১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফরিদপুর মেডিক্যালে অব্যবস্থাপনা ক্লিনিকে পঙ্গু হচ্ছে রোগীরা

ক্লিনারদের বেতন বন্ধ
ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল : নয়া দিগন্ত -

ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (বিএসএমএমসি) অব্যবস্থাপনায় সেবাগ্রহীতাদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। ‘৩৭ লাখ টাকায় এক সেট পর্দা’ কাণ্ডে দেশব্যাপী সমালোচিত এই হাসপাতালে নানা সঙ্কট রয়েছে। হাসপাতালের ৭০ জন ক্লিনার গত সাত মাস বেতন পায় না। এতে পুরো হাসপাতাল পরিষ্কারের অভাবে অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়েছে।
বিএসএমএমসি প্রতিষ্ঠার পর বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসাসেবা লাভের সুযোগ পায় স্থানীয়রা। মেডিক্যাল কলেজ হওয়ায় দেশখ্যাত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চিকিৎসাসেবা মিলে এই হাসপাতালে। হাসপাতালটি চিকিৎসা সেবায় বিরাট অবদানও রেখে চলেছে। তবে অব্যবস্থাপনায় কমছে না ভোগান্তি। হাসপাতালের তথ্য মতে, গত এক বছরে বহির্বিভাগে এক লাখ ৬২ হাজারেরও বেশি রোগী এবং অন্তর্বিভাগে প্রায় ৪৫ হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়েছে।
৫১৭ বেডের হাসপাতালটিতে প্রয়োজনের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ চিকিৎসকও নেই। নার্স, ওয়ার্ড বয়, ক্লিনার ও আয়াসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য পদও শূন্য। হাসপাতালটিতে মাস্টার রোলের কর্মচারী ও দালালদের দৌরাত্ম্যের শিকার হচ্ছে রোগীরা। এজন্য সামর্থ্যবানরা ছুটছেন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। কিন্তু সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়ন হচ্ছে না।
হাসপাতালের পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এই হাসপাতালে চিকিৎসকদের মঞ্জুরিকৃত প্রথম শ্রেণীর ১৮৪টি পদ রয়েছে যার মধ্যে ১১৯টি পদই শূন্য। ৬৫ জন রয়েছেন যাদের প্রায় সবাই প্রাইভেটভাবেও রোগী দেখেন। মেডিক্যাল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসক এবং নার্সরাই সময়-অসময়ে ভরসা বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
হাসপাতালে নার্স, ওয়ার্ড বয়, আয়া ও ক্লিনারের পদ রয়েছে ৪২৫টি। ২৯টি রয়েছে শূন্য। এসব পদে শূন্যতা এবং কর্মরতরা নিয়মিত বেতন না পাওয়ায় রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয় বলে কর্তৃপক্ষ বলছে।
দু’টি ভবনেই রয়েছে জরুরি বিভাগ। এক ভবনের জরুরি বিভাগে গেলে রোগীদের অন্য ভবনে যেতে বলা হয়। জরুরি বিভাগে পাওয়া যায় না কোনো সাহায্যকারী। ওয়ার্ড বয় ও আয়ারা বিভিন্ন ওয়ার্ডে ব্যস্ত থাকে। ফলে স্বজনরাই হুইল চেয়ার জোগাড় করে রোগীকে ওয়ার্ডে নিয়ে যায়। টাকা ছাড়া রোগীর স্ট্রেচার টানে না কর্মচারীরা। রোগীকে এক্সরে বা অন্য কোনো পরীক্ষানিরীক্ষা বা বেড থেকে স্থানান্তরও করে স্বজনরা। স্বজন না থাকলে বিনা চিকিৎসায় কাতরায় অনেকে। এসব স্বজনহারা রোগীদের দুর্ভোগ লাঘবে ফরিদপুরে বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে উঠেছে। তবে অসুস্থ রোগীরা তাদের সাথে সবসময় যোগাযোগ করতে পারে না। অফিস সময়ের পরে হাসপাতালের এক্সরে, সিটি স্ক্যানসহ বিভিন্ন প্যাথলজি বিভাগ বন্ধ থাকায় দুপুরের পরে রোগীদের এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হয় হাসপাতালের বাইরের প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে।
রোগীদের খাবার, মনিহারি ও কাপড় ধোলাইয়ের টেন্ডার হয় না। গত নভেম্বরে এ ব্যাপারে পরিচালক বলেছিলেন, নভেম্বরের মধ্যেই টেন্ডার করা হবে। তারা চিঠি দিয়েছেন। তবে তারপর দুই মাস চলে গেলেও এসব টেন্ডার হয়নি। হাসপাতালে কোটি কোটি টাকায় কেনা মূল্যবান চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম অকেজো পড়ে আছে। পরিচালক বলেন, মামলা থাকায় মেরামত করা যাচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, হাসপাতালটিতে মেডিসিন, রেসপিরেটরি মেডিসিন, সাইকিয়াট্রি, গ্যাস্ট্রোএন্ট্রারোলজি, ডার্মাটোলজি, নিউরোলজি, কার্ডিওলজি, সিসিইউ, ইএনটি, চক্ষু, শিশু, গাইনি অ্যান্ড অবস, ক্যাজুয়ালিটি, অর্থো-সার্জারি, শিশু সার্জারি ইউরোলজি, নিউরোসার্জারি, বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি এবং নেফ্রোলজি ওয়ার্ডের পাঁচশো বেড রয়েছে। তবে এসব ওয়ার্ডের বেশির ভাগেরই চিকিৎসক নেই।
অন্য দিকে শহরের আনাচে-কানাচে বেপরোয়াভাবে গজিয়ে ওঠা প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে বিএসএমএমসি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদপদবি ব্যবহার করে বড় বড় সাইনবোর্ড ঝুলতে দেখা যায়। এ মাসে একজন অ্যাপেন্ডিসাইড রোগীকে হাসপাতাল থেকে ভাগিয় নিয়ে তার পায়খানার নালি কেটে ফেলে একটি ক্লিনিক। অথচ মেডিক্যাল হাসপাতালটিতে রোগীদের সুবিধার্থে এক্সরে, আল্ট্রাসনোগ্রাম, সিটি স্ক্যান, এমআরআই, ইসিজি,প্যাথলজি, বায়োক্যামেস্ট্রি, ইউরিন এমসিআই, ব্রেস্ট ক্যান্সার স্ক্রিনিং, মেজর সার্জারি মাইনর সার্জারি পরীক্ষার সুবিধা রয়েছে।
সম্প্রতি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে অবস্থিত একটি প্রাইভেট হাসপাতালে এক নবজাতকের ভূমিষ্টের সময় তার কপাল কেটে ফেলা হয়। এর মাত্র ক’দিন পর আরেক নবজাতকের হাতের হাড় ভেঙে ফেলা হয়। তার আগে এই হাসপাতালে দেড় বছর আগে অপারেশন করা এক গৃহবধূর পেট থেকে অপারেশনের গজ আটকে রাখার কাঁচি পাওয়া যায়। এসব ঘটনার শিকার রোগীদের জীবন এখন বিপন্ন। এ অবস্থায় সরকার হাসপাতালে রোগীদের সুবিধার্থে নানামুখী উদ্যোগ নিলেও জনমনে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা: আসাদুল্লাহ বলেন, এই হাসপাতালের ৭০ জন ক্লিনার গত সাত মাস বেতন পায় না। এ কারণে কাজের ব্যাপারে আমরা বাধ্য করতে পারছি না। কী কারণে তারা বেতন পাচ্ছেন না তা জানা যায়নি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, এই হাসপাতালে শুধু ফরিদপুরই নয়, অত্রাঞ্চলের রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেন। যে কারণে রোগীদের প্রচণ্ড ভিড় রয়েছে। সেই অনুপাতে আমাদের জনবল নেই। এ সমস্যা নিরসনের জন্য বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কেউ গেলে আমরা তাদের বাধা দিতে পারি না।

 


আরো সংবাদ



premium cement
তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে বিএনপি : কাদের রৌমারীতে বড়াইবাড়ী সীমান্তযুদ্ধ দিবস পালিত

সকল