রাজবাড়ীতে টমেটোতে কালচে দাগ দরপতনে দিশেহারা চাষিরা
- এম মনিরুজ্জামান রাজবাড়ী
- ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০, আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ০৬:৪৬
পদ্মা বিধৌত জেলা রাজবাড়ী। এ জেলার নদীতীরবর্তী চর ও নিচু অঞ্চলে শীতকালীন সবজি টমেটোর ব্যাপক আবাদ হয়। এ বছরও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। অক্লান্ত পরিশ্রমে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ ও সাম্প্রতিক সময়ের বৃষ্টির প্রভাব কাটিয়ে উঠেছেন রাজবাড়ীর টমেটো চাষিরা। এত কিছুর পরও জেলায় টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার উৎপাদিত এই টমেটো ব্যাপারীদের মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে।
এদিকে অসময়ের বৃষ্টিতে টমেটোতে কালচে দাগ ও পচন দেখা দিয়েছে। ফলে পুনরায় ক্ষেতে কীটনাশক প্রয়োগ করছেন চাষিরা। এতে বেড়ে যাচ্ছে খরচ। এত কিছুর পরও এখন বাজারে টমেটোর দাম কিছুটা কমে যাওয়ায় লোকসানের শঙ্কায় আছেন চাষিরা।
জানা গেছে, এক বিঘা জমিতে সেচ, জমি প্রস্তুত, কীটনাশক প্রয়োগ, বীজ বপন, রোপণ ও শ্রমিকের মুজরিসহ টমেটো চাষিদের ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। আর লিজের জমি হলে খরচ বেড়ে দাঁড়ায় দ্বিগুণ। ভালো ফলন হলে বিঘায় দেড় থেকে ২০০ মণ টমেটো বিক্রি করেন কৃষক। তবে এবার বৃষ্টিতে টমেটোর গায়ে ছোট ছোট কালচে দাগের পাশাপাশি পচন দেখা দিয়েছে। যে কারণে এখন দামও কম পাচ্ছেন কৃষকরা। বর্তমানে পাইকারি বাজারে টমেটো ১২ থেকে ১৬ টাকা কেজি ও ৫০০-৭০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এ বছর রাজবাড়ীতে ৭২২ হেক্টর জমিতে টমোটোর আবাদ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলায়। এ বছর রাজবাড়ী সদরে ২৪৬ হেক্টর, গোয়ালন্দে ৩৫৭ হেক্টর, পাংশায় ৭৫ হেক্টর, কালুখালীতে ৩৫ হেক্টর ও বালিয়াকান্দিতে ১০ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে। রাজবাড়ীতে বিউটি ফুল, বিপুল প্লাস, বিগল ও মিন্টু সুপার এসব উচ্চফলনশীল জাতের টমেটোর আবাদ হচ্ছে ।
সরেজমিন সদর উপজেলার উড়াকান্দার গোপলবাড়ী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে টমেটোর ক্ষেত। গাছে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে কাঁচা-পাকা টমেটো। এর মধ্যে সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে অনেক টমেটোতে পচন ও কালচে দাগ দেখা দিয়েছে। কৃষকরা ক্ষেত থেকে পচা টমেটো ফেলে গাছ থেকে পাকা টমেটো ছিড়ে ঝুড়িতে রাখছেন। পুরুষের পাশাপাশি বাড়ির মহিলারাও টমেটো তোলার কাজ করছেন। এরপর সেই টমেটোর ঝুড়ি মাথায় নিয়ে মাঠ থেকে আধা কিলোমিটার দূরে বস্তায় ভরছেন। পড়ে সেখান থেকে ভ্যানে করে জেলা শহরসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে।
চাষি হাবিবুর রহমান, কাশেম মণ্ডল, করম আলী শেখ, হারেজ আলী শেখ ও রিয়াদ বলেন, টমেটো লাভজনক ফসল। তারা প্রতি বছর টমেটোর আবাদ করেন। বৃষ্টির কারণে এবার টমেটোতে কালচে দাগ পড়েছে। যে কারণে অনেক টমেটোতে পচন ধরছে। আর বাজারেও এখন টমেটোর দাম কম। তবে এবার ফলন ভালো হয়েছে। প্রথম অবস্থায় ভালো দামও পেয়েছেন। কিন্তু কয়েক দিন আগের বৃষ্টিতে টমেটোতো দাগ পড়েছে। ফলে যে লাভের আশা করেছিলেন, তা হবে না।
কৃষকেরা আরো বলেন, নিজের জমি হলে সব মিলিয়ে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। আর জমি লিজ নিয়ে আবাদ করলে সব মিলিয়ে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়। এখন ১৫-১৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। এভাবে বাজার থাকলে তারা কিছুটা লাভবান হবেন। কিছুদিন আগের বৃষ্টিতে টমেটোতে পচন ও দাগ ধরেছে। যে কারণে এখন নতুন করে কীটনাশক দিতে হচ্ছে। ফলে খরচও বেড়ে যাচ্ছে। আর এখন বাজারও কমে গেছে। ফলন ভালো হলে বিঘায় এক থেকে দেড় শ’ মণ টমেটো হয়।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাহাউদ্দিন সেখ জানান, এ বছর জেলায় টমেটো আবাদের লক্ষমাত্রা অর্জিত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদে কিছুটা ক্ষতি হলেও পরবর্তীতে তাদের পরামর্শে ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক প্রয়োগে চাষিরা ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। ফলে টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে এবং কৃষকরা ভালো দামও পাচ্ছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা