২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যাত্রীবেশে ছিনতাই বাড়ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে

টার্গেট প্রবাসী, ব্যবসায়ী ও ব্যাংকার
-

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাত্রীবেশে ডাকাতির ঘটনা বেড়েই চলছে। কখনো বাসে যাত্রীবেশে ওঠে সঙ্ঘবদ্ধ ডাকাত দল আবার কখনো প্রাইভেট কারে যাত্রী তুলে নির্জন স্থানে নিয়ে ডাকাতি করা হয়। অনেক ঘটনায় প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়। ডাকাতির জন্য অনেক সময় আগে থেকেই টার্গেট নির্ধারণ করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রবাসী, ব্যবসায়ী ও ব্যাংকার, শিল্পপতিদের নজরে রাখছে ডাকাতরা। বিশেষ করে মাইক্রো, হাইচ, নোহা গাড়িতে এসব ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটছে।
২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর বেলা ৩টায় জোরারগঞ্জ এলাকায় যাওয়ার জন্য অলঙ্কার বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছিলেন মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা দুবাই প্রবাসী হোসেন মাস্টার। একটি মাইক্রোবাসে উঠলে কিছু পথ যাওয়ার পর মাইক্রোবাসে থাকা চার যাত্রী হাতুড়ি ও স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে তার ওপর হামলা করে। এ সময় তার কাছ থেকে নগদ টাকা, দু’টি স্বর্ণের আংটি. মোবাইল ফোন ও পাসপোর্ট ছিনিয়ে নেয়। নির্যাতনের পর গুরুত্বও আহত হোসেন মাস্টারকে চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কে এলোমেলো ঘুরিয়ে কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম থানার উত্তর বেতিয়ারা এলাকায় ফেলে দেয়। পরে উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন ও আত্মীয়স্বজন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কালজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মিরসরাই, বারইয়ারহাট-সীতাকুণ্ডে যারা প্রতিদিন গাড়িতে যাওয়া আসা করেন তাদের টার্গেট করেন সঙ্ঘবদ্ধ ছিনতাইকারী দল। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের সদ্যস নিযুক্ত করা আছে। এরা টার্গেটকৃতদের তথ্য সংগ্রহ করে।
প্রবাসী হোসেন মাস্টার খুন হওয়ার ঘটনায় গত ১২ জানুয়ারি রাতে সিএমপির ডিবি, পাহাড়তলী ও আকবরশাহ থানা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে অলঙ্কার মোড় এলাকা থেকে সঙ্ঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- শাহ আলম আকন (৩২), আবুল কালাম (৪৭), জাকির হোসেন প্রকাশ সাঈদ প্রকাশ তৌহিদ (৩৬), আল আমিন (২৯), মিজানুর রহমান প্রাশ টান মিয়া (৫৩), নাহিদুল ইসলাম প্রকাশ হারু (৩১)। অভিযানের একপর্যায়ে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনার সময় প্রথমে ছিনতাইকারী দলের চার সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যে অন্য সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় মাইক্রোবাস, হাতুড়ি, স্ক্রু ড্রাইভার, দুইটি টিপ ছোরা, গামছা, ১০টি মোবাইল ফোন,
জানা যায়, পুলিশের সাথে হাইওয়ে পুলিশের সমন্বয়হীনতার কারণে ভুক্তভোগীরা কোনো ধরনের প্রতিকার পাচ্ছেন না। মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ক্যাম্প না থাকা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের স্বল্পতার কারণে বেশির ভাগ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মহাসড়কের ফেনীর লালপোল থেকে সীতাকুণ্ডের কুমিরা পর্যন্ত গত বছরে শতাধিক গাড়িতে যাত্রীবেশে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারি বিকেল ৫টায় স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য বড়তাকিয়া থেকে একটি মাইক্রোবাসে উঠেন এক কলেজশিক্ষক। মাইক্রোতে যাত্রীবেশে আরো ছয় ছিনতাকারী ছিল। মিরসরাই সদর পার হওয়ার পর অস্ত্রের মুখে সবাইকে জিম্মি করে ফেলে। এরপর তার স্ত্রীর কাছ থেকে চার ভরি স্বর্ণালঙ্কার তিনটা মোবাইল, বারইয়ারহাট ডাচ্ বাংলা বুথ থেকে এক লাখ টাকা, ইসলামী ব্যাংকের বুথ থেকে ৩০ হাজার টাকা ও চার হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।
ওই কলেজশিক্ষক বলেন, ডাকাতরা হাতুড়ি দিয়ে আমার শরীরে আঘাত করেছে। অমানুষিক নির্যাতন করেছে। একজন মাফলার দিয়ে পেছন থেকে গলা পেছিয়ে ধরে আমার সাথে থাকা এটিএম কার্ড নিয়ে ডাচ্ বাংলা বুথ বারইয়ারহাট থেকে এক লাখ টাকা, ইসলামী ব্যাংকের বুথ থেকে তিন হাজার টাকা উত্তোলন করে। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বড়তাকিয়ার উত্তর পাশে ব্র্যাক অফিসের সামনে চোখে মলম লাগিয়ে আমাদের নামিয়ে দেয়। এরপর একটি সিএনজিতে আমরা হাসপাতালে যাই। এ ঘটনায় মিরসরাই থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি। আমি এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছি। এখনো আমার দুই সন্তান ঘুমের মধ্যে ভয় পেয়ে উঠে। আমারও অপরিচিত মানুষ দেখলে ভয় পাই।
২০২১ সালের ৮ জানুয়ারি রাত ৮টায় বারইয়ারহাট থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য মাইক্রোবাসে উঠা ইসলামী ব্যাংক বারইয়ারহাট শাখার কর্মকর্তা আবদুল মোমিন, এজেন্ট ব্যাংকিং কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ও অজ্ঞাত এক ব্যক্তির কাছ থেকে অস্ত্রের মুখে সব ছিনিয়ে নেয় মাইক্রোতে যাত্রীবেশে থাকা ছিনতাইকারীরা। সাথে থাকা মোবাইল, মানিব্যাগ, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, এটিএম কার্ড ছিনিয়ে নেয়। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আবদুল মোমিনের এটিএম কার্ড দিয়ে মিরসরাই সদরে অবস্থিত শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের বুথ থেকে ৪০ হাজার টাকা উত্তোলন করে। এরপর উপজেলার ছরারকুল এলাকায় অজ্ঞান করে মাইক্রো থেকে তাদের ফেলে দিয়ে চলে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাতায়াত নিয়মিত যাত্রী মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন বলেন, আমরা যারা নিয়মিত প্রতিদিন যাতায়াত করি আমরা কোনো অবস্থাতেই যেন কোনো অপরিচিত প্রাইভেট কার এবং মাইক্রোতে না উঠি। প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় এমন কালো গ্লাসের মাইক্রোগুলো যাওয়ার জন্য ডাকে। এরা কিন্তু দীর্ঘ দিন যাবৎ আপনার গতিবিধি লক্ষ্য করে, নজর রাখে। তারপর টার্গেট করে, কোনোভাবে মাইক্রোতে উঠাতে পারলেই ছিনতাই করে। তাই, যতই তাড়া থাক না কেন, এসব গাড়িতে উঠবেন না।
এ বিষয়ে জোরারগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ এ কে এম শরফুদ্দীন বলেন, ইদানীং ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় বারইয়ারহাট কেন্দ্রিক সন্ধ্যার পর আমাদের কয়েকটি টিম কাজ করছে। আমাদের জনবল সঙ্কট রয়েছে। তার পরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে সচেতনতার বিকল্প নেই। অপরিচিত প্রাইভেট কার বা গাড়িতে না ওঠাই উত্তম।


আরো সংবাদ



premium cement
গাজা যুদ্ধ নিয়ে প্রতিবাদ : নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৩৩ জন গ্রেফতার বিপজ্জনক মাত্রার অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতি থেকে বাঁচবেন কিভাবে বিয়ের বাজার শেষে বাড়ি ফেরা হলো না চাচা-ভাতিজির প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড সফরে যাচ্ছেন ভারতীয় ৩ সংস্থার মশলায় ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান সাবেক শিবির নেতা সুমনের পিতার মৃত্যুতে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের শোক গণকবরে লাশ খুঁজছেন শত শত ফিলিস্তিনি মা ভারতের লোকসভা নির্বাচনে আলোচনায় নেতাদের ভাই-বোন ও সন্তান সংখ্যা চীনে শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যার শঙ্কা, ঝুঁকিতে ১৩ কোটি মানুষ ভারতের মাঝারি পাল্লার নতুন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা ৩ দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার চেন্নাইকে হারাল লক্ষৌ

সকল