২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ভোলাহাটে সেচের অভাবে মরে যাচ্ছে ৩ হাজার বিঘা বোরো ধান

ভোলাহাটে ফসল ক্ষেত ফেটে চৌচির। কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মরা ধান : নয়া দিগন্ত -

চাপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটের বিলভাতিয়ায় ৯ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছেন কৃষক আব্দুর রহিম। নিজস্ব শ্যালোমেশিনে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে সেচ দিয়ে গত বছর থেকে বোরো ধানের আবাদ করছেন তিনি। কিন্তু ভোলাহাট উপজেলার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আশঙ্কাজনকভাবে নিচে নেমে যাওয়ায় সেচ দিতে না পারায় ফাটল ধরেছে জমিতে। অবশেষে গর্ত করে তার শ্যালোমেশিনটি ১০-১২ ফুট নিচে নামিয়ে পানি ওঠানোর চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি।
কৃষক আব্দুর রহিমের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, গত বছর ৯ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছিলাম। সে বছরও পানির সমস্যা হয়েছিল। বৃষ্টির পানিতে ধান বাঁচাতে পেরেছিলাম। এ বছর এখন পর্যন্ত বৃষ্টি নেই। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর গত বছরের চেয়ে নিচে নেমে যাওয়ায় শ্যালো মেশিনে পানি উঠছে না। সমতল থেকে ১০-১২ ফুট মাটির নিচে শ্যালো মেশিন বসিয়েও পানি উঠছে না। শেষ পর্যন্ত আম গাছের বিষ স্প্রে করার মেশিনের সাহায্যে ড্রামে পানি নিয়ে এসে ধানে স্প্রে করছি। তিনি বলেন, পাশের বিশু নামের এক কৃষকের শ্যালো মেশিনে পানি ওঠা বন্ধ হওয়ায় তিনি জমি ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি দাবি করেন এলাকায় শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে যেসব জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে সে সব জমির ধান সেচ সঙ্কটে মরে গেছে। তিনি বলেন, প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। বোরো চাষি তৈয়নুর বলেন, পানি নিচে নেমে যাওয়ায় শ্যালো মেশিনে পাতাল থেকে পানি ওঠে না। যে কারণে হাজার হাজার বিঘা জমির ধান মরে গেছে। মাঠের সব শ্যালো মেশিন বন্ধ হয়ে গেছে। কৃষকেরা মরা ধান কেটে কেটে গরু মহিষকে খাওয়ানোর জন্য বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। কৃষক মইনুর জানান, শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি উঠছে না। যে কারণে ধান মরে গেছে। তিনি বলেন, আমার স্কিমে ৩০ বিঘা জমিতে বরো ধান চাষ করেছিলাম। পানি না ওঠায় সব ধান মরে গেছে। এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করতে শ্রমিক, সার-বিষ, হালচাষসহ খরচ হয়েছে আট হাজার টাকা। আড়াই হাজার বিঘা জমিতে সেই হিসেবে দুই কেটি টাকার ওপরে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে তিনি জানান। মইনুর আরো বলেন, শ্যালো মেশিনে ভূগর্ভস্থ পানির সমস্যা হলেও বৈদ্যুতিক সংযোগের মাধ্যমে সেমিডিপ স্থাপন করলে এ সব জমিতে পানি সঙ্কট থাকবে না। তিনি বলেন, বৈদ্যুতিক সংযোগ অনেক ব্যয়বহুল হওয়ায় কৃষকেরা সেমিডিপ স্থাপন করতে পারছেন না। তারা সরকারি উদ্যোগে আড়াই হাজার বা তিন হাজার বিঘা জমিতে ধান চাষ করতে বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমে সেমিডিপ স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।
এ দিকে কৃষক তোফাজ্জুল বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগ পেলে কৃষকেরা কোটি কোটি টাকার ধান ঘরে তুলতে পারবেন। তাই বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে সেমিডিপ স্থাপনের দাবি করেছেন তিনি। তিনি বলেন, একটি পোল নিতে কৃষককে ৫০ হাজার টাকা গুণতে হচ্ছে। গরিব কৃষকের পক্ষে এত টাকা খরচ করা সম্ভব না হওয়ায় ওই সব এলাকায় বিদ্যুৎসংযোগ দিয়ে সেমিডিপ বসানো সম্ভব হচ্ছে না। এলাকার কৃষকেরা হাজার হাজার বিঘা জমির ধান বাঁচাতে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন। এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সেলিম রেজা জানান, শ্যালো মেশিনের পরিবর্তে বিদ্যুৎ চালিত অগভীর নলকূপ বসালে ধানের সমস্যা হবে না।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, বর্তমানে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে অনেক জায়গায় কৃষকেরা হতাশ হয়ে পড়ছেন। তিনি বলেন, বিশাল বড় বিলভাতিয়া খনন করলে পানি সঙ্কট হবে না। সংরক্ষিত পানি থেকে জমি চাষ করে অল্প ব্যয়ে বেশি ফলন পাবেন কৃষকেরা। তিনি বলেন, ভোলাহাটে মোট ৩০০ ডিজেল চালিত মেশিন রয়েছে। বৃষ্টি হলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কিছুটা ওপরে উঠবে। নয়তো বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে কোনো সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। উপজেলার শ্যালো মেশিন মালিক ও সচেতনমহল দ্রুত শ্যালো মেশিন এলাকায় বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে বিদ্যুৎ চালিত সেমিডিপ স্থাপন করে এলাকার উন্নয়ন করার দাবি জানিয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement