২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

খরায় পুড়ছে দিনাজপুর : ধান রোপণ নিয়ে বিপাকে কৃষক

-

দিনাজপুরে চলছে বৃষ্টির জন্য হাহাকার। সৃষ্টি হয়েছে খরা পরিস্থিতি। আশানুরূপ বৃষ্টিপাত না হওয়ায় জমি শুকিয়ে মাটি ফেটে যাচ্ছে। ফলে কৃষকরা বৃষ্টির পানি নির্ভর ফসল রোপা আমন রোপণ করতে পারছেন না। দিনাজপুর জেলায় দুই লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এ পর্যন্ত মাত্র ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন রোপণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত বছর এ সময়ে বৃষ্টির কারণে জমিতে হাঁটুপানি জমে থাকায় আমনের চারা রোপণ করা যাচ্ছিল না, এবার ঘটেছে ঠিক তার উল্টো চিত্র। জমিতে সেচ দিয়েও পানি ধরে রাখা যাচ্ছে না খরতাপের কারণে। খরা পরিস্থিতিতে অনেক কৃষক সেচ দিয়ে আমন আবাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিন-চার দিন পর পর সেচ দিলেও প্রখর রোদের কারণে মাটি ফেটে যাচ্ছে। কৃষক পানির জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীরাও পানির জন্য তাদের নানা ধর্মীয় রীতি পালন করছেন। দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার কৃষক আনোয়ারুল ইসলাম জানান, গত বছরের মতো বর্ষার পানি জমবে এমন ভরসায় সাত বিঘা জমি বর্গা নিয়েছেন; কিন্তু এ বছর ঠিকমতো বৃষ্টি না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন। পানির অভাবে আমনের চারা নষ্ট হচ্ছে। সেচ দিতে অনেকে বেশি খরচ হচ্ছে। অনেকে পানির অভাবে জমিতে আমন রোপণ করতে পারেননি। একইভাবে খানসামা উপজেলার কৃষক রেজাউল করিম জানান, তার জমি তুলনামূলক উঁচুতে হওয়ায় স্বর্ণা জাতের ধান রোপণ করেছেন। জমি তৈরি, চারা রোপণ, আগাছা পরিষ্কার, এক দফা সার-কীটনাশকও দিয়েছেন। চারা তরতর করে বেড়ে উঠছিল; কিন্তু বৃষ্টির অভাবে থমকে গেছে। মাটি ফেটে যাচ্ছে। এবার অগভীর নলকূপ (শ্যালো মেশিন) দিয়ে পানি দিতে হচ্ছে। এতে খরচ বাড়ছে। তিন-চার দিন পরপর পানি দিয়েও মাটি ভিজিয়ে রাখা যাচ্ছে না। দ্রুতই মাটি শুকিয়ে ফেটে যাচ্ছে। দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা আমনের চারা রোপণ শুরু করেছে; কিন্তু পানির অভাবে ইতোমধ্যে চারাগুলো লাল হয়ে গেছে।
দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র সহকারী তোফাজ্জুর রহমান জানান, গত বছর ২৫ জুলাই পর্যন্ত দিনাজপুরে ৫৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এবার ২৫ জুলাই পর্যন্ত জেলায় বৃষ্টিপাত হয়েছে মাত্র ১৩৬ মিলিমিটার, যা গত বছরের চেয়ে ৪৩২ মিলিমিটার কম। এ বৃষ্টি রোপা আমন চাষের জন্য খুবই সামান্য। আগস্টে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
স্থানীয় আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ বিডব্লিউওটির গবেষক পারভেজ আহমেদ পলাশ বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার সাত ভাগের এক ভাগ বৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান সময়ে এ অঞ্চলে কমপক্ষে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টির প্রয়োজন ছিল। আশার কথা যে, দুই-এক দিনের মধ্যে মাঝারি ধরনের (গড়ে ৭০-১০০ মিলিমিটার) বৃষ্টি হতে পারে। এতে কৃষকের সম্পূর্ণ পানির চাহিদা না মিটলেও কিছুটা পূরণ হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, খামারবাড়ি, দিনাজপুরের উপপরিচালক প্রদীপ কুমার গুহ জানান, জেলার খানসামা, চিরিরবন্দর, বীরগঞ্জ, কাহারোল ও বোচাগঞ্জে কিছুটা সমস্যা হলেও অন্যান্য উপজেলায় সমস্যা নেই। চলতি রোপা আমন মৌসুমে দিনাজপুরে দুই লাখ ৬০ হাজার ২৬৩ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে রোপণ করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement