১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঝিনাইদহে ১২ নদীর অস্তিত্ব বিপন্ন

-

ঝিনাইদহের ১২ নদনদীর অস্তিত্ব বিপন্ন হতে চলেছে। অনাবৃষ্টি, প্রচণ্ড খরা, বর্ষাকালে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়া, নদী ভরাট, অবৈধ দখলদারী ও দীর্ঘকাল খনন না করায় জেলার এককালের খরস্রোতা এসব নদী মরা খালে পরিণত হয়েছে। এখন প্রভাবশালী ভূমিদস্যুদের দখলে এসব নদীর শত শত একর জমি। নদীর বুকজুড়ে এখন চলছে চাষাবাদ। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে দখল। অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় এ অঞ্চলের পানিসম্পদ উন্নয়নে আজো কোনো প্রকল্প হাতে নেয়া হয়নি। দখলদার চক্র পুকুর খনন ও ফসল চাষ করে এসব নদীর অস্তিত্ব বিলীন করে চলেছে।
ঝিনাইদহ সদর, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর, শৈলকুপা ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত নবগঙ্গা, বেগবতি, ফটকি, চিত্রা, কপোতাক্ষ, ভৈরব, ইছামতি, কোদলা, গড়াই, কুমার, কালী ও ডাকুয়া নামে এসব নদীর অস্তিত্ব আজ বিলুপ্তপ্রায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ফারাক্কার প্রভাবে দীর্ঘকাল পলি জমে এসব নদীর উৎসমুখ ভরাট হয়ে গেছে। শুধু গড়াই নদীর অস্তিত্ব কিছুটা টিকে আছে। তবুও শুষ্ক মৌসুমে গড়াইয়ের বুকজুড়ে দেখা যায় ধু-ধু বালুচর। অথচ গড়াই নদীর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মিঠা পানির উৎস। পদ্মা থেকে উৎপন্ন হয়ে ভাটিতে মধুমতি নাম নিয়ে সাগরে মিশেছে। গড়াইয়ের ৯০ কিলোমিটার বুকজুড়ে এখন বালুচর। পুনঃখনন অতি জরুরি বলে দাবি করেছেন পরিবেশবাদীরা।
ঝিনাইদহের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বেশির ভাগ নদনদীর পানির উৎস ছিল পদ্মার প্রধান শাখা মাথাভাঙা। কিন্তু নদীর উৎসমুখে জেগেছে বিশাল চর। ফলে শুষ্ক মৌসুমে পানিপ্রবাহ একেবারেই থাকে না। মাথাভাঙা থেকে কুমারের উৎপত্তি। কুমার চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভাটিতে মধুমতি নদীতে মিশেছে। অনেক আগেই মাথাভাঙা থেকে কুমারের পানি পাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।
ডাকুয়া ও কালী নদী দিয়ে গড়াই থেকে কুমার নদী পানিপ্রবাহ পেত। কিন্তু ষাটের দশকে জিকে প্রকল্প বাস্তবায়নকালে কালী ও ডাকুয়া নদীর উৎস মুখে আড়ি বাঁধ দেয়া হয়। ফলে কুমার নদীর পানির উৎস বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে কুমার মরা নদী। ঝিনাইদহ থেকে মাগুরা জেলার ওপর দিয়ে নবগঙ্গা নদী মধুমতিতে মিশেছে। কিন্তু সংস্কারের অভাবে নদীর উৎস মুখ ভরাট হয়ে নবগঙ্গার পানিপ্রবাহ বন্ধ। নদীর বুকে এখন শুধু চর। জেলার আরেক নদী বেগবতির বেগ আজ একেবারেই নেই। কথিত আছে, মোগল সেনাপতি মানসিংহ এ নদীপথে রাজমহলে যেতেন। অপর নদী ইছামতির উৎস ভারতে। মহেশপুর উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত এ নদীতে এখন বর্ষা মৌসুমেই পানি থাকে না। মহেশপুরের অপর সীমান্ত নদী কোদলার অবস্থাও শোচনীয়। নদীর অনেক স্থান ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে দখল করে নিয়েছে একটি চক্র। তাতে পুকুর খনন ও বাড়ি নির্মাণ পর্যন্ত হয়েছে।
ভৈরবও আজ মরা নদ। ভৈরবের গর্জন আর শোনা যায় না। এ নদীতে এক সময় স্টিমার চলত বলে ইতিহাস আছে। কলকাতার সাথে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ মাধ্যম ছিল এই ভৈরব। ভৈরব মরে গেলেও শুধু যশোরের নওয়াপাড়ায় এর অস্তিত্ব দেখা যায়। জেলার অন্যতম নদী চিত্রা। মাথাভাঙা থেকে এর উৎপত্তি। কিন্তু ক্রস ড্যাম নির্মাণের ফলে এর পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ঝিনাইদহের চিত্রা নদীও মৃতপ্রায়। জেলার আরেকটি নামকরা নদ কপোতাক্ষ। দর্শনা থেকে মহেশপুরের খালিশপুর হয়ে কোটচাঁদপুরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত কপোতাক্ষ নদের অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। ভূমিদস্যুরা নদী দখল করে ভরাট করায় দিন দিন এ নদ অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। অথচ বাংলা সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত এই কপোতাক্ষ নদের পাড়ে বসে জীবনের অনেক বন্দনা রচনা করেছিলেন। পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এ অঞ্চলে পানিসম্পদ উন্নয়নে নদীগুলো খনন অতি জরুরি বলে মনে করেন পরিবেশবাদী ও পানি বিশেষজ্ঞরা।


আরো সংবাদ



premium cement