২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শুভপুর সেতুর জন্য চট্টগ্রামবাসীর দুর্ভোগ আর কতকাল

-

ফেনী, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির লাখ লাখ মানুষের সড়ক পথে যোগাযোগ এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক বন্ধনের সংযোগস্থল ছাগলনাইয়ায় ফেনী নদীর ওপর শুভপুর সেতু নির্মাণের জন্য সোমবার জাতীয় সংসদে অর্থ বরাদ্দের দাবি জানিছেন ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য শিরীন আখতার। জাতীয় সংসদের বাজেট বক্তৃতায় তিন জেলার মানুষের ভোগান্তি নিরসনে শুভপুর-সেতু নির্মাণ ও প্রশস্তকরণের দাবি জানান তিনি।
ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরনো মহাসড়কে ফেনী-চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি জেলার সাথে যোগাযোগের ১২শ’ ফুট দীর্ঘ শুভপুর সেতু দিয়ে ভারী যানবাহন বন্ধ থাকায় কোটি কোটি মানুষ ভোগান্তিতে রয়েছে। ধসে পড়ার আশঙ্কার মধ্যে সড়ক কর্তৃপক্ষ ব্রিজমুখে লোহার পিলার দিলেও ঝুঁকি নিয়ে হালকা যানবাহনের সাথে কিছু কিছু ট্রাকসহ ভারী যানবাহনও চলছে। অপর দিকে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় প্রতিদিন প্রায় ৫০ কিলোমিটার পথ ঘুরে বিকল্প পথে অর্থ ও সময় নষ্ট করে বেশির ভাগ যানবাহনকে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।
এ দিকে ভারত সীমান্তবর্তী হওয়ায় ফেনীর ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরাম, চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই, উত্তর ফটিকছড়ি, খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলায় শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে শুভপুর সেতু গুরুত্বপূর্ণ বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। শুভপুর সেতুটি সংস্কার ও পুননির্মাণের জন্য কয়েক বছর ধরে দাবি জানিয়ে আসছে তিন জেলায় বসবাসকারী মানুষ। দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক গুরুত্বের কথা বিবেচনায় নিয়ে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ফেনী নদীর ওপর শুভপুর সেতু নির্মাণের নকসা প্রণয়ন করে। ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৫২ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ৩৭৪ মিটার দীর্ঘ শুভপুর সেতু নির্মাণ করে। ফেনী নদীর তীরবর্তী ফেনী, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম জেলার কয়েক কোটি মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে শুভপুর সেতুটি গুরুত্বপূর্ণ হলেও বর্তমানে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় কার্যত এক ধরনের স্থবিরতা নেমে এসেছে এ অঞ্চলে। বিশেষ করে পার্বত্য জেলাগুলো থেকে ফেনীসহ দেশের অন্য জেলাগুলোতে চলাচলকারী পণ্যবাহীযান ও যাত্রীবাহীযান চলাচল বন্ধ থাকায় এ স্থবিরতা। দীর্ঘ ৬৯ বছর ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরনো মহাসড়ক হয়ে ব্যবসায়িক ও আর্থিক প্রয়োজনে শুভপুর সেতু দিয়ে সড়ক পথে চট্টগ্রাম বিভাগের যানবাহন চলাচল করেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম নতুন মহাসড়ক চালু হলে ভারী যানবাহনের চাপ কিছু কমে। তবে দুর্ঘটনা বা কোনো কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানযটের সৃষ্টি হলে পুরনো সড়ক হয়ে দূরপাল্লার যানবাহনগুলোকে চলতে হয়। ১৯৭১ সালে শুভপুর সেতু এলাকায় কয়েক দফায় মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তানি বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ হয়। ওই সময় গোলার আঘাতে ব্রিজটি বিধ্বস্ত হয়।
ইস্পাতের পাতের ওপর নির্মিত শুভপুর সেতুতে কয়েক দশক আগ থেকে ফাটলের সৃষ্টি হয়। এক দশক আগ থেকে সেতুর মধ্যখানে ধসে যাওয়া ও কারপেটিং ওঠে যাওয়ায় সেতুতে গর্তের সৃষ্টি হয়। বর্তমানে সেতুর ওপর প্রায় ৭০ ফুট দীর্ঘ তিন ফুট উঁচু করে ইট-বালু দিয়ে সড়কের মতো করে আস্তরণ দেয়া হয়েছে। এতে সেতুর রেলিং আর সড়ক একই লেবেলে চলে আসায় মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। ভারী ও মাঝারি যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা ও প্রতিবন্ধকতা থাকলেও ঝুঁকি নিয়ে চলতে দেখা গেছে। সেতুটি ধসে পড়লে বড় ধরনের প্রাণহানি ও এ অঞ্চলের মানুষের জীবনে দুর্বিষহ দুর্ভোগ নেমে আসার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ফেনী নদীর দুইপাড়ের কোটি মানুষ ও জনপ্রতিনিধিদের দাবির মুখে বর্তমান সরকারের গত দুই মেয়াদে কয়েক দফায় বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে বিষয়টি আলোচনা হলেও অগ্রগতি হয়নি। ফেনী সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে পুরনো সেতুর পাশে একটি নতুন সেতু নির্মাণের জন্য ডিজাইন তৈরি, সয়েল টেস্ট করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা শোনানো হলেও দৃশ্যমান কোনো উন্নতি না হওয়ায় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের প্রতি সাধারণ মানুষ হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল নয়া দিগন্তকে জানান, শুভপুর সেতুর ওপর দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চলছে জানিয়ে সেতুটি নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দের দাবি জানান তিনি। সেতুটি পুননির্মিত হলে এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক জীবন ও সামাজিক ক্ষেত্রে একটি বড় অগ্রগতি হবে বলে জানান তিনি।
ফেনী-১ আসনের এমপি শিরীন আখতার জানান, শুভপুর-সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে গত পাঁচটি বছর সংসদে আলোচনা করেছি। এবার সংসদের বাজেট আলোচনায় সরকারের কাছে ফেনী নদীর ওপর শুভপুর সেতুর জন্য বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন। শুভপুর সেতু নির্মাণের জন্য ব্যক্তিগতভাবে তিনি সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সাথে কথা বলবেন বলে জানান।


আরো সংবাদ



premium cement