মেঘনায় ইলিশের আকাল : দাদন ও ঋণে দিশেহারা জেলেরা
- হেলাল উদ্দিন লিটন তজুমদ্দিন (ভোলা)
- ০৪ আগস্ট ২০২১, ০১:১১
ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার মেঘনায় ভরা মৌসুম চললেও চলছে ইলিশের আকাল। মৌসুমের তিন মাস শেষ হলেও কাক্সিক্ষত ইলিশ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে জেলেরা। যে কারণে অনেক জেলে মহাজনের দাদন ও এনজিওর ঋণের কিস্তির ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, মেঘনা নদীর ৯০ কিলোমিটার এলাকায় ইলিশ শিকার করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে উপজেলার প্রায় ২০ হাজার জেলে। বছরের এপ্রিল মাস থেকে পুরোদমে ইলিশের মৌসুম শুরু হওয়ায় অনেক জেলে মহাজনের কাছ থেকে দাদন ও এনজিওর ঋণ নিয়ে নতুন নৌকা ও জাল কিনে ইলিশ ধরার পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে নদীতে নামে। কিন্তু দল বেঁধে নদীতে গিয়ে দিন-রাত জাল ফেলে মাত্র পাঁচ থেকে ১০টি ইলিশ নিয়ে হতাশ হয়ে ঘরে ফিরছে জেলেরা। এই মাছ বিক্রি করে এনজিওর ঋণ ও মহাজনের দাদনের টাকা পরিশোধতো দূরের কথা, নদীতে যেতে ইঞ্জিনের ডিজেলের দামও হয় না। যে কারণে দোকান থেকে চাল, ডাল, মরিচ ও তেল কিনে টাকা দিতে না পারায় দোকানদারও নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল দিচ্ছে না।
শশীগঞ্জ স্লুইস ঘাট এলাকার জেলে কবির মাঝি, ভুট্টো মাঝি, জাহাঙ্গীর মাঝিসহ অনেকে জানান, নদীতে মাছ নেই। দিন-রাত জাল ফেলে ৫-১০টা মাছ পেয়ে তা বিক্রি করে যে টাকা হয় তাতে ডিজেলের দাম হয় না। তারপরও ছেলেমেয়ে নিয়ে অনেক কষ্টে সংসার চলে। ইলিশের মৌসুম যতই শেষ হয়ে আসছে চিন্তা ততই বাড়ছে কারণ নদীতে মাছ না থাকায় পরিবারের জন্য কিছুই করতে পারছে না। এটা অনেক কষ্টের।
মৎস্য আড়তদার জাহাঙ্গীর বলেন, দৈনিক এক থেকে দেড় হাজার টাকার বাজার নিয়ে জেলেরা নদীতে মাছ ধরতে যায়। রাত দিন জাল ফেলে মাছ পায় পাঁচ থেকে ১০টা। তা বিক্রি করে যে টাকা পায় তাতে দোকানের মালামালের টাকা দিলে আর জেলেদের তেমন একটা টাকা থাকে না। যে কারণে জেলেরা পরিবারপরিজন নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।
শশীগঞ্জ ঘাটের মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি আবুল হাসেম মহাজন বলেন, মৌসুমের তিন মাস চলে গেলেও যে আশায় আমরা জেলেদেরকে দাদন দিয়েছি, নদীতে গিয়ে জেলেরা সে অনুযায়ী মাছ পাচ্ছে না। যে কারণে উপজেলার প্রায় ২০০ মৎস্য আড়তদার এক রকমের মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমির হোসেন (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে নদীতে তেমন মাছ ধরা পড়ছে না। ইলিশ হলো গভীর পানির মাছ, তাই দিন দিন নদীর গভীরতা কমে যাওয়ায় ভরা মৌসুমেও মেঘনায় ইলিশের আকাল চলছে। ঝড়বৃষ্টি হলে মাছ বাড়তে পারে বলে আশার কথা জানান তিনি।া
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা