২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সাতক্ষীরায় লকডাউনেও বন্ধ নেই এনজিওর কিস্তি আদায়

বিপাকে দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষ
-

ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন চলাকালে ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধ থাকলেও তা মানছেন না সাতক্ষীরার দেবহাটার এনজিওকর্মীরা। লকডাউনের মধ্যে সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে কিস্তি আদায়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা। ফলে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের ঋণ গ্রহীতারা। ঋণের কিস্তি দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
জানা যায়, সাতক্ষীরার দেবহাটার বিভিন্ন এলাকার ছোটোখাট ব্যবসায়ীরা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তাদের ব্যবসার কার্যক্রম চালান। এ ছাড়াও অনেকে এনজিও থেকে সাপ্তাহিক কিস্তিতে ঋণ নিয়ে ইজিবাইক, থ্রি-হুইলার, ভ্যান, মোটরভ্যান, আলমসাধুসহ বিভিন্ন যানবাহন কিনে চালিয়ে তা থেকে আয় করে জীবিকা নির্বাহ করেন ও ঋণের কিস্তি দেন। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে মৃত্যু ও আক্রান্তের হার বাড়তে থাকায় সরকার দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করে। একই সাথে সীমান্ত এলাকা হওয়ায় ঝুঁকিপূর্র্ণ সাতক্ষীরায় আঞ্চলিক ভিত্তিতে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন।
জেলাব্যাপী তৃতীয় মেয়াদে বর্ধিত এ লকডাউনের সময়সীমা রয়েছে আজ ২৪ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত। তবে যে হারে প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন উপজেলায় করোনা সংক্রমণ ছড়াচ্ছে তাতে করে ২৪ জুনের পরও লকডাউন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জেলা প্রশাসনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। দীর্ঘদিন চলমান লকডাউনের কারণে জেলার বেশির ভাগ মানুষ কর্মহারা হয়ে বর্তমানে অভাব অনটনে দিন কাটাচ্ছে। বন্ধ হয়ে গেছে ব্যবসা বাণিজ্য ও দৈনন্দিন আয় রোজগার। এমন পরিস্থিতিতে স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবার পরিজনদের মুখে দুই বেলা দুমুঠো খাবার তুলে দিতে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ। এ অবস্থার মধ্যেও তারা এনজিওর ঋণের কিস্তি দিতে গিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে।
দেবহাটা উপজেলায় ঋণ কার্যক্রম চালানো এনজিওগুলো বর্তমানে সর্বোচ্চ মাত্রায় ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা ও নিয়মিত কিস্তি আদায় করছে। এ ছাড়া সমাজসেবা ও সমবায় অধিদফতর থেকে নিবন্ধন নিয়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা আরো শতাধিক ছোট-বড় এনজিও বেআইনিভাবে করোনাকালেও লকডাউন উপেক্ষা করে চড়া সুদে ঋণের কিস্তি আদায়ের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু বেসরকারি নয়, রয়েছে পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ও আমার বাড়ি আমার খামারের মতো সরকারি একাধিক প্রকল্প থেকেও নিয়মিত কিস্তি আদায় অব্যহত রয়েছে।
এ দিকে গত ১০ জুন লকডাউন চলাকালীন ক্ষুদ্র ঋণের কিস্তি আদায় না করার জন্য নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডি থেকে এনজিও কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে একটি পোস্ট দেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল। অথচ জেলা প্রশাসকের সেই অনুরোধকে দুর্বলতা ভেবে তা মানছে না এনজিওগুলো। এমনকি জেলা প্রশাসনের আরোপিত বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে প্রতিদিন সকাল থেকে দেবহাটা উপজেলার প্রত্যেকটি অলিগলির বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেদার কিস্তি আদায় করে চলেছেন এনজিওর মাঠকর্মীরা। আর এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি ঘুরে বেড়ানোয় ঋণ গ্রহীতা পরিবারগুলোর পাশাপাশি এসব এনজিওর কর্মীরাও মহামারী করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর তীব্র ঝুঁকিতে রয়েছেন।
করোনার এমন দুঃসময়ে উপজেলার ভুক্তভোগী খেটেখাওয়া ঋণগ্রহীতারা যখন তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন, তখন এনজিওকর্মীরা বাড়ি বাড়ি কিস্তি আদায়ের জন্য ধরনা দিচ্ছে, চাপ সৃষ্টি করে কিস্তি আদায় করছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
উপজেলার সখিপুরের আজিজুল হক, পারুলিয়ার রবিউল ইসলাম, কুলিয়ার রুহুল আমিনসহ ভুক্তভোগী ঋণ গ্রহীতারা বলেন, আমরা বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা ও ছোটোখাট গাড়ি কিনে তা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহসহ ঋণের কিস্তি দিয়ে আসছি। কিন্তু করোনাকালীন লকডাউনে ব্যবসা বাণিজ্য প্রায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছি।
লকডাউনে কয়েক সপ্তাহ বাড়ি বসে আছি, কোনো আয়-রোজগার নেই। ধারদেনা করে সংসার চলছে, কিস্তি কিভাবে দেবো ভেবে পাচ্ছি না। লকডাউনের সময় কিস্তি বন্ধ না করলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।
কিস্তি আদায় বিষয়ে উপজেলা এনজিও সমন্বয় গ্রুপের সভাপতি আইডিয়াল পরিচালক ডা: নজরুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসকের ফেসবুক থেকে দেয়া ঋণ আদায় না করা সংক্রান্ত পোস্টটি ১০ দিনেও আমরা দেখিনি।
তাছাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারও আমাদের এ ধরনের কোনো নির্দেশ দেননি। ইউএনও অফিস থেকে শুধু করোনাকালে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে। তবে আমাদের এনজিও নিয়ন্ত্রণকারী সংগঠন মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) থেকে করোনাকালে জোরপূর্বক ঋণের কিস্তি আদায় না করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারপরও যারা স্বেচ্ছায় কিস্তি দিতে ইচ্ছুক তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছি।
এ দিকে দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাছলিমা আক্তার বলেন, লকডাউনে কিস্তি আদায় না করার জন্য ফেসবুকে জেলা প্রশাসকের দেয়া পোস্টের পর এনজিওগুলোর সাথে আমি কথা বলেছি। কিস্তি আদায় বন্ধ রাখতে বলা হলেও তারা গোপনে কিস্তি আদায় করছে। এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement