রামগড়ে অবৈধ ভাটায় পুড়ছে পাহাড়ের মাটি ও গাছ
- বেলাল হোসাইন রামগড় (খাগড়াছড়ি)
- ২৮ নভেম্বর ২০২১, ০০:১১
খাগড়াছড়ির রামগড়ে গড়ে উঠেছে একাধিক অবৈধ ইটভাটা। নেই পরিবেশ অধিফতরের ছাড়পত্র। কয়লার পরিবর্তে এখানে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে বনের গাছ। এ ছাড়া ব্যবহার করা হচ্ছে পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর তৈলের ড্রাম দিয়ে বানানো চিমনি। ইট তৈরির কাজে ব্যবহার হচ্ছে পাহাড়ের মাটি। স্বাস্থ্যঝুঁকি স্থানীয় বাসিন্দারা। ভাটামালিকরা কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না।
পাহাড়ি এই উপজেলায় রয়েছে অন্তত ১০টি অবৈধ ইটের ভাটা। রামগড় পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড সোনাইপুলেই রয়েছে চারটি অবৈধ ভাটা। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ অনুযায়ী পৌর এলাকার অভ্যন্তরে ও কৃষিজমিতে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। কর্তৃপক্ষ এই এলাকায় ইটভাটা স্থাপনের জন্য কোনো লাইসেন্সও দিতে পারবে না। এসব নিয়ম লঙ্ঘন করেই ইটভাটাগুলোর কার্যক্রম চলছে। আধা কিলোমিটারের ব্যবধানে প্রায় ৮০ কানি জায়গাজুড়ে নুরজাহান ব্রিকস, হাজেরা ব্রিকস, মোস্তফা রাইটার্স ব্রিকস, এন আই এম ব্রিকস ভাটার অবস্থান।
খাগড়াছড়ির রামগড়ের নাকাপা পুলিশ ফাঁড়ি থেকে আনুমানিক তিন কিলোমিটার ভেতরে রামগড় ২ নম্বর পাতাছড়া ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা দাঁতারাম পাড়ায় মেঘনা ব্রিকস১, মেঘনা ব্রিকস২, আপন ব্রিকস১, আপন ব্রিকস২, এমএসপি ব্রিকস নামের পাঁচটি অনুমোদনহীন ভাটার কার্যক্রম পাশাপাশি চলছে।
প্রতি মৌসুমে একটি ভাটায় গড়ে এক লাখ মণ কাঠ পোড়ে। সে হিসাবে ১০টি ইটভাটায় কমপক্ষে ১০ লাখ মণ কাঠ পোড়ে। অভিযোগ রয়েছে এসব কাঠ জোগাড় হচ্ছে আশপাশের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকেই। যার ফলে উজাড় হয়ে যাচ্ছে পাহাড়ি অঞ্চল, বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়ছে পাহাড়। পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন সত্ত্বেও ভাটামালিকরা পাহাড়ি কাঠ পুড়িয়ে যাচ্ছে প্রশাসনের নজরদারির অভাবে।
অভিযোগ রয়েছে রামগড়-খাগড়াছড়ি সড়ক হতে দাঁতারাম পাড়া পর্যন্ত কাঠ ও মাটি পড়ে নষ্ট হয়ে যায় সড়কটি। দাঁতারাম পাড়া এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা কমলকান্তি বলেন, সামনে বৃষ্টির মৌসুম। এই রাস্তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। ধুলাবালুতে জনদুর্ভোগে অতিষ্ঠ আমরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ভাটার মালিককে অনুমোদনহীন ইটের ভাটা পরিচালনার বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে কোনো ভাটার অনুমোদন নেই। ব্যবসায়িক ট্রেড লাইসেন্স ব্যবহার করে ভাটা চালাচ্ছি।
হাজেরা ব্রিকসের মালিক নোমান ভূঁইয়া বলেন, কয়লার দাম বেশি। এতে খরচ বেড়ে যায়। এ জন্য চুল্লিতে কাঠ পোড়ান। এ বিষয়ে সবাই অবগত আছে। তবে তিনি দাবি করেন এসব গাছ তারা ব্যবসায়ীদের থেকে কেনেন। ব্যবসায়ীরা সংরক্ষিত বনের গাছ বিক্রি করছে কি না তাদের কাছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
রামগড় পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জসিম উদ্দীন চৌধুরী বলেন, ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় শিশু ও বয়স্ক মানুষের শরীরের নানা রকম রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে সড়ক সংস্কার করলে দুই দিনে সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়।
পরিবেশবিদ শ্যামল রুদ্র বলেন, ভাটায় ড্রাম চিমনিতে কাঠ পোড়ানোয় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। হুমকির মুখে জৈববৈচিত্র্য। পাহাড় থেকে গাছ কাটায় পাহাড়গুলো ন্যাড়া পাহাড়ে পরিণত হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, ভাটার কবলে পড়ে উর্বরতা হারাচ্ছে আশপাশের জমি। এতে ফসল উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে রামগড় বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা সুলতানুল আজিম বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত নই। সংরক্ষিত বনের কাঠ পোড়ানো হলে উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে বন থেকে গাছ কাটা ও চুল্লিতে কাঠ পোড়ানো নিষিদ্ধ। কয়লা দিয়ে চুল্লিতে ইট পোড়াতে হবে।
রামগড় ইউএনও উম্মে হাবিবা মজুমদার বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। আইন অমান্য করার সুযোগ নেই। খুব দ্রুত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা