২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফুলবাড়ীতে গরুর মড়ক দিশেহারা কৃষক

ব্যাটারি কারখানা থেকে বিষক্রিয়া
ফুলবাড়ী-মাদিলা সড়কের পাশে আবাদি জমিতে ব্যাটারি কারখানার বর্জ্য : নয়া দিগন্ত -

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে অজ্ঞাত রোগে দুই গ্রামের ২০টি গরু মারা গেছে। এলাকার অন্য গরুগুলোও মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। কৃষকরা জানান, হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট ও কাঁপনি শুরু হয়ে গরুগুলো মরে যাচ্ছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ বাসুদেবপুর ও বেতদীঘি ইউনিয়নের মহেষপুর গ্রামে এসব গরু মারা গেছে। পশু চিকিৎসকদের ধারণা বিষক্রিয়ার কারণে গরুগুলোর মৃত্যু হতে পারে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, বাসুদেবপুর পাকড়ডাঙ্গা নামক স্থানে ফুলবাড়ী-মাদিলা সড়কের পাশে আবাদি জমিতে দুলাল নামে একজনের জমিতে একটি ব্যাটারি কারখানা করা হয়। এই কারখানার বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ার কারণে এলাকার ঘাস ও খড় খেয়ে হঠাৎ গরুগুলোর শ্বাসকষ্ট দেখা দিচ্ছে এবং পেট ফেঁপে কাঁপানি শুরু হচ্ছে। এরপর এক-দুই দিনের মধ্যে গরুগুলো মরে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার সরেজমিন ওই এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, ঘটনাটি জানাজানি হওয়ায় তড়িঘড়ি করে কারখানাটি ভেঙে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
দক্ষিণ বাসুদেবপুর গ্রামের ফয়জুর রহমান মুকুল বলেন, বৃহস্পতিবার তার গাই বাছুরসহ দু’টি গরু মারা গেছে। এর আগে ৩০ নভেম্বর তার আরো তিনটি গরুর মারা গেছে। একইভাবে গত ২৭ নভেম্বর একই গ্রামের বাদশা মিয়ার দু’টি, সোহেল রানার একটি ও হাফিজের একটি গরুসহ ওই গ্রামে গত সাত দিনে প্রায় ১০টি গরু মরে গেছে।
এ ছাড়াও মহেষপুর গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, ওই গ্রামের জাকিরের একটি, শফিকুলের একটি, বেলালের একটি, মুক্তারের দু’টি, মজিবরের দু’টিসহ গ্রামের ১০টি গরু মরে গেছে। এ নিয়ে দুই গ্রামের প্রায় ২০টি গরু মরে গেছে। এভাবে একের পর এক গবাদি পশুর মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন গ্রামের সাধারণ কৃষকরা।
ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসী জানান, মাঠের মধ্যে একটি অস্থায়ী ব্যাটারি কারখানা তৈরি করার পর থেকে ওই মাঠে চলাচল করা গরুগুলোর এ সম্যসা দেখা দিচ্ছে। এ ছাড়া পশু চিকিৎসকরা ব্যাটারিতে সিসার বিষক্রিয়ার কারণে গরুগুলোর মৃত্যু হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। এ ঘটনায় বর্তমানে ওই এলাকার অনেক গরু এখনো অসুস্থ অবস্থায় রয়েছে। কেউ কেউ আতঙ্কে গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন, কেউ আবার গরু জবাই করে ফেলছেন।
যোগাযোগ করা হলে কারখানার জমির মালিক প্রভাষক দুলাল বলেন, কারখানার জন্য জমিটি ভাড়া দেয়া হয়। বেশ কিছু দিন আগে এলাকাবাসীর অভিযোগের কারণে সেটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গরু মরে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, অল্প কয়েকটি গরু মরে গেছে, কারখানার কারণে তেমন ক্ষতি হওয়ার কথা নয়। বিভিন্ন রোগের কারণেও গরুগুলো মরে যেতে পারে বলে তিনি জানান। বিষয়টি তিনি নিজেই খতিয়ে দেখবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আহসান হাবিব বলেন, খবর পেয়ে সরেজমিন এলাকায় দেখা গেছে সেখানে একটি ব্যাটারি কারখানা রয়েছে। ওর পাশে কারখানার বর্জ্য ফেলা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে সেখানে যেসব গরু ঘাস অথবা খড় খেয়েছে বিষক্রিয়ার কারণেই ওই সব গরু মারা যেতে পারে। জয়পুরহাট থেকে আমাদের একটি বিশেষ টিম আসছেন, তারা এসে বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন বলেন, বিষয়টি শুনেছি। এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সাথে কথা হয়েছে, দ্রুত বিষয়টি নিয়ে আমাদের একটি তদন্ত টিম সেখানে যাবে, তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement