২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বিলুপ্তির পথে গ্রামীণ পরিবারের ঐতিহ্য বাঁশের গোলা

সমৃদ্ধ গৃহস্থবাড়ির পরিচয় বহনকারী বাঁশের গোলা : নয়া দিগন্ত -

‘গোলাভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ’ আবহমান বাংলার সমৃদ্ধ গৃহস্থ পরিবারের পরিচয় দিতে ব্যবহৃত প্রবাদ। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে কৃষক পরিবারের সমৃদ্ধির সেই পরিচয় ‘গোলা’। ধান, চাল, গম সংরক্ষণের বড় পাত্র হচ্ছে এই গোলা। বাঁশ দিয়ে তৈরি গোলা সারা বছর ধান সংরক্ষণ করার জন্য খুবই উপযোগী। ধানের মৌসুমে ধান কেটে শুকিয়ে গোলাজাত করা হয়। প্রয়োজনের সময় গোলা থেকে ধান বের করে আবার রোদে শুকিয়ে ধান ভাঙানো হয়।
মিরসরাই উপজেলার গ্রামাঞ্চলে এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না গোলা। যুগের হাওয়া পাল্টেছে, পাল্টেছে সারা বছরের জন্য ধান সংরক্ষণের ধরন। দু’চারজন বড় গৃহস্থ ছাড়া এখন ছোটো-খাটো কৃষকরা কেউ আর সেভাবে ধান মজুদ রাখতে পারেন না।
উপজেলার মধ্যম ওয়াহেদপুর এলাকার সত্তরোর্ধ্ব এরশাদ উল্লাহ বলেন, একসময় গোলা ভর্তি ধান না থাকলে সেই বাড়িতে ছেলেমেয়েদের কেউ বিয়ে পর্যন্ত দিতে আগ্রহী হতেন না। এখন পুরো এলাকায় খুঁজে একটি পরিবারেও গোলা পাওয়া যাবে না। জানা গেছে, গোলায় ধান রেখে সেই গোলার মুখ মাটি দিয়ে লেপে দিয়ে বন্ধ করে রাখা হতো। আবার টাকার প্রয়োজন হলে গোলা থেকে ধান বের করে বাজারে বা পাইকারের কাছে বিক্রি করা হতো। সে সময়ে সমাজব্যবস্থা এখনকার মতো এত উন্নত ছিল না। তখন চোর-ডাকাতের ভয়ে গোলার ধানের ভেতর স্বর্ণ ও টাকা-পয়সা লুকিয়ে রাখা হতো। ধান রাখার এ পাত্রকে গোলা বা ডোল আখ্যায়িত করার কারণও রয়েছে। গোলা অপেক্ষাকৃত মজবুত। দীর্ঘ দিন ব্যবহার করা যায়।
গ্রাম এলাকায় বেশির ভাগ পাকা ও টিনের স্থাপনা গড়ে উঠায় এই বাঁশের চাহিদাও কমছে। এ কারণে বাঁশের আবাদও কমে যাচ্ছে। উৎপাদন কমে যাওয়ায় এবং বাঁশের মূল্যবৃদ্ধির কারণে গোলা তৈরিতেও খরচ বেড়ে গেছে। গোলায় ধান সংরক্ষণ করলে ইঁদুর ধান নষ্ট করে বেশি।
তবুও কিছু কৃষক হাটবাজার থেকে একটি বড় গোলা ১৫ শ’ থেকে ১৮ শ’ ও একটি ছোট গোলা ৮ শ’ থেকে ১২ শ’ টাকায় কিনে বাড়িতেই ধান সংরক্ষণ করছেন। নাট্যকার ও সংস্কৃতি কর্মী মঈন উদ্দিন আহমেদ সেলিম বলেন, ‘গোলা ভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছ’ হারিয়ে গেছে। গ্রাম বাংলার কৃষক পরিবারের সেই ধানের গোলা এখন প্রায় বিলুপ্ত। আমাদের উচিত এই ঐতিহ্য ধরে রাখা অন্তত সমৃদ্ধির পরিচয় বহনের জন্য।


আরো সংবাদ



premium cement