২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফুলবাড়ীতে মহিলা শ্রমিকদের দুর্দিন

-

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় বর্তমানে মিল চাতাল রয়েছে ২৩১টি। তন্মধ্যে প্রায় ১৬০টি মিল চাতাল এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি মিল চাতালগুলোতে কাজ একেবারেই কমে গেছে। ফলে এসব চাতালে নিয়মিত কাজ করা মহিলা শ্রমিকদের এবারো ঈদ আনন্দ বলে কিছু নেই।
এ দিকে মিল চাতালগুলো পর্যায়ক্রমে অটোরাইস মিলে রূপান্তরিত হওয়ায় মহিলা শ্রমিকদের কাজও ক্রমেই কমে যাচ্ছে। চলমান করোনাকালীন পরিস্থিতি কাজের ক্ষেত্র আরো কমিয়ে দিয়েছে।
ধানের জেলা বলে খ্যাত দিনাজপুরের অন্যতম উপজেলা ফুলবাড়ীতে মিল চাতালের ব্যবসা একসময় ছিল জমজমাট। মাত্র ৪-৫ বছর আগেও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আগ্রহ ছিল। ৪-৫ বছরের ব্যবধানে এলাকার প্রায় ১৫০-১৬০টি মিল চাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। যে মিল চাতালগুলো চালু আছে সেগুলোতেও পর্যাপ্ত উৎপাদন হচ্ছে না। এসব মিল চাতালে নারী শ্রমিকরাই বেশি কাজ করে থাকে। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নারী শ্রমিকরা শ্রম দিলেও মজুরি পায় মাত্র ১৫০-২০০ টাকা। তবুও কাজের অভাবে এলাকার নারী শ্রমিকরা শ্রম বিক্রি করে থাকে। অনেক চুক্তিভিত্তিক শ্রমবিনিময় করে থাকে। অর্থাৎ ধান হাউজে ভিজানো থেকে শুরু করে ধান ভাঙিয়ে চালে পরিণত করা পর্যন্ত মণপ্রতি একটি নির্দিষ্ট রেটে অনেক মিলে শ্রমিকদের কাজ করানো হয়। এ ক্ষেত্রে বিরূপ আবহাওয়ার জন্য কাজে ব্যাঘাত ঘটে বিধায় দৈনিক শ্রম বিক্রিতেই শ্রমিকরা বেশি ঝুঁকে পড়ে। এবার ফুলবাড়ী এলাকায় মিল চাতালগুলোতে রমজান শুরুর আগ থেকেই ধানের আমদানি কম হওয়ায় শ্রমিকদের কাজ কমে যায়। ফলে দৈনিক কাজ না পেয়ে শ্রমিকরা সপ্তাহে ২-৩ দিন কাজ করে থাকে। এতে তাদের আয় ক্রমেই কমে যাচ্ছে।
রমজান মাসে এমনিতেই দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি পায় ও খরচ বেশি হয়। কাজ কমে যাওয়ার জন্য আয় কম হওয়ায় রমজানের খরচ চালাতেই চাতাল শ্রমিকরা হিমশিম খাচ্ছেন। সামনে রোজার ঈদ তাদের কাছে আনন্দ নিয়ে আসছে না। সন্তানের নতুন জামা দেয়া তো দূরের কথা তাদের মুখে এক চামুচ মিষ্টি সেমাই তুলে দিতে পারবেন কি না সে আশঙ্কা আছেন নারী শ্রমিকরা।
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র জাতীয় পরিষদ সদস্য ও দিনাজপুর চাতাল শ্রমিক সহায়তা কমিটির আহ্বায়ক এস এম নুরুজ্জামান বলেন, দিনাজপুর অঞ্চলের চাতাল শ্রমিকদের চরম দুঃসময় যাচ্ছে। কাজ কমে যাওয়ায় ও নারী শ্রমিকদের ন্যায্য পারিশ্রমিক না দেয়ায় তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে না।
চাতাল শ্রমিক রেহেনা, আফরোজা, বানু, আউলি, আক্তারা, আঞ্জু, আকলিমাদের মতো অনেক চাতাল শ্রমিক আক্ষেপ করে বলেন, সারা বছর খেয়ে না খেয়ে দিন কাটলেও সেসব মনে থাকে না। কিন্তু বছরের একটি খুশির দিনে ছেলে মেয়েদের মুখে খুশি না দেখলে বুকটা ফেটে যায়। এবার রমজানের আগের থেকেই চাতালগুলোতে কাজ কমে যাওয়ায় আমাদের পরিবারে অভাব যেন আরো জেঁকে বসেছে। এ দেশের গরিবদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন নেই বলে তারা আক্ষেপ প্রকাশ করেন।


আরো সংবাদ



premium cement