সিংগাইরে মাটিখেকোদের দৌরাত্ম্য থামছেই না
- সোহরাব হোসেন সিংগাইর (মানিকগঞ্জ)
- ০৫ মে ২০২১, ০১:৪৭
আঁধার ঘনিয়ে এলেই পাল্টে যায় মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার চিত্র। বিস্তীর্ণ ফসলি জমি পরিণত হয় ইটভাটার নগরীতে। দেখা মেলে একের পর এক ট্্রলি। চলাচলের কাঁচা-পাকা রাস্তাগুলো দিনের চেয়েও বেশি ব্যস্ত হয়ে ওঠে তখন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমির বুকে চলে ভেকু নামের হায়েনার থাবা। আবাদি কৃষি জমিতে ভেকু বসিয়ে মাটি কেটে ব্যবসা করছে ভূমিখেকোরা। এতে শত শত বিঘা তিন ফসলি জমি শ্রেণী পরিবর্তিত হয়ে পরিণত হয়েছে পুকুর-জলাশয়ে। রাতে ভেকু বসিয়ে ফসলি জমিগুলো কেটে সাবাড় করা হয়। আর সে মাটি বহন করা হয় কাঁচা-পাকা গ্রামীণ সড়ক দিয়ে। মাটি ভর্তি ভারী ট্্রলি দ্রুত বেগে চলায় রাস্তাগুলো ক্ষত-বিক্ষত হয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের আপত্তির থাকার পরও কিছুতেই থামছে না অবৈধ মাটি কাটা চক্রের দৌরাত্ম্য।
সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে উপজেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী এ অঞ্চলে ৮৬টি ইটভাটা সচল ছিল। এসব ভাটার বেশির ভাগেরই ২০২০ সালে লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়। বিভিন্ন কারণে বন্ধ হয়ে যায় ২০টি ইটভাটা। এর মধ্যে উচ্চ আদালত কর্তৃক ঢাকার পার্শ¦বর্তী জেলাগুলোর ইটভাটা বন্ধের নির্দেশনা এলেও এ উপজেলায় বন্ধ হয়নি কোনো ইটভাটা। বেশির ভাগ ভাটাই বিভিন্ন অজুহাতে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আর ইট তৈরির প্রধান উপকরণ মাটির জোগান দিতে গিয়ে ফসলি জমি কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে জড়িতদের জেল জরিমানা করা হলেও থামানো যাচ্ছে না এ মাটিকাটা। দিনের পরিবর্তে মাটি ব্যবসায়ী ও ভাটার মালিকেরা মাটি কাটার জন্য এখন রাতের আঁধারকেই বেছে নিয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, চান্দহর ইউনিয়নের ঢালিপাড়া গ্রামের মাটি ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক রিফায়েতপুর চক থেকে মাটি কাটার দায়ে সম্প্রতি জেল খেটে বের হয়ে পুনরায় বেপরোয়াভাবে ফসলি জমির মাটিকাটা অব্যাহত রেখেছেন। তিনি প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছেন সব কিছু ম্যানেজ করেই মাটি কাটা হচ্ছে। একই এলাকার তোফাজ্জল, রহিম, শামছুল, মান্নান ও ফয়সালও অবৈধভাবে এ মাটির ব্যবসা করছেন। চারিগ্রাম ইউনিয়নের উত্তর জাইল্যা গ্রামের মাটি ব্যবসায়ী ফরশেদ আলমকে কিছুদিন আগে খৈয়ামুড়ি ভুলতার বিল চক থেকে ফসলি জমির মাটিকাটার দায়ে ভেকু জব্দ করে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহের নিগার সুলতানা। তারপরও থেমে নেই তার মাটির ব্যবসা।
উপজেলার চারিগ্রাম মৌজার এএইচএম ইটভাটার দক্ষিণ পাশের চকে ফসলি জমির মাটি কাটছেন ভাটা মালিক ও জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুল আলীম। তিনি ওই চকের জমির মালিক বালো, মাহাম, জিন্নাত আলী, নইদা ও তার ভাইয়ের প্রায় তিন বিঘা ছাড়াও পাশের আরো দুই বিঘা জমির মাটি কেটে তার ইটভাটায় নিচ্ছেন। স্থানীয়রা জানান, আব্দুল আলীম সাহরাইল-চারিগ্রাম বালিয়াডাঙ্গী এলাকায় রাস্তা সংলগ্ন পানি প্রবাহের খাল বন্ধ করে তার ভাটার দখলে নিয়েছেন। ইতঃপূর্বে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে জেলা প্রশাসক খালের মাটি অপসারণের নির্দেশ দেন। সে নির্দেশ অনুযায়ী মাটি কিছুটা অপসারণ করা হলেও বেশির ভাগই রয়েছে ভরাট অবস্থায়। উল্টো স্থানীয় সাংবাদিকদের দেয়া হয়েছে হুমকি। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ টিপু সুলতান স্বপন বলেন, এভাবে ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা হলে আগামীতে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিবে। সেই সাথে আগামী এক শ’ বছরের মধ্যে কোনো আবাদি জমি বলতে থাকবে না।
সিংগাইর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহের নিগার সুলতানা বলেন, ফসলি জমি থেকে মাটিকাটা বন্ধে অভিযান অব্যাহত আছে। রাতে লজিস্টিক সাপোর্ট কম পাওয়ায় অভিযান পরিচালনায় বিঘœ ঘটছে বলেও জানান তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা