সংস্কারের অভাবে ঐতিহ্য হারাচ্ছে হাজার বছরের কানাহার পুকুর
- শেখ সাবীর আলী ফুলবাড়ী (দিনাজপুর)
- ১৮ মে ২০২২, ০০:০০
সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ঐতিহ্য হারাচ্ছে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর এলাকার হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী রহস্যে ঘেরা কানাহার পুকুরটি। উপযুক্ত সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারলে এই পুকুরটিই হয়ে উঠবে দর্শনীয় স্থান, বাড়বে সরকারের রাজস্ব- এমন অভিমত এলাকাবাসীর।
উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, পৌর এলাকার মধ্য কানাহার মৌজার ১৬ একর ৬০ শতক জমিতে পুকুরটি অবস্থিত। পুকুরটির ৯ একর ৪৩ শতক জলাশয় ও ৭ একর ১৭ শতক পাড় রয়েছে। পুকুরের জায়গা সরকারি অর্পিত ‘ক’ তালিকাভুক্ত। সরকারি নিয়মানুসারে তিন বছর পরপর প্রকাশ্য নিলামের মাধ্যমে পুকুরটি ইজারা দেয়া হয়।
সরেজমিন কানাহার পুকুরে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা ভূমি কার্যালয় থেকে লিজ নিয়ে স্থানীয় মাছচাষিরা মাছ চাষ করছেন। পুকুরের পশ্চিম পাড়টি ঈদগাহ মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পাশেই রয়েছে এতিমখানা। উত্তর ও দক্ষিণপাড়ে রয়েছে কয়েক শ’ বছরের পুরনো জাতীয় কবরস্থান। পূর্ব দিকের পাড়ে ৬০-৭০টি ভূমিহীন পরিবার ঘরবাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছে, যা কানাহার বস্তি নামে পরিচিত।
পাশের গ্রামের এক প্রবীণ ব্যক্তি জানান, তার ছোট বেলায় এই পুকুরের পানি দিয়েই কৃষিকাজ ও ঘর-গৃহস্থালির কাজ চলত। এ অঞ্চলের মাছের চাহিদাও পূরণ করত এই পুকুর। বর্তমানে মাছচাষিরা মাছের খাবারের জন্য গোবর ও মুরগির লিটার ফেলে পুকুরের পানি নষ্ট করে ফেলছে। এ কারণে এখন আর কেউ এই পানি ব্যবহার করে না।
স্থানীদের কাছে এটি একটি রহস্য ঘেরা পুকুর। এই পুকুরটি কবে কখন খনন করা হয়েছে কেউই বলতে পারে না। তবে কথিত আছে যে, এক হাজার বছর আগে এই এলাকায় এক অন্ধ রাজা বা কানা রাজা ছিলেন। সারাক্ষণ ধ্যান ও সাধনায় মশগুল থাকতেন তিনি। এই পুকুরটি নাকি তিনিই খনন করিয়েছেন। খনন শেষ কানা রাজা তার স্ত্রীকে নিয়ে পুকুরে নেমে যান। আর উঠে আসেননি। পুকুরেই সস্ত্রীক অদৃশ্য হয়ে গেছেন। সেই থেকে পুকুরটির নাম হয় কানাহার পুকুর। ১৯৩০ সালে এই অঞ্চলে ভূমি জরিপ শুরু হলে এলাকাটিও কানাহার মৌজা হিসেবে পরিচিতি পায়।
কানাহার পুকুরকে কেন্দ্র করে রয়েছে নানা রহস্যঘেরা গল্প। স্থানীয়রা জানান, পুকুরপাড়ে এক সময় সাধু সন্যাসীদের আনাগোনা ছিল। বিশেষ বিশেষ দিনে গভীর রাতে তারা পুকুর পাড়ে গিয়ে ধ্যানমগ্ন থাকতেন। তখন সন্যাসীদের খাওয়ানোর জন্য বড় বড় অনুষ্ঠান হতো। সেসব অনুষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য হাঁড়ি-পাতিল ও থালা-ঘটি এই পুকুর থেকেই ভেসে উঠত। সেগুলো ব্যবহারের পর আবার পানিতে ছেড়ে দিলে সেগুলো আবার পুকুরের তলদেশে চলে যেত।
ফুলবাড়ী মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার লিয়াকত আলী বলেন, ১৯৮৯ সালে এই পুকুরটি মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে দেয়ার জন্য তৎকালীন সরকার সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও পুকুরের পানি সেচে শুকানো যায়নি। তিনি জানান, পুকুরটি যেমন গভীর, তেমনি এর তলদেশে রয়েছে অনেকগুলো সুড়ঙ্গপথ। বর্তমানে পুকুরটি অনেকটাই ভরে গেছে। এখন ইচ্ছে করলে হয়তো খনন করা যেতে পারে।
ফুলবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিলটন বলেন, কানাহার পুকুরটি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করলে এক দিকে যেমন আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠবে, অন্য দিকে সরকারের রাজস্বও বৃদ্ধি পাবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন জানান পুকুরটি সংস্কারের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে তালিকা পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পেলে সংস্কার করা হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা