২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পূর্বধলায় শ্রমিক সঙ্কটে মাঠেই নষ্ট হচ্ছে বোরো ধান

পূর্বধলায় নেকব্লাস্টে আক্রান্ত বোরোক্ষেত : নয়া দিগন্ত -

নেত্রকোনার পূর্বধলায় মাঠে সোনালি রঙের পাকা বোরো ধান নিয়ে কৃষকের দূচিন্তার শেষ নেই। জমিতে ফলন ভালো হলেও নেক ব্লাস্ট রোগ ও পোকার আক্রমণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দূর থেকে দেখলে মনে হতে পারে ধান পেকে কাটার সময় হয়েছে, কিন্তু তা নয়। ছত্রাক আর মাজরা পোকার আক্রমণে ধানের পরিবর্তে চিটায় বোরোক্ষেতের এ অবস্থা।
এ রোগটি বিশেষ করে ব্রি-২৮ জাতের ধানে বেশি আক্রমণ করছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর ২১ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মাঝে ব্রি ধান-২৮ চাষ করা হয়েছে ২৩% জমিতে। কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মকর্তাদের সময়মতো প্রয়োজনীয় পরামর্শের অভাব, তিন-চারবার বালাইনাশক ব্যবহারে কাজ না করা, অশনির প্রভাবে কয়েক দিন অবিরাম বৃষ্টিতে বেশির ভাগ ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া, বৃষ্টির কারণে ফসল কাটা ও মাড়াই দিতে না পরা, শেষ দিকে শ্রমিক সঙ্কটে দ্বিগুণেরও বেশি মজুরি দিয়েও কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে পারছে না চাষিরা।
পূর্বধলা সদর এলাকার চাষি সুরুজ আলী বলেন, ‘আমি ৮১ জাতের ধান করছি, সার-ওষুধ ঠিক কইরাই দিছি। ফলনও বালা ওইছে কিন্তু কাডার পর বেশির ভাগই চিডা’। গত ক’দিন ধরে আবহাওয়া বিরূপ। প্রায় সারা দিন টিপ টিপ বৃষ্টিতে মাঠে পড়ে থাকা ধান নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে কৃষক। এ দিকে রোদ না থাকায় ভেজা ধান মাড়াই করে ঘরে উঠালেও সেই ধানে চারা গজাতে শুরু করেছে। আর মাঠের ধান যদি দুই-তিন দিনের মধ্যে কাটতে না পারলে সব ধান নষ্ট হয়ে যাবে বলছেন তারা। তাছাড়া অসময়ের ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির কারণে বেশির ভাগ খড় পচে যাওয়ায় গোখাদ্যের তীব্র সঙ্কটের আশঙ্কা করছেন।
বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের তথ্য অনুযায়ী, বিঘাপ্রতি থেকে পাঁচ হাজার টাকা মজুরিতেও মিলছে না ধান কাটার শ্রমিক। কৃষকদের মতে এখনো বেশির ভাগ ধান ক্ষেতে পড়ে আছে।
শুধু পূর্বধলায় নয়, নেত্রকোনায় বোরো মৌসুমের ধান কাটার শ্রমিক সঙ্কট প্রতি বছরই তীব্রতর হচ্ছে। আর এ সঙ্কটে বাড়ছে মজুরিও।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ২৮সহ দুই-একটি জাত বাদে বোরোর আবাদ ভালো হয়েছে। কিন্তু ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে বেশ ক’দিন ধরে বৃষ্টিও শুরু হয়েছে। তাই পাকা ধান জমিতে নষ্ট হওয়ার শঙ্কায় দিন পার করছেন তারা।
হোগলা ও জারিয়া ইউনিয়নের কৃষক আবু বকর ও সমশের আলী বলেন, ধান কাটার শ্রমিক খুঁজে পাওয়া দায়। এখন ধানের ক্ষেত পানিতে ডুবে যাচ্ছে। সানকিডোয়ারি গ্রামের কৃষক মিজান আকন্দ বলেন, তিন বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছি। আমার পাকা ধান ঝরে পড়ছে। একদল শ্রমিক পেয়েছিলাম। সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা বিঘা চায়। আবার থাকা-খাওয়া। তাহলে তো ধান বেচে লোকসান হবে। ঘাগড়া ইউনিয়নে বানেরকান্দা গ্রামের আলমগীর হোসেন বলেন, ধান ভালোই হয়েছিল। বৃষ্টি ও শ্রমিক মূল্য বেশি হওয়ায় ধান কাটা-মাড়াই করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কিন্তু ৬০০-৬৫০ টাকা মণ ধান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে আমরা মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের সাথে আলোচনা করেছি। যাদের ধান কাটা নিয়ে সমস্যা হয় তাদের ধান হারভেস্টার মেশিনে কাটার ব্যবস্থা করছি। এখন পর্যন্ত উপজেলায় প্রায় ৬০ শতাংশ ক্ষেতের ধান কাটা হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টিতে বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব পাকা ধান কাটতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement