২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মিরসরাইয়ে জনবসতিহীন পাহাড়ে সড়কবিহীন সেতু

-

নেই কোনো বসতি, নেই মানুষের আসা যাওয়া, তারপরও কার স্বার্থে এইসেতু? অথচ যেখানে মানুষের হরদম চলাচল সেখানে সেতু হচ্ছে না। জনবসতিহীন পাহাড়ের ভেতর সড়ক বিহীন সেতুটি নির্মাণ করেছে মিরসরাই উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের সেতু/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়নের ফরেস্ট অফিসের রাস্তায় শিমুলতলী ছড়ার ওপর ৩৪ ফুট দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করা হয়। সেতুর ফলকে নাম ও দৈর্ঘ্য লেখা থাকলেও কত টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করা হয়েছে তা ঘষে তুলে ফেলা হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করেও সেতুটির নির্মাণ ব্যয় জানা যায়নি।
বারইয়ারহাট-খাগড়াছড়ি সড়কের সাথে সংযুক্ত হিঙ্গুলী-ফরেস্ট অফিসের সড়কটি ২নং হিঙ্গুলী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মেহেদীনগর গ্রামে অবস্থিত। সড়কটির প্রায় ১২ কিলোমিটারের মধ্যে বসতি থাকলেও শেষাংশে শুধু পাহাড় আর পাহাড়। নেই কোনো জনমানব। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে অবস্থিত ভূমিতে ধানসহ বিভিন্ন শষ্য আবাদ করা হয়। প্রায় পাঁচ বছর আগে নির্মিত সেতুটির পশ্চিম পাশে সড়ক থাকলেও পূর্ব পাশে কোনো সড়ক নেই। একটি সরু ছড়া দিয়ে পাহাড়ের ওপর থেকে বেয়ে আসা পানি প্রবাহিত হয়। কৃষকরা উৎপাদিত ধান, শাকসবজি কাঁধে করে জমির আইল দিয়ে নিয়ে যায়। সড়কবিহীন জায়গায় সেতু করার কারণে কোনো কাজে আসছে না এটি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, হিঙ্গুলী-ফরেস্ট বিট সড়কের বিট অফিসের পর আধা কিলোমিটার পর মেহেদীনগর গ্রামে কোনো জনবসতি নেই। সড়কটি যত পাহাড়ের দিকে গেছে ততই প্রস্ত সরু হয়ে গেছে। সেতুর পশ্চিম পাশে সড়ক থাকলেও সেখানেও মাটি দেয়া হয়নি। সেতুর পূর্ব পাশে কোনো সড়ক নেই। সড়কবিহীন ঠায় দাঁড়িয়ে আছে সেতুটি।
স্থানীয় কৃষক জেবাল হক বলেন, পাহাড়ের ভেতর কোনো জনবসতি না থাকলেও প্রায় ৮০ একর জমিতে বোরো ও আমন ধান, রবিশষ্য (ঝিঙ্গা, চিসিঙ্গা, বরবটি), লেবু চাষ করা হয়। সেতুটি নির্মাণের প্রায় পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। যোগাযোগ অসুবিধার কারণে পাহাড়ের ভেতর অনেক জায়গায় চাষাবাদ হচ্ছে না। চাষ করলেও প্রায় ১৫-২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ধান, সবজি বারইয়ারহাট পৌর বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে নেয়া যায় না। আমরা চাই সেতুটির সাথে যেন দ্রুত সড়ক নির্মাণ করা হয়।
হিঙ্গুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন হারুন বলেন, হিঙ্গুলী-ফরেস্ট বিট রাস্তাটি হিঙ্গুলী ইউনিয়নে পড়লেও সেতুটির অবস্থান করেরহাট ইউনিয়নে। ওখানে সেতু নির্মাণের বিষয়ে তিনি জানেন না। এ ছাড়া রাস্তার বিষয়ে করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদ দেখবে। করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, হিঙ্গুলী-ফরেস্ট বিট সড়ক যেহেতু হিঙ্গুলী ইউনিয়নে, তাই সেতুটির অবস্থানও হিঙ্গুলী ইউনিয়নে। ওটি যদি করেরহাট ইউনিয়নে অবস্থিত হতো তাহলে আমি অবশ্যই রাস্তা নির্মাণের ব্যবস্থা করতাম।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ছাইফুল্লাহ মজুমদার বলেন, পাহাড়ের ভেতর জনবসতি না থাকলে কৃষিকে গুরুত্ব দিয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। আমাদের দায়িত্ব সেতু নির্মাণ করা, সড়ক নির্মাণ করা নয়। সড়ক নির্মাণের কাজ এলজিইডি দেখে। সেতু নির্মাণের প্রায় পাঁচ বছর পরও কেন সড়ক নির্মাণ করা হয়নি সে বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ভালো বলতে পারবেন। সেতুর নির্মাণব্যয় সম্পর্কে তিনি বলেন, সেতুটি প্রায় পাঁচ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছে, অনেক ফাইলের নিচে এটির ফাইল আছে। ফাইল খুঁজে পেতে একটু সময় লাগবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, হিঙ্গুলী-ফরেস্ট বিট সড়কের পাহাড়ের ভেতর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের সেতু নির্মাণ ও সড়কের সংযোগ না থাকার বিষয়ে আমি খবর নিয়ে বলতে পারব।


আরো সংবাদ



premium cement