২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে তীব্র যানজট কমে গেছে রাজস্ব আদায়

গোয়ালন্দে ট্রাক ওজন স্কেল দেড় মাস ধরে বিকল
-

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা কোর্ট চত্বরের সামনে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে স্থাপিত বিআইডব্লিউটিসির ট্রাক ওজন স্কেল দেড় মাস ধরে বিকল থাকলেও মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেই। স্কেলটিতে ওজন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সরকারি রাজস্ব আদায় কমে গেলেও দেখার যেন কেউ নেই।
তবে স্কেলে ওজন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় রাজস্ব আদায় কম হলেও চাঁদাবাজি চলছে ঠিকই। এতে মহাসড়কে ঘণ্টায় ঘণ্টায় যানজটসহ নানা বিড়ম্বনায় পড়ছেন এ রুটে চলাচলরত যানবাহনের যাত্রী ও চালকরা। প্রতিদিনই ট্রাকের চাপ বেড়ে গেলে স্কেলের দুই পাশে যানবাহনের লম্বা সিরিয়াল সৃষ্টি হয়। এ সময় উভয় পাশে শত শত গাড়ি আটকা পড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
২০১৪ সালে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে ওজন স্কেলটি স্থাপন করা হয়। দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা ঢাকাগামী অতিরিক্ত মালামাল বোঝাই ট্রাক ফেরি পার হওয়ার সময় ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য এটি স্থাপন করা হয়। স্কেলটি স্থাপনের ফলে দৌলতিদয়ঘাট বিআইডব্লিউটিসির প্রতিদিন এক লাখ টাকা রাজস্ব বৃদ্ধি পায় বলে তৎকালীন সূত্রে জানা যায়। কিন্তু স্কেলে ওজন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় রাজস্ব আদায় আগের মতো হচ্ছে না। কিন্তু স্কেলটি স্থাপনে ত্রুটি থাকায় মাঝে মধ্যেই বিকল হয়ে পড়ায় মেরামত করে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে আসছে। এ ছাড়া স্কেলটি অপরিকল্পিতভাবে মহাসড়ক লাগোয়াভাবে স্থাপিত হওয়ায় সড়কে সব সময় যানজট লেগেই থাকে।
বিআইডব্লিউটিসি স্কেলটি স্থাপন করার পর থেকেই এখানে হাইওয়ে পুলিশ, আনসার ও বিআইডব্লিউটিসি কর্মচারীরা কাজ করে আসছিলেন। কিছু দিন পর বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ টার্মিনাল চার্জ আদায়ের জন্য এখানে কাউন্টার স্থাপন করে কর্মচারী নিয়োগ করে। ট্রাকচালকদের অভিযোগ, স্কেলে দায়িত্বরত কর্মচারীরা মিলে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন কৌশলে চাঁদা আদায় থাকে। চালকরা প্রতিবাদ করে করলেও লাভ হয় না। উল্টো কখনো কখনো তারা মারধরের শিকার হন।
স্কেলটি মাঝে মধ্যে বিকল হলেও দ্রুত মেরামত করা হয়। কখনো এক সপ্তাহের বেশি ওজন কার্যক্রম বন্ধ থাকেনি। কিন্তু এবার গত মাসের ১ তারিখ থেকে বিকল হওয়ার পর দেড় মাসের বেশি কেটে গেলেও এটি মেরামতে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। এতে ঘণ্টায় ঘণ্টায় মহাসড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। তা ছাড়া স্কেলে চাঁদাবাজিও বেড়ে গেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, মালভর্তি ট্রাকচালকদের চালান স্লিপ দেখে ওজন স্লিপ হাতে লিখে দেয়া হচ্ছে। এতে বোঝাই সব ট্রাকের অতিরিক্ত মাল নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে রাজস্ব আদায় কম হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএ ও বিআইডব্লিউটিসির লোকজনকে একই রুমে বসে টার্মিনাল চার্জ আদায় করতে দেখা যায়।
একটি ওষুধ কোম্পানির কাভার্ডভ্যান চালক উসমান গণি আক্ষেপ করে বলেন, এ স্কেলে ওজন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এখানে চাঁদা নেয়া আর সময় নষ্ট করে যানজট বাঁধানো ছাড়া এদের কোনো কাজ নেই। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, টার্মিনাল চার্জ আদায় ও চালান অনুযায়ী ওজন দেখার কাজ দৌলতদিয়া ঘাটে করা যায়। স্কেলের অ্যাপ্রোচ সড়কের ভাঙাচোরা ও মোটা রড দেখিয়ে তিনি আরো বলেন, স্কেলে গাড়ি তোলার সময় সড়কের খানাখন্দে পানি জমে থাকায় মোটা রড ঢুকে ট্রাকের চাকা ফুটো হলে ক্ষতিপূরণ কে দেবে।
যাত্রী, চালক ও অভিজ্ঞমহল স্কেলটি মেরামত না হওয়ার জন্য দৌলতদিয়া ঘাট বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছেন। তাদের দাবি ইতঃপূর্বে স্কেল বিকল হওয়ার আগেই বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তা মেরামতের ব্যবস্থা করতেন। এখন বিকল হওয়ার দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেই।
এ বিষয়ে দৌলতদিয়া ঘাট বিআইডব্লিউটিসির ম্যানেজার শিহাব উদ্দিন জানান, মহাসড়কে যানজট নিরসনের লক্ষ্যে স্কেলটি স্থানান্তর করে অন্যত্র স্থাপনের সম্ভাবনা আছে। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ মুহূর্তে হয়তো মেরামত কাজ করছে না। তবে কবে নাগাদ এ স্কেলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে, তা তিনি বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রফিকুল ইসলাম বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের স্কেলটি সরিয়ে নেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। তবে যে কাজের জন্য স্কেলটি স্থাপন করা হয়েছিল সে কাজ যেহেতু আর হচ্ছে না, তাই ট্রাকগুলো এখানে না থামিয়ে সরাসরি দৌলতদিয়া যেতে দেয়া উচিত। নইলে স্কেলে দায়িত্বরত কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ শেষ হবে না।


আরো সংবাদ



premium cement