১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঘুরে দাঁড়িয়েছে পাবনার হোসিয়ারি শিল্প

৩০ হাজার কর্মসংস্থান
পাবনায় ঝুট দিয়ে তৈরি হচ্ছে সুন্দর সুন্দর গেঞ্জি: নয়া দিগন্ত -

পাবনায় ১২৫ বছরের আদি হোসিয়ারি শিল্পের অস্তিত্ব হারানোর পর নতুন নামে গার্মেন্টের উচ্ছিষ্ট ঝুট কাপড়ে ঘুরে দাঁড়ান হোসিয়ারি ব্যবসায়ীরা। গড়ে উঠেছে চার শতাধিক কারখানা। বছরে
তৈরি হচ্ছে প্রায় ২০ কোটি পিস গেঞ্জি। যার বাজারমূল্য প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। নতুন করে কর্মসংস্থান হয়েছে ৩০ হাজারের অধিক শ্রমিকের। জুট কাপড়ের তৈরি এসব গেঞ্জি দেশের চাহিদা
মিটিয়ে যাচ্ছে দেশের বাইরেও।
ভারত, মালয়েশিয়া, সৌদি, দুবাই, কাতারসহ অনেক দেশে রফতানি হচ্ছে পাবনার গেঞ্জি। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পাবনায় এই শিল্প খুলে দিতে পারে সম্ভাবনার দ্বার।
এক সময় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পাবনার হোসিয়ারি এবং তাঁতশিল্পের খ্যাতি ছিল জগৎজোড়া। এই পণ্য সারা দেশের বাইরে ইউরোপেও রফতনি হতো। কিন্তু ৫০ এর দশকে শ্রমিক অসন্তোষসহ
নানা কারণে এ শিল্পে বিপর্যয় নেমে আসে। বেকার হয়ে পড়েন হাজার হাজার মালিক-শ্রমিক। কালের প্রবাহে নারায়ণগঞ্জের গার্মেন্টে অব্যবহৃত কাপড় বা ঝুট দিয়ে টি-শার্টসহ বিভিন্ন গার্মেন্টসামগ্রী
তৈরির মাধ্যমে পাবনার ওই বিলুপ্ত হোসিয়ারি শিল্প আবার জেগে উঠেছে। ইতিহাস বলছে, ব্রিটিশ সরকারের নির্যাতনে মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেয়ার বাসনা নিয়ে জমিদার রায় বাহাদুর এবং
জিতেন্দ্রনাথ কবিরাজের উদ্যোগে পাবনার দিলালপুরে গড়ে তোলা হয় ওই শিল্পপ্রতিষ্ঠান। আর এটি ছিল এই উপমহাদেশের প্রথম হোসিয়ারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। মাত্র ১০ বছরে একটি মাত্র হোসিয়ারি থেকে
প্রায় ৬০০টি কারখানার জন্ম হয় পাবনা শহরে। পাশাপাশি পাবনার আরো একটি ঐতিহ্যবাহী শিল্প তাঁতেরও গোড়াপত্তন হয় ১৯১৮ সালে। অল্প দিনেই সুতা, রঙ ও রাসায়নিক দ্রব্যের বাজারও
গড়ে ওঠে। বলা হয়ে থাকে ১৯১৮ থেকে ১৯৪৭ সাল ছিল পাবনার হোসিয়ারি শিল্পের যৌবনকাল। ষাটের দশক পর্যন্ত এ শিল্প ভালোভাবেই চলে। স্বাধীনতাযুদ্ধের পর বড় ব্যবসায়ী আদম খানের
পাবনার হোসিয়ারি ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সুতার অভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্পমালিকরা ব্যবসা পরিচালনা করতে হিমশিম খেতে থাকেন। ১৯৭২-৭৩ সালের দিকে হোসিয়ারি শিল্প একেবারে বন্ধ হয়ে
যায়।
বলরামপুরের হোসিয়ারি ব্যবসায়ী সেলিম রেজা জানান, স্বাধীনতা-উত্তর অর্ধশতাধিক স্বয়ংসম্পূর্ণ হোসিয়ারি কারখানা ছিল। যেখানে সুতা থেকে গেঞ্জি পাবনাতেই তৈরি হতো। এখন ওই সব স্বয়ংক্রিয়
কারখানা একটিও নেই।
পরবর্তীতে ১৯৯৫ সালে ঝুট কাপড় নতুন নামে জেলার হোসিয়ারি ব্যবসা শুরু হয়। সে সময় সীমিত আকারে হাতেগোনা কয়েকজন ব্যবসায়ী ঝুঁকি নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ঝুটশিল্পের তৈরী পোশাকের
ব্যবসা শুরু করেন। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন পোশাক কারখানা থেকে নমুনা কাটিংয়ের কাপড়, পরিত্যক্ত কাপড় কম দামে সংগ্রহ করে তা দিয়ে গেঞ্জি তৈরির এই ব্যবসা শুরু করেন তারা। প্রাথমিক
পর্যায়ে এসব গেঞ্জি জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে ফেরি করে বিক্রি করা হতো। ধীরে ধীরে পাবনার গণ্ডি পেরিয়ে ঝুটপণ্যের পার্শ্ববর্তী জেলা ও দেশের বাইরেও বাজার তৈরি হয়। হোসিয়ারি শিল্পের
এসব তরুণ প্রজন্মের হাতেই রচিত হয় নতুন ইতিহাস।
পাবনা সদর উপজেলার বাংলাবাজারের ঝুট ব্যবসায়ী আবদুল মমিন জানান, মাত্র কয়েক বছর আগেও ঢাকার গাজীপুরে একটি তৈরী পোশাক কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। অথচ সেই
মমিনের কারখানা থেকেই এখন পোশাক রফতানি হচ্ছে ভারতসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশে। মাত্র ১০ হাজার টাকার পুঁজি নিয়ে শুরু করা তার কারখানার বর্তমান আর্থিক মূল্য প্রায় পাঁচ লাখ টাকা।
পাবনা সদর উপজেলার আশপাশে বিভিন্ন গ্রামে মমিনের মতো এমন অসংখ্য ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা গড়ে তুলেছেন কয়েক শতাধিক তৈরী পোশাকের কারখানা। গত ১০ বছরে গড়ে ওঠা এসব কারখানায়
নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে ৩০-৪০ হাজার মানুষের।
তবে সম্ভাবনার এ শিল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, নানা সঙ্কটের কথাও। ঢাকা ও গাজীপুরের তৈরী পোশাক কারখানাগুলোতে স্থানীয় প্রভাবশালীরা সিন্ডিকেট করে ঝুট কাপড়ের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের
স্বেচ্ছাচারী আচরণে কাঁচামাল পেতে দেরি ও বেশি দামে কিনতে হয়। এ ছাড়া পুঁজিসঙ্কটের কারণে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা চড়া সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হন। এ জন্য দরকার সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা। সরকারের
সহযোগিতা পেলে পাবনায় একটি ঝুটপল্লী হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।
এই ক্ষুদ্র শিল্পের সবচেয়ে বিস্ময়কর তথ্য হলো, এসব পণ্যের প্রধান কাঁচামাল ঢাকা ও চট্টগ্রামের তৈরী পোশাক কারখানার ফেলে দেয়া উচ্ছিষ্ট কাপড়। এসব দিয়েই তৈরি হচ্ছে সুন্দর সুন্দর
টিশার্ট।
পাবনা হোসিয়ারি ম্যানুফাকচারার্স গ্রুপের সভাপতি মনির হোসেন পপি বলেন, প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হলেও এই শিল্পের প্রতি সরকারের তেমন কোনো নজর নেই। সরকারের সহযোগিতা পেলে
পাবনায় শিল্প বিপ্লব ঘটনানো সম্ভব হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
দেশে করোনায় আরো একজনের মৃত্যু উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনের অংশ নিতে মানা সবল-দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার কাজ শেষ হতে কত দিন লাগবে? জনগণের শক্তির কাছে আ'লীগকে পরাজয় বরণ করতেই হবে : মির্জা ফখরুল টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় মেরিনা তাবাসসুম বিএনপি নেতারা সন্ত্রাসীদের সুরক্ষা দেয়ার অপচেষ্টা করছে : ওবায়দুল কাদের ট্রাকচাপায় নিহত ১৪ : তদন্ত কমিটি গঠন, চালক-হেলপার গ্রেফতার নেতানিয়াহুর একগুঁয়েমির কারণে মধ্যস্তকারীর ভূমিকা থেকে সরে যাবে কাতার! আফ্রিদির সাথে বিবাদের বিষয়ে কথা বললেন বাবর বাংলাদেশে গ্রিসের দূতাবাস হচ্ছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তানের সাথে টেস্ট খেলতে চান রোহিত

সকল