২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনায় মুন্সীগঞ্জের কর্মহীন বেদে পরিবারে মানবেতর জীবন

-

বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ভাসমান বেদে পরিবারগুলো কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। নৌকায় বসবাসকারী পরিবারগুলোর অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটছে। প্রচণ্ড তাপদাহ উপেক্ষা করে ছোট ছোট নৌকায় পরিবারপরিজন নিয়ে কোনো রকমে জীবন যুদ্ধে বেঁচে আছে তারা। সরেজমিন ঘুরে মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান, লৌহজং, শ্রীনগর ও সদর উপজেলায় মিরকাদিম খালে ভাসমান নৌকায় মানবেতর জীবনযাপন করা পরিবারগুলোর দুর্দশা দেখা গেছে।
সদর উপজেলার মিরকাদিম পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডে নদীর পাড়ে ১০ থেকে ১৫টি নৌকা ও ৭১টি ছোট ছোট খুপরি ঘরে প্রায় ৫০ বছর ধরে দেড় শতাধিক পরিবার বসবাস করছে। এ দিকে শ্রীনগর উপজেলা পরিষদসংলগ্ন আলমপর খাল ও শ্রীনগর বাজারসংলগ্ন শ্রীনগর-গোয়ালীমান্দ্রা খালে বেদে সম্প্রদায়ের ৪০ থেকে ৫০টি পরিবার ছোট ছোট কোষা নৌকায় করে বসবাস করছে। এ ছাড়া সিরাজদিখান ও লৌহজংয়ে নৌকা ও ডাঙ্গায় কষ্টের মধ্যে জীবনযাপন করছে কয়েক শ’ বেদে পরিবার। ফেরি করে চুড়ি, ফিতা, কসমেটিকসহ নানা ধরনের মেলামাইন সামগ্রী বিক্রি করা তাদের প্রধান ব্যবসা। কিন্তু সম্প্রতি লকডাউন ও নানা প্রতিকূলতায় এ বছর কোথাও হয়নি বৈশাখী উৎসব। সেই সাথে বসেনি বৈশাখের মেলা। তাই কোনা ধরনের বিক্রি ও আয় না থাকায় বেদে পরিবারগুলো বিপাকে পড়েছে। বিশেষ করে দ্বিতীয় ধাপের লকডাউনে পরিবারগুলো সম্পূর্ণ কর্মহীন হয়ে পড়ে। এ পরিবারগুলো কখনো দু’বেলা খেয়ে আবার না খেয়ে খুব কষ্টে জীবনযাপন করছে।
শ্রীনগর বেদে পল্লীর ষাটোর্ধ্ব রোকেয়া বেগম জানান, করোনায় তারা বেকার হয়ে পড়েছেন। কোনো উৎসব অনুষ্ঠান না থাকায় তাদের বাণিজ্যও নেই। কখনো কখনো তাদের না খেয়েও থাকতে হচ্ছে। কেউ কোনো সাহায্য সহযোগিতা করতে আসেনি। বালিকা সীমা (১০) ও বালক রিমন (১৫) জানায়, তাদের কোনো বাড়িঘর নেই। প্রচণ্ড গরম ও ঝড়-তুফান উপেক্ষা করে দিনরাত ছোট একটি নৌকাতেই তাদের বসবাস। করোনার কারণে তাদের স্কুল বন্ধ। তারা স্থানীয় বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে।
মিরকাদিম বেদে পল্লীর সর্দার গোলাম মোস্তফা জানান, করোনার সময়ে তারা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোনোরকমে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের। করোনায় ব্যবসা বাণিজ্য না থাকায় বিভিন্ন খালে বড়শি ও চাই দিয়ে মাছ ধরেছেন। কিছু মাছ পেলে বিক্রি করে তা দিয়ে চাল-ডাল কিনতে পারেন। তিনি বলেন, এ পরিস্থিতিতে আমাদের কাছে সরকারি বা স্থানীয়ভাবে কোনো খাদ্য সহায়তাও আসেনি।
এ দিকে বৈশ্বিক মহামারীতে জেলার কয়েক শতাধিক বেদে পরিবার ছাড়াও দিনমজুর ও নি¤œ আয়ের মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। এ পরিস্থিতিতে সমাজের বিত্তশালী ও সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন তারা।


আরো সংবাদ



premium cement