১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দূষণে জর্জরিত খিরু নদী : চলছে বালু ব্যবসায়ীদের আগ্রাসন

ভালুকা পৌরসভার গজারীয়া খালপাড়ে ডায়িং ফ্যাক্টরির বর্জ্য এভাবে সরাসরি খিরু নদীতে ফেলা হচ্ছে : নয়া দিগন্ত -

ময়মনসিংহের ভালুকা পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা শতাধিক কারখানার বিষাক্ত ও দূষিত বর্জ্যরে কারণে এবং বালু ব্যবসায়ীদের তাণ্ডবে খিরু নদীটি বর্তমানে মরা খালে পরিণত হয়েছে। বারবার সংবাদ মাধমে খবর হলেও থামছেই না এই আগ্রাসন। পরিবেশ অধিদফতরের তদারকি না থাকায় এবং তাদের রহস্যজনক নীরবতার কারণে বেশির ভাগ কারখানার বিরুদ্ধেই ইটিপি বন্ধ রাখার অভিযোগ উঠেছে। ফলে নদী ও খাল বিলের প্রবাহমান বর্জ্য আলকাতরার মতো কালো বর্ণ ধারণ করে সর্বত্র দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে মানুষ পেটের পীড়া ও চর্মরোগসহ নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে।
খিরু নদী ও খাল-বিলপাড়ের লোকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ৯০ দশকের আগে পর্যন্ত খিরু নদীটি ছিল নাব্যতায় পরিপূর্ণ। এই নদী দিয়ে বড় বড় নৌকা এমনকি বিশাল আকারের লঞ্চ চলাচল করত। এলাকার হাজার হাজার লোক এই নদীতে মাছ শিকার করে তাদের পরিবার চালাত। আশপাশের কয়েক এলাকার জনসাধারণের চলাচলের একমাত্র পথ ছিল খিরু নদী। ভাটি এলাকার শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ও বরমী বাজার থেকে অত্র এলাকার ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পণ্য কিনে এই নদী দিয়ে নৌকায় করে নিয়ে আসত। কিন্তু ৯০-দশকের পর থেকে ভালুকার বিভিন্ন এলাকায় অপরিকল্পিত মিল কারখানা স্থাপনের পর থেকে কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ও পলি জমে খিরু নদী তার জৌলুশ হারাতে শুরু করে। সেই সাথে বর্তমানে এক শ্রেণীর বালু ব্যবসায়ীর তাণ্ডবে ঐতিহ্যবাহী নদীটি ভরাট হয়ে সরু খালে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে অর্ধশতাধিক ডায়িং ফ্যাক্টরি তাদের বর্জ্য শোধন যন্ত্র (ইটিপি) বন্ধ রেখে বর্জ্য অপসারণ করায় বিষাক্ত বর্র্জ্য লাউতি ও বিলাইজুড়িসহ বিভিন্ন খাল-বিল হয়ে খিরু নদীতে এসে পড়ছে। তা ছাড়া বেশ কয়েক বছর ধরে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নদীর দু’পাড়ে বালু স্তূপাকারে রেখে ব্যবসা করার কারণেও নদীটি ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
ভালুকায় খিরু ব্রিজের দক্ষিণ পাড়ে প্রায় ১৫ বছর আগে গড়ে ওঠা ডায়িং ফ্যাক্টরিটির বিষাক্ত বর্জ্য দিয়ে দূষিত হতে শুরু করে খিরু নদীর পানি। আর সম্প্রতি পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড খারুয়ালী গ্রামের গজারিয়া খালপাড়ে গড়ে ওঠা গ্লোরি ডায়িং ফ্যাক্টরিটির বর্জ্য শোধন যন্ত্র থাকলেও তা শুধুই যে লোক দেখানো। পরিবেশ অধিদফতরের দুর্নীতিবাজ লোকদের সাথে ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষের সুসম্পর্ক থাকায় কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য খিরু নদীতে ফেলতে তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। এসব ব্যাপারে এলাকার কেউ প্রতিবাদ করলে কারখানার মিথ্যা মামলাসহ বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখানোর ঘটনাও রয়েছে। এভাবে চলছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা অর্ধশতাধিক ডায়িং ফ্যাক্টরি। উপজেলার কাঁঠালি গ্রামে অবস্থিত আরটি ডায়িং ফ্যাক্টরি ইটিপি প্ল্যান্টের ড্রেনগুলো শুকিয়ে চৌচির হয়ে থাকলেও পরিবেশ অধিদফতর ছাড়পত্র দিয়েছে ইটিপি কার্যক্রম সচল বলে।
উপজেলার হবিরবাড়ি, ভরাডোবা, মেদুয়ারী ও মল্লিকবাড়ী ইউনিয়নে শতাধিক ডায়িং, ক্যামিক্যাল, ও কীটনাশক ফ্যাক্টরির বিষাক্ত কালো বর্জ্য ছোট ছোট খাল দিয়ে নদীতে নামায় খালগুলোর আশপাশের মাটি পুড়ে কালো বর্ণ হয়ে গেছে। এ ছাড়া কিছু কিছু এলাকায় যেমন ভরাডোবা গ্রামে কয়েকটি মিলের দূষিত বর্জ্য ভূগর্ভস্থ পানির স্তরে মিশে যাওয়ায় টিউবওয়েলের পানির সাথেও বিষাক্ত ময়লা পানি বের হচ্ছে। যে পানি খেয়ে অসংখ্য মানুষ ডায়ারিয়া ও চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
এ দিকে বেশ কয়েক বছর ধরে এলাকার কিছু বালু ব্যবসায়ী বর্ষা এলেই শত শত ট্রলারে ব্রহ্মপুত্র ও শীতলক্ষা নদী থেকে বালু আমদানি করেন। আর সেই বালু উত্তোলন করে রাখা হয় ভালুকা থানা সংলগ্ন খিরু নদীর চড়াসহ ব্রিজের দুই পাড়ে। এসব বালু পাহাড়ের মতো স্তূপিকৃত করে রাখা হয়। আস্তে আস্তে বালু নদীতে নেমে ভরাট হয়ে নাব্যতা হারিয়ে ফেলছে। এতে সেচ কাজ ব্যাহত হওয়ায় চাষাবাদে এলাকার কৃষকরা বেকায়দায় পড়েছেন। তবুও স্থানীয় প্রশাসন এর প্রতিকারে কোনোরূপ কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
ভালুকা শেফার্ড গ্রুপের ডিজিএম মোখলেছুর রহমান বলেন, আমরা সার্বক্ষণিক ইটিপি প্ল্যান্ট চালু রেখে আসছি। আমাদের রয়েছে বায়োলজিক্যাল ইটিপি, ফলে মিলের বর্জ্যরে কারণে নদীর পানি নষ্ট হওয়ার কোনো কারণ নেই।
গ্লোরি ডায়িং মিলের জেনারেল ম্যানেজার আফছার উদ্দিন ও প্রজেক্ট ম্যানেজার অনিক দাস জানান, তাদের ফ্যাক্টরিটিতে ইটিপি রয়েছে এবং তা দিয়ে বর্জ্য শোধনের পর খিরু নদীতে ফেলা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জেসমিন জাহান জানান, ডাইং মিল থেকে নির্গত বর্জ্য পানিতে অ্যামুনিয়া বেশি থাকে অর্থাৎ ইউরিয়ার পরিমাণ অত্যধিক থাকে। যে কারণে ধান গাছ খুব দ্রুত বেড়ে যায়, আর তাতে পাতাপচা রোগ হয়ে ফলন নষ্ট হয়। এ ছাড়া ফ্যাক্টরি থেকে নির্গত বর্জ্য পানি গাছের খাদ্য হিসেবে ধানে মিশে যায় আর ওই ধানের চাল ভাত হিসেবে খেলে তা মানবদেহে মারাত্মক ক্ষতি হয়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ভালুকা আঞ্চলিক শাখার সদস্য সচিব কামরুল হাসান পাঠান কামাল জানান, পরিবেশ রক্ষায় আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে মানববন্ধন ও স্মারকলিপিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ জানান, মিল কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া ও দূষিত বর্জ্যরে কারণে যেভাবে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে তাতে ভালুকার পরিবেশ রক্ষায় নাগরিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন। তা ছাড়া উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সব সময়েই বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা খাতুন জানান, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা মিল কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য খিরু নদীসহ আশপাশ এলাকার খাল-বিল বা জলাশয়ে পড়ে ভয়াবহ পরিবেশ দূষণ ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় যা যা করণীয় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা করা হবে বলে তিনি জানান।


আরো সংবাদ



premium cement
মোরেলগঞ্জে সৎভাইকে কুপিয়ে হত্যা দুবাই পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণ কি কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরানো? এ দেশের ঘরে ঘরে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে : ডাঃ শফিকুর রহমান পিছিয়েছে ডি মারিয়ার বাংলাদেশে আসার সময় ইরানে হামলা : ইস্ফাহান কেন টার্গেট? মাত্র ২ বলে শেষ পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টি জেলে কেজরিওয়ালকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দলের ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা তোকে যদি এরপর হলে দেখি তাহলে খবর আছে, হুমকি ছাত্রলীগ নেতার বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা করা হয়নি : প্রধানমন্ত্রী দাওয়াতী ময়দানে সকল নেতাদের ভূমিকা রাখতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান

সকল