২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাদাই ও আত্রাই নদী খননে ৩২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

১১ বছরেও শেষ হয়নি প্রকল্প
-

পাবনার সুজানগরে তিন বছর মেয়াদি ‘গাজনার বিল সংযোগ বাদাই নদী খনন, সেচ সুবিধা উন্নয়ন ও মৎস্য চাষ’ প্রকল্পের কাজ ১১ বছরেও শেষ হয়নি। দফায় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর পরেও ইনট্যাক চ্যানেলসহ অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণকাজ বাদ রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্প কাজে কোটি কোটি আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, সরকার এ প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ৪১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বহুমুখী প্রকল্প হাতে নেয়। পাউবো, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি), বন বিভাগ, মৎস্য বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ বিভাগকে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের কাজ ২০১০-১১ অর্থবছরে শুরু হয়। প্রকল্পের পাম্পিং স্টেশন নির্মাণ, বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন, নদী খনন, অফিস ভবন, স্টাফ কোয়ার্টারসহ বেশ কিছু অবকাঠামো নির্মাণ এবং বাদাই ও আত্রাই নদী খনন করা হয়েছে। গত ১১ বছরেও সেকেন্ডারি ক্যানেল খনন কাজ শেষ হয়নি। এ ছাড়া ১৭টি হেড রেগুলেটর/চেক স্ট্রাকচার ও দু’টি ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরুই করা হয়নি। এ দিকে মূল প্রকল্প বাস্তবায়নের আগেই শেষ হয়ে গেছে বন বিভাগ, মৎস্য বিভাগ, এলজিইডি ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের কাজ।
জানা যায়, গাজনার বিল বহুমুখী প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ২৭ হাজার হেক্টর জমি পানি নিষ্কাশন এবং ১৭ হাজার হেক্টর জমি সেচ সুবিধা পাবে। এক ফসলি জমি দুই ফসলি এবং দুই ফসলি জমি তিন ফসলিতে রূপান্তরিত হবে। ফসলের উৎপাদন ১৩৮ শতাংশ থেকে ৩০০ শতাংশ বেড়ে যাবে। দেশীয় প্রজাতির মাছের বংশ বৃদ্ধি পাবে। বনভূমি তৈরি করায় পরিবেশ শীতল থাকবে। প্রকল্পটি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত কৃষিপণ্য ও দেশীয় প্রজাতির মাছ উৎপাদন হবে।
বেড়া পানি উন্নয়ন বিভাগের নাম প্রকাশ না করার শর্তে দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে ২০১৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রায় ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৯ কিলোমিটার বাদাই ও আত্রাই নদী খননে প্রায় ৩২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। প্রাক্কলনে শ্রমিক নিযোগ করে নদী খননের কথা বলা হয়েছে। শ্রমিকদের প্রতি হাজার ঘনফুট মাটি কাটার মজুরি ধরা ছিল সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা। শ্রমিক নিয়োগ না করে স্কেভেটর ও চেইন ড্রোজার মেশিনের সাহায্যে নদী খনন করা হয়। মেশিনের সাহায্যে প্রতি হাজার ঘনফুট মাটি কাটতে খরচ হয়েছে মাত্র এক থেকে দেড় হাজার টাকা। অথচ ঠিকাদারদের বিল দেয়া হয়েছে শ্রমিক দিয়ে নদী খননের। মেশিনের সাহায্যে নদী খনন করায় প্রায় ৩২ কোটি টাকা সাশ্রয় হয় এবং এই টাকা ঠিকাদার ও প্রকৌশলীরা পরস্পরের যোগসাজশে ভাগবাটোয়ারা করে নেন।
সূত্র জানায়, ২০১২ সালের মে মাসে একটি অডিট টিম বেড়া পাউবোতে অডিটে আসেন। তারা বাদাই নদী খনন কাজের বিলে আপত্তি তোলেন। তারা মেশিনের সাহায্যে নদী খনন করার পরও কেন শ্রমিক দিয়ে নদী খননের বিল দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে জানতে চান। এ ছাড়া মেশিনের সাহায্যে নদী খননে সাশ্রয়ী প্রায় ১৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তোলে অডিট টিম। পরে বেড়া পাউবোর তৎকালীন কর্মকর্তারা মোটা অঙ্কের টাকা উৎকোচের বিনিময়ে অডিট টিমের সাথে সমঝোতা করে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বাদাই ও আত্রাই নদী খননের প্রযোজনীয় ডকুমেন্ট এখন দুদক হাতে।
প্রকল্প এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মৎস্য বিভাগ গাজনার বিলের চরদুলাই-পোতাজিয়া বিল অংশে ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ব্যয়ে মাছের অভয়ারণ্য করেছে। সেখানে একটি সাইন বোর্ড আছে। সাইন বোর্ডের পেছনে মাঠ এবং তার পাশে ছোট একটি জলাশয় রয়েছে। স্থানীয় মৎস্যজীবীরা জানান, উল্লিখিত স্থানে এখন আর মাছের অভয়াশ্রমের অস্তিত্বই নেই। শুধু এখানেই নয়, গাজনার বিল, বিল গ্যারগা, গাঙভাঙ্গার বিল ও মোস্তার বিল অভয়াশ্রমের একই দশা। পাঁচটি অভয়াশ্রম গড়ে তোলার জন্য মৎস্য বিভাগের জন্য বরাদ্দ ছিল চার কোটি ৯০ লাখ টাকা। পাবনা জেলা মৎস্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা নামমাত্র কাজ শেষ করে চলে গেছেন। এ ছাড়া চার বছর ধরে চৈত্র মাসে বাদাই ও আত্রাই নদী শুকিয়ে যায়। নদী খননের সুফল এলাকাবাসী পাচ্ছে না। এ দিকে গাজনার বিল বহুমুখী প্রকল্পে বনায়নের কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৯ বছর আগে। বনায়ন কাজে বন বিভাগকে বরাদ্দ দেয়া হয় ৮৬ লাখ টাকা। প্রকল্পের নদী, প্রধান সেচ খাল ও সেকেন্ডারি
এ দিকে প্রকল্প বাস্তবায়নের আগেই ভেঙে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে ৩৫ কোটি টাকায় এলজিইডি নির্মিত গাজনার বিলের সাবমার্জিবল সড়ক। সড়কটির দু’পাশ ধসে গেছে এবং উঠে গেছে বিভিন্ন অংশ। সড়কের মধ্যবর্তী অংশে খোয়া উঠে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ। সড়কটি যেহেতু বিলের ঠিক মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে চলে গেছে তাই এর নির্মাণে পাথর ব্যবহারের কথা ছিল। কিন্তু পাথরের পরিবর্তে নিম্নমানের খোয়া দিয়ে নির্মাণ করায় অল্প দিনেই সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
বেড়া পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হামিদ জানান, তিনি এই কর্মস্থলে যোগদানের আগেই নদী ও প্রধান সেচ খাল খনন করা হয়েছে। সে জন্য এ বিষয়ে তিনি কোনো প্রকার মন্তব্য করা সমীচীন বলে মনে করছেন না।


আরো সংবাদ



premium cement
গাজা ইস্যুতে ইউরোপের নীতির সমালোচনায় অ্যামনেস্টি আজ রানা প্লাজা ধসের ১১ বছর গাজা যুদ্ধ নিয়ে প্রতিবাদ : নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৩৩ জন গ্রেফতার বিপজ্জনক মাত্রার অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতি থেকে বাঁচবেন কিভাবে বিয়ের বাজার শেষে বাড়ি ফেরা হলো না চাচা-ভাতিজির প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড সফরে যাচ্ছেন ভারতীয় ৩ সংস্থার মশলায় ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান সাবেক শিবির নেতা সুমনের পিতার মৃত্যুতে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের শোক গণকবরে লাশ খুঁজছেন শত শত ফিলিস্তিনি মা ভারতের লোকসভা নির্বাচনে আলোচনায় নেতাদের ভাই-বোন ও সন্তান সংখ্যা চীনে শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যার শঙ্কা, ঝুঁকিতে ১৩ কোটি মানুষ

সকল