সন্ত্রাসী ও মাদককারবারিদের কাছে অসহায় শিল্পোদ্যাক্তারা
- আব্দুস সালাম মুন্সীগঞ্জ
- ০৮ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
মুন্সীগঞ্জের চরমুক্তারপুর ও চরসৈয়দপুরে চলছে সন্ত্রাসীদের দোর্দণ্ড প্রতাপ ও মাদকদ্রব্যের ছড়াছড়ি। শিল্পাঞ্চল নারায়ণগঞ্জের সীমানা ঘেঁষা মুন্সীগঞ্জ জেলাধীন মুক্তারপুর একটি জনবহুল শিল্পাঞ্চল। দুই জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় অত্র শিল্প এলাকা একটি অপরাধের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন নামকাওয়াস্তে অভিযান চালালেও বড় ধরনের কোনো অভিযান চালায়নি এখন পর্যন্ত। মিরেশ্বরাই বেপারীপাড়াতেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। সরেজমিন ঘুরে একটি বিচ্ছুবাহিনীর বিষয়ে স্থানীয়রা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের একাধিক শ্রমিক জানিয়েছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, চরসৈদপুর এলাকার বিচ্ছুবাহিনী অত্রাঞ্চলে একচেটিয়া দাপটের সাথে ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকের কারবার করে যাচ্ছে। দিনে দুপুরেও তারা সৈয়দপুরের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষত কয়লাঘাটে প্রকাশ্যে মাদকদ্রব্য গ্রহণের ‘উৎসবে’ মেতে উঠেছে। দলবদ্ধভাবে মাদক সেবনের পরপরই তারা বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ওপর আক্রমণাত্মক কাজে লিপ্ত হয়। এতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থাপনা, উন্নয়ন, পরিবর্ধনসহ সব কাজই মুখ থুবড়ে পড়েছে এসব অপরাধীর দাপটে।
সরেজমিন অনুসন্ধানকালে এমনই কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ঘুরে আলোচনা করে জানা যায়, এলাকায় মাদককারবারি ও মাদকসেবী বিচ্ছুবাহিনী একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলও বটে। তাদের অনাচার ও জবরদস্তিমূলক আচরণে মুক্তারপুরে অবস্থিত সব শিল্পপ্রতিষ্ঠান মালিকরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন।
জানা গেছে, বিচ্ছুবাহিনীর সদস্য রবিন, রুবেল, আনসার, শাহীন, সেলিম, ফাহাদ ও জনৈক উকিল হাবিবুর রহমান দীর্ঘ দিন ধরে তাদের বিভিন্ন গডফাদারের নাম উল্লেখ করে মিল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে চাঁদা আদায় করে থাকে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সন্ত্রাসীরা কোম্পানির জমিতে স্থাপিত সাইনবোর্ড ভেঙে খুঁটি উঠিয়ে নিয়ে যায় এবং প্রাণনাশসহ বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখায়। এখানেই তারা থেমে থাকেনি। তারা কোম্পানির কেনা জমিতে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে অবৈধ সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়।
আরো জানা যায়, ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর কোনো এক কোম্পানির কেনা জমি দখলে বাধা দিয়ে ১০-১২ জনের একটি সঙ্ঘবদ্ধ দল কোম্পানির ক্যাশিয়ার নজরুল ইসলামকে জিম্মি করে প্রায় ৪৭ লাখ টাকা নিয়ে যায়। এর প্রমাণাদি ওই কোম্পানির কাছে সংরক্ষিত আছে। এ দিকে গত ৮ জানুয়ারি সন্ত্রাসীরা আবারো চাঁদা দাবি করে বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দেয় বলে জানা যায়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি মুসা মিয়া বাদি হয়ে উল্লেখিত সন্ত্রসাীদের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
সূত্র আরো জনায়, সন্ত্রাসী চক্রের সদস্য কথিত হাবিব উকিল এলাকায় বিভিন্ন জাল-দলিল, জাল ওয়ারিশ সনদ ইত্যাদি তৈরি করে সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে চাঁদাবাজিতে লিপ্ত আছেন। তিনি অন্যের জমিও নিজে বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নেন। এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে তার ফুফাতো ভাইয়েরা একটি মামলা করেন নারায়ণগঞ্জ যুগ্ম জেলা জজ আদালতে। এ বিষয়ে একাধিকবার অনুসন্ধানে গেলে একের পর এক নতুন তথ্য বেরিয়ে আসছে।
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট হাবিব বলেন, আমার বিষয়ে আমার শত্রুরা অপপ্রচার করছে। আমি কোনো ভূমিদস্যুতায় জড়িত নই। বরং আমার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করেছে মিমেন্স ফ্যাক্টরি। এ মিথ্যা মামলাও কোর্ট খারিজ করে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব জানান, মাদককারবারি, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের তালিকা দিলে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা