য ঠিক রাখতে অভিযান চালানো হবে।


আরো সংবাদ



premium cement