২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দখলে দখলে অস্তিত্ব হারাচ্ছে সরাইলের চেত্রা নদী

এক সময়ের প্রমত্তা চেত্রা নদীর বর্তমান চেহারা : নয়া দিগন্ত -

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে খরস্রোতা চেত্রা নদীতে চলছে দখল আর দখল। কালের পরিক্রমায় খরস্রোতা নদীটি খালে পরিণত হওয়ার পাশাপাশি দখলের ফলে হারাতে বসেছে সকল ঐতিহ্য। নদীটির দুই পাড় দখল হয়ে গেছে অনেক আগেই। এখন চলছে মাঝখানের অংশ দখলের পাঁয়তারা। নদীর মাঝখানের সামান্য অংশ বাদ রেখে পুরো নদীতে বোরো ধান আবাদ করেছেন স্থানীয় কৃষকেরা। ১০ বছর আগেও শুষ্ক মৌসুমে চেত্রা নদীতে কম করে হলেও পাঁচ-ছয় ফুট পানি থাকত কিন্তু এখন শুষ্ক মৌসুমে নদীটি থাকে মৃতপ্রায়।
আগে যেখানে পাল তুলে নৌকা চলতো, দুই পাড়ের মানুষদের পারাপারের জন্য বড় খেয়া নৌকা থাকত, বর্ষাকালে প্রচণ্ড ঢেউ উঠত- এখন দেখে মনে হয় না এটি সেই প্রমত্ত নদী। বর্তমানে নদীটি সাপের মতো সরু একটি লম্বা খালে রূপান্তরিত হয়েছে। নদীতে এখন হাঁটু পানি। চৈত্র মাসে নদীটি একেবারে শুকিয়ে যায়। শুষ্ক মৌসুমে পানি না থাকায় নদীর পাড়ঘেঁষা চাষিরা সেচ সঙ্কটে ফসল আবাদ নিয়ে বিপাকে পড়েন।
প্রায় এক হাজার জেলে পরিবার এই নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত। নদীটি শুকিয়ে যাওয়ার কারণে জেলে পরিবারগুলো খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছে। ঐতিহ্যবাহী চেত্রা নদীটি খননের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জেলে সম্প্রদায়।
উপজেলার অরুয়াইল ও পাকশিমুল ইউনিয়নের পাশ দিয়ে প্রবাহমান তিতাস থেকে উৎপন্ন হয়ে চেত্রা নদীটি অরুয়াইল, রানীদিয়া, সরাকান্দি হয়ে রাজাপুর গিয়ে চান্দু মুন্সীর খাল নামে এক সময় মেঘনা নদীতে গিয়ে মিলেছিল। এখন রাজাপুর এলাকায় চেত্রা নদীটির কোনো চিহ্নই নেই। ভরাট হয়ে গেছে নদীর মুখ এলাকা। জমি বানিয়ে মানুষ এখন চাষাবাদ করছেন।
রক্ষণাবেক্ষণ ও নদী খননের অভাবে এই চেত্রা নদীতে এখন আর সারা বছর পানি থাকে না। পলি জমে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় লোকজন নদীর দুই পাশ ভরাট করায় ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে নদী। গভীরতাও হ্রাস পাচ্ছে। নদীটির এক প্রান্তের মুখ বন্ধ হয়ে পানিপ্রবাহ না থাকায় এই দশা হয়েছে। বর্ষাকালে মৃদুপ্রবাহ থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে নদীর বুক দখল করে ফসল ফলানো হচ্ছে। নদীটির উত্তর-পশ্চিমাংশের রাজাপুর, দুবাজাইল, সরাকান্দি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে নদীর মাঝ পর্যন্ত দখল করে ফসল আবাদ করা হচ্ছে। সরু খালের মতো একটা চিহ্নহ্ন আছে মাত্র।
রানীদিয়া এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা মাওলানা সামাদ মিয়া বলেন, আমরা নৌকায় পাল তুলে চেত্রা নদী দিয়ে মেঘনা নদীতে ইলিশ শিকার করতে যেতাম। এখন চেত্রা নদীর বুকে ফসলের মাঠ। রাজাপুর এলাকায় নদীর কোনো চিহ্নহ্নই নাই। একটি খালের মতো রেখা আছে মাত্র।
অরুয়াইল ইউনিয়ন জেলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিখিল দাস বলেন, এক সময় এই নদীতে অনেক পানি থাকত। আমরা সহস্রাধিক জেলে চেত্রায় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতাম। এখন নদীতে পানি নাই। অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি নদী দখল করে বোরোধান রোপণ করেছে। আমাদের মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। নদীটি দখলমুক্ত ও খনন করা না হলে আমাদের অরুয়াইল থেকে অন্যত্র চলে যেতে হবে। অরুয়াইলে আর জেলে পরিবার থাকবে না।
অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া বলেন, এক সময়ে চেত্রা নদী ছিল খুবই স্রোতস্বিনী। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে নদীটি মরা খালে পরিণত হয়েছে। এর সাথে চলছে দখলের প্রতিযোগিতা। তিনি বলেন, এখনই দখলমুক্ত করতে না পারলে এক সময় নদীটি হারিয়ে যাবে স্মৃতির পাতা থেকে।
সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল হক মৃদুল বলেন, এই নদীটি দখলের ব্যাপারে আমি জানি না। সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে কথা বলে নদীটি দখলমুক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল