থামছেই না ভৈরবপাড়ের মাটি চুরি, যাচ্ছে ইটভাটায়
- এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর)
- ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
যশোরের চৌগাছায় ভৈরব নদের পাড়ের মাটি অবৈধভাবে স্কেভেটর দিয়ে কেটে ইটভাটায় বিক্রি করে যাচ্ছে প্রভাবশালী একটি মহল। প্রশাসন অভিযান চালালে দেখা যায়, গাড়ি চালকরাই জেল-জরিমানার শিকার হন। মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকে। এ কারণে এই অপকর্ম থামাছে না। সম্প্রতি ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে এক চালককে তিন মাসের কারদণ্ড দেন।
চোর চক্রের সদস্যরা গভীর রাতে মাটি চুরি করে ট্রাক-ট্রলি ভরে নিয়ে যাচ্ছে ভাটায়। এলাকাবাসী বলছেন, চক্রটির মূল হোতা পাতিবিলা গ্রামের বাসিন্দা ও পাতিবিলা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের বহিষ্কৃত সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান।
এ এলাকার কৃষকদের অভিযোগ, নদের পাড়ের মাটি কেটে ফসলি জমির উপর দিয়ে নেয়া হচ্ছে। এতে এক দিকে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতির পাশাপাশি ভৈরব খনন করে জলাধার সৃষ্টির সরকারি উদ্যোগ নষ্ট হচ্ছে। চোর চক্রটি উপজেলার নিয়ামতপুর, ইছাপুর, মুক্তদহ, রোস্তমপুর ও সাদিপুর পর্যন্ত ভৈরব নদের পাড়ের মাটি কেটে সাবাড় করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, পাড়ের মাটি কাটায় বাধা দিলে তারা বলে, ‘প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই মাটি কাটছি। তা না হলে বারবার তোমরা বাধা দিয়েও কি আমাদের থামাতে পেরেছো?’
সম্প্রতি রাতের বেলায় পাতিবিলা ইউনিয়নের সাদিপুর এলাকায় ভৈরবপাড়ের মাটি কাটতে থাকে চক্রটির সদস্যরা। রাতেই স্থানীয়রা ইউএনও’কে মোবাইলে অভিযোগ করেন। অভিযোগ পেয়ে তিনি বহিষ্কৃত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সিদ্দিকুর রহমানকে মোবাইলে মাটি কাটা বন্ধ করতে বললে তারা কিছু সময় মাটি কাটা বন্ধ করে। এরপর গভীর রাতে তারা আবারো নিয়ামতপুর পালপাড়া থেকে মাটি কেটে ট্রাকে নিয়ে যায় বলে জানান নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম। এ ছাড়াও সম্প্রতি রোস্তমপুর এলাকা থেকে নদীর পাড় কাটার সময় খবর পেয়ে ইউএনও পাতিবিলা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের বহিষ্কৃত সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানকে মাটি কাটা বন্ধ করতে বলেন। সেই সাথে তিনি ভবিষ্যতে যেন আর নদীর পাড়ের মাটি না কাটা হয় সে বিষয়েও সতর্ক করেন। এরপর এক দিন বন্ধ রেখে আবারো স্থান পরির্তন করে পাড়ের মাটি কাটা শুরু করে মাটি চোরেরা।
এলাকাবাসী জানায়, প্রথমে পাতিবিলা ইউনিয়নের নিয়ামতপুর গ্রাম থেকে পাড়ের মাটি কেটে বিক্রি করে চক্রটি। সেখানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাফী বিন কবিরের নেতৃত্বে কয়েকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়েছে। তবুও থামেনি তাদের এই মাটি চুরি। মাটি চোর চক্রটি নিয়ামতপুর, ইছাপুর, মুক্তদহ, রোস্তমপুর ও সাদিপুর গ্রাম থেকে দিন অথবা গভীর রাতে নদীপাড়ের মাটি চুরি করেই চলেছে।
চৌগাছা থানা সূত্রে জানা যায়, গত ৪ ডিসেম্বর স্থানীয়দের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চৌগাছা থানা পুলিশ মুক্তদহ মোড় থেকে কয়েকটি মাটি বোঝাই ড্রামট্রাক থানা হেফাজতে নেয়। আর পাড়ের মাটি কাটবে না বলে থানায় অভিযুক্তরা মুচলেকা দেয়। এভাবেই প্রশাসন বারবার বাধা দিচ্ছে আর তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
এ বিষয়ে নিয়ামতপুর গ্রামের নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম বলেন, নদের পাড় থেকে রাতে মাটি নিয়ে যাচ্ছে। গভীর রাতে গ্রামের মাঝখান দিয়ে দ্রুতগতিতে এসব গাড়িগুলো যাওয়ায় গাড়ির শব্দে মানুষের নানা অসুবিধা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরুফা সুলতানা বলেন, পুলিশ পাঠানোর পর তারা মাটি কাটা বন্ধা করে। আগেও মাটি কাটা বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তারা কাটবে না বলে কথা দিয়েছিল। তবুও অভিযোগ আসছে। এবার শক্তভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। প্রয়োজনে নিয়মিত মামলা করা হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা