পদ্মা ও যমুনায় রাতের আঁধারে অবাধে মা ইলিশ শিকার
- শফিউল আযম বেড়া (পাবনা)
- ২০ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
পাবনা-সিরাজগঞ্জের পদ্মা ও যমুনা নদীতে রাতের বেলায় অবাধে চলছে মা ইলিশ শিকার। প্রজনন মৌসুমে ইলিশ শিকারের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পদ্মা-যমুনার প্রায় ৮০ কিলোমিটার এলাকাব্যাপী চলছে মা ইলিশ শিকার। রাজনৈতিক ছত্রছায়ার কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানেও বন্ধ হচ্ছে না ইলিশ শিকার। এই মাছ বেচাকেনার জন্য প্রায় ২৫টি পয়েন্টে বসছে ভ্রাম্যমান বাজার। এসব বাজারে রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত চলছে ইলিশ বেচাকেনা।
সিরাজগঞ্জের যমুনা সেতুর ভাটি থেকে পাবনার ঢালারচরের বারকোদালিয়া পর্যন্ত যমুনা নদীর ৫০ কিলোমিটার এবং বারোকোদালিয়া থেকে পাবনা সদর পর্যন্ত পদ্মায় ৩০ কিলোমিটার এলাকায় অবাধে মা ইলিশ শিকার করতে দেখা গেছে। রাতে প্রচুর সংখ্যক নৌকা নিয়ে জেলেরা মা ইলিশ ধরছে। তাদের জালে ডিমওয়ালা রুপালি ইলিশের সাথে ঝাঁকে ঝাঁকে জাটকাও ধরা পড়ছে। প্রতিটি জালে মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে ধরা পড়ছে প্রায় ১০ থেকে ১৫ কেজি মা ইলিশ। এসব ইলিশ আকার ভেদে ১৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে বড় আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একটু কম দামে ইলিশ কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছে স্থানীয় ক্রেতারা।
পাবনা জেলা মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মৎস্য বিভাগ ৩৭৪টি অভিযান ও ২৩টি বোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছে। এ সময় ২৬৮ কেজি মা ইলিশ মাছ জব্দ এবং সাত লাখ ৬৩ হাজার মিটার কারেন্ট জাল আটক করা হয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় যমুনা নদীর খাষকাউলিয়া, খাষপুখুরিয়া, ঘোড়জান, উমারপুর, বাঘুটিয়া, বোয়ালকান্দি, নওহাটা, দত্তকান্দি, দক্ষিণ খাষকাউলিয়া, বিনানুই, আজিমুদ্দির মোড়, খগেন ঘাট, ভুতের মোড়, জনতা স্কুলের পশ্চিম, চরছলিমাবাদ, বোয়ালকান্দি, স্থল ইউনিয়নের লাঙ্গলমুড়া এলাকায় জেলেরা মা ইলিশ শিকার করছেন। যমুনা নদীতে তিনটি চ্যানেল হওয়ায় এ বছর সবচেয়ে বেশি ইলিশ ধরা পড়ছে বাউসা এলাকায়। সেখানে এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে পাঁচ শতাধিক নৌকা দেখা যায়। এসব নৌকায় ও জেলেদের জালে আহৃত শত শত কেজি মা ইলিশ নদীপাড়ের সবচেয়ে বড় ভ্রাম্যমাণ মাছ বাজার ভুতেরমোড় ও বাউসাচর ছাড়াও মুরাদপুর, চালুহারা, ফুলহারা, আজিমুদ্দিন মোড় ঘাট, জনতা স্কুল ও বোয়ালকান্দিচর বেড়ার ঢালারচর, কাজীরহাট, নগরবাড়ী, রাকশা, হরিরামপুর, নাকালিয়া, পেঁচাকোলা, মোহনগঞ্জ, সুজানগর উপজেলার প্রায় ২৫টি পয়েন্টে রাতের বেলা বেচাকেনা হয়। ভ্রাম্যমাণ বাজারের বেশির ভাগ পাইকার পাবনা, বগুড়া, নাটোর, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও রাজধানী ঢাকা থেকে আসে। তারা কম দামে ডিমওয়ালা মা ইলিশ মাছ কিনে মাইক্রোবাস, পিকাপভ্যান, সিএনজি অটোতে করে নিজ নিজ গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন দিনে মাঝে মধ্যে ঝটিকা অভিযান চালালেও থামছে না মা ইলিশ শিকার। কারণ অভিযানের খবর আগে ভাগেই জেলেদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। তাছাড়া প্রশাসন রাতে অভিযান না চালানোয় জেলেরা রাতে ইলিশ শিকার করছে। এ জন্য স্থানীয় কিছু অসাধু জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালী ব্যক্তি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নৌকা প্রতি নির্ধারিত হারে উৎকোচ দিতে হয়। জেলেরা বলেছে, নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে সরকারিভাবে তাদের যে সহায়তা পাওয়ার কথা ছিল তা তারা পায়নি। তাই বাধ্য হয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে তারা নদীতে মাছ ধরছে।
বেড়ার ঢালারচরের বারকোদালিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ছোট ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকায় তিন থেকে চারজন করে জেলে মাছ ধরায় ব্যস্ত। কেউ জাল ফেলছে, কেউ তুলছে আবার কেউবা নৌকা নিয়ন্ত্রণ করছে। ঢালারচরের ২০ কিলোমিটার উজানে যমুনা-হুড়াসাগর নদীর মিলনস্থল মোহনগঞ্জে বেশ কিছু নৌকাকে মাছ শিকার করতে দেখা গেল। কিছু সময় পর সেখানে প্রায় একমণ মাছ শিকার করে ফিরে আসা জেলে শৈলেন হলদার বলেন, ‘পেটে দিলে পিঠে সয়। নিষেধাজ্ঞা দেবেন অথচ খাবার দেবেন না, তাহলে আমরা না খেয়ে মরব।’ অপর জেলে ভিকু হলদার বলেন, ‘শুনছিলাম মৎস্য অফিস এই নিষেধাজ্ঞার সময় আমাগের চাল দেবে। চালতো দেয়া দূরের কথা, একবারের জন্য জিজ্ঞাসাও করে নাই আমরা কেমন আছি।’
পাবনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল কালাম আজাদ বলেন, পাবনা জেলায় ৩৪ হাজার জেলে আছে। এর মধ্যে মাত্র তিন হাজার জেলেকে ২০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। জেলা-উপজেলা মৎস্য বিভাগ পদ্মা ও যমুনা নদীকে মাছ ধরার নৌকা মুক্ত রাখতে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এতে সহযোগিতা করছে জেলা, উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন। গত ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে জেল-জরিমানা করা হয়েছে। তিনি বলেন, জেলেদের খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন, সেই সাথে জনসাধারণকেও সচেতন হতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা