২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রুহিয়ায় কৃষকের কার্ড দিয়ে মধ্যস্বত্বভোগীর ব্যবসা

-

কৃষকের কার্ড ব্যবহার করে সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এতে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের জন্য প্রণীত কার্ড সিস্টেম অনেকটাই লোক দেখানো পর্যায়ে চলে এসেছে।
নিয়ম অনুযায়ী কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনবে সরকার। কৃষক যাতে কোনোভাবেই বঞ্চিত না হয়, এ জন্য উপজেলা কৃষি কার্যালয় থেকে কৃষককে কার্ড দেয়া হয়। কার্ডধারীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত কৃষকেরা সরকারি খাদ্যগুদামে নিজের উৎপাদিত ফসল সরবরাহ করতে পারবেন এবং বিক্রির টাকা তাদের ব্যাংক হিসাবে জমা হবে।
একজন কৃষক সর্বোচ্চ তিন টন ধান সরবরাহ করতে পারবেন। তবে কৃষকরা জানান, গুদামে ধান বিক্রি করতে তাদের আগ্রহ কম। কিছু স্থানীয় ব্যবসায়ী গুদামে কৃষকের হয়রানির কথা ছড়িয়ে দিয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে মধ্যস্বত্বভোগীরা কৃষকদের কাছ থেকে কৃষি কার্ড হাতিয়ে নিয়েছেন।
জানা যায়, যখন গুদামে ধান কেনা শুরু হয়, তখন বাজারে প্রতি মণ ধানের দাম ছিল ৮০০ টাকা। সে হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়ে ২০ টাকা। আর সরকারি গুদামের দর প্রতি কেজি ২৭ টাকা। ধানচাষি হাবিবুর রহমান জানান, এবার ৩৬ শতক জমি চাষ করে ৯ মণ ধান পেয়েছেন। খাওয়ার জন্য কিছু ধান রেখে তিনি বাকিটুকু বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন। এর পরও রুহিয়া খাদ্যগুদামের ধান সরবরাহের যে তালিকা, তাতে তার নাম রয়েছে। তিনি তিন টন ধান সরবরাহ করেছেন। তাহলে সরকারি গুদামে এই ধান কে বিক্রি করল? এমন প্রশ্নের জবাবে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এলাকার হাসান আলী নামের এক ব্যবসায়ী আমার সাথে দেখা করে বললেন, তিনি আমার নামে গোডাউনে ধান দেবেন। আমি বললাম, এতে আমার কোনো অসুবিধা হবে কি? তিনি বললেন, না। এরপর তিনি আমার কৃষি কার্ড নিয়ে গেলেন। পরে ধান ঢোকানোর দিন তিনি আমাকে সরকারি গোডাউনে নিয়ে গিয়ে কাগজপত্রে সই করিয়ে নিলেন। পরে আমার হাতে এক হাজার টাকা ধরিয়ে দিলেন।’
আখানাগর ইউনিয়নের কৃষক বিউটি আক্তার এবার ধান চাষ করেছেন এক বিঘা জমিতে। সব ধান তিনি বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন। অথচ খাদ্যগুদামে তার নামে সরবরাহ করা হয়েছে তিন টন ধান। তিনিও জানালেন তার কার্ড নিয়েছে সুমন নামের ধান ব্যবসায়ী। কতটাকা দিয়েছে সেটা তার স্বামী বলতে পারবে। এ রকম ধান সরবরাহের তালিকায় নাম রয়েছে আটোয়ারী উপজেলার বাসিন্দা সেমল চন্দ্র রায়ের। তিনি বলেন, আমার কৃষি কার্ড পরিচিত এক ব্যবসায়ী নিয়ে গেছে। বিনিময়ে আমি কোনো টাকা নেইনি।
রুহিয়া খাদ্যগুদামেরর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-এলএসডি) নাঈম আহমেদ বলেন, ‘আমি কৃষি কার্ডের বিপরীতে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনছি। তা ছাড়া ধান কেনার পর অ্যাকাউন্ট পে চেকের মাধ্যমে কৃষকের নামে তার ব্যাংক হিসাবে মূল্য পরিশোধ করা হয়। এখানে ধান কেনার নিয়মের কোনো হেরফের হয়নি।’
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রাইস উদ্দিন বলেন, ‘কৃষকেরা কিছু টাকার বিনিময়ে ব্যবসায়ীদের কাছে তাদের কৃষি কার্ড হস্তান্তর করে, সে ক্ষেত্রে আমাদের কী করার আছে? কৃষকরা সচেতন না হলে এটা বন্ধ করা যাবে না।’

 


আরো সংবাদ



premium cement