২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কপোতাক্ষে ফের ভাঙন : ঝুঁকিতে আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘরবাড়ি হাটবাজার

কপোতাক্ষের ভাঙনের মুখে থাকা পাইকগাছার একটি গ্রাম: নয়া দিগন্ত -

এক দিকে ভাঙন অপর দিকে নাব্যতা হ্রাসে কপোতাক্ষের তীরে বসবাসকারী লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকায় নেমে আসে ঘোর অনিশ্চয়তা। এরপর গণদাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ২৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে কপোতাক্ষ খনন করে। নদ ফিরে পায় তার হারানো যৌবন। তবে ফের ভাঙনে নতুন করে উদ্বাস্তু হচ্ছে নদী তীরে বসবাসকারী বহু পরিবার। হুমকির মুখে পড়েছে সরকারের বহু উন্নয়ন প্রকল্প। চরম ঝুঁকিতে রয়েছে ভূমিহীন পরিবারের পুনর্বাসনে গড়া আবাসন প্রকল্প, হাটবাজার, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
ইতোমধ্যে কপোতাক্ষের পাইকগাছার কপিলমুনি ইউনিয়নের কাশিমনগর হাটবাজার, মসজিদ, দোকানপাট ও তিন কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের চারতলা ভবন, কাশিমনগর হাট, দোতলা গ্রামীণ মার্কেট ভবন, মুজিব শতবর্ষে গৃহহীনদের জন্য উপহার আবাসন প্রকল্প চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। কপোতাক্ষ পাড়ের বনায়ন প্রকল্পের বেশির ভাগ গাছ ইতোমধ্যে গিলে খেয়েছে কপোতাক্ষ। ঐতিহ্যবাহী কালীবাড়ী ঘাট, হাটবাজার, গোলাবাটি ভাঙনে বিলীন হচ্ছে। রাড়ুলী ইউনিয়নে ভাঙন ফের মারাত্মক আকার ধারণ করছে। ইতোমধ্যে সেখানকার জেলেপল্লীর কমপক্ষে ৭০ পরিবার ভাঙনের মুখে অন্যত্র চলে গেছে। ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে আরো ২০ পরিবারের বসতভিটা। বিলীন হয়ে গেছে সেখানকার চলাচলের একমাত্র রাস্তার দুই-তৃতীয়াংশ। জোয়ারের পানি ঠেকানোর জন্যও সেখানে নেই কোনো বাঁধ। ফলে অমাবস্যা-পূর্ণিমায় জোয়ারে পানি বাড়লে লবণ পানিতে প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গাছপালা, ফসলি জমি ও কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি।
এ ব্যাপারে কথা হয় কপিলমুনির কাশিমনগর জেলেপল্লীর বাসিন্দা উত্তম বিশ্বাসের সাথে। তিনি জানান, ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তারা সেখানে বসবাস করে আসছেন। বহু পরিবারের মূল বসতভিটা গিলে খেয়েছে কপোতাক্ষ। অনেকেই পেশা বদলে অন্যত্র চলে গেছে। উদ্বাস্তু হয়েছে অনেক পরিবার। রাড়লী জেলেপল্লীর বাসিন্দা ভূধর বিশ্বাস বলেন, আমার বাবা ও দাদুরা শত বছর ধরে এখানে বসবাস করে আসছেন। নদীর কূলে আমাদের দেড়শ বিঘা জমি ছিল। এখন কিছুই নেই।
একই এলাকার বারিক মোড়ল জানান, ভাঙনের মুখে তিনি অন্তত তিনবার ঘর পরিবর্তন করেছেন। তার পরও কাঠের ঘরটুকুও নদীতে চলে গেছে। বাকি ঘরখানিও যেকোনো সময় চলে যেতে পারে। সঙ্গতি না থাকায় অন্যত্র জমি কিনে বসবাসেরও উপায় নেই, অন্য দিকে সরকারও নদীভাঙন রোধে কার্যত কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতিতে তাদের দাবি, নদীর অপর পাড়ে গড়ে ওঠা চরে বসতির সরকারি অনুমতি।
রাড়ুলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রায় ৪০ বছর ধরে কপোতাক্ষের ভাঙন চললেও সরকার ভাঙনরোধে তেমন কোনো বরাদ্দ দেয়নি। উপজেলা আইনশৃঙ্খলা ও সমন্বয় সভায় একাধিকবার বিষয়টি উত্থাপন করলেও কোনো কাজ হয়নি। বিষয়টি নিয়ে তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্যের সাথে কথা বলবেন বলেও তিনি জানান।
কাশিমনগর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য শেখ রবিউল ইসলাম বলেন, নতুন করে ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্প, মসজিদ, শ্মশানঘাট, নির্মাণাধীন গ্রামীণ মার্কেটসহ নদী তীরের বহু স্থাপনা। এ ব্যাপারে তিনি জরুরি ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকরী প্রকৌশলী রাজু আহম্মদ জানান, তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে ভাঙনকবলিত রাড়–লী, বোয়ালিয়া, রামনাথপুরসহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে জরিপকাজ সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র মন্ত্রণালয়ে পাটিয়েছেন। বরাদ্দ হলেই কার্যক্রম শুরু হবে


আরো সংবাদ



premium cement