২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পানি শূন্যতায় জিকে সেব পাম্প বন্ধ, ফেটে গেছে বোরো জমি

ভারত কর্তৃক পদ্মার পানি প্রত্যাহার
-

পদ্মায় পানির স্তর নেমে যাওয়ায় কৃষি জমিতে পানি সরবরাহ বন্ধ রেখেছে দেশের বৃহৎ গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পে। এতে বোরো মৌসুমে ধানের জমিতে সেচ দেয়া নিয়ে দিশেহারা হাজার হাজার কৃষক। সেচ কবে পুনরায় চালু হবে তা কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না তবে পদ্মায় পানির প্রবাহ না বাড়লে পুরায় সেচ চালুর কোনো সম্ভবনা নেই বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
কুষ্টিয়া , চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলাব্যাপী এ প্রকল্পের আওতায় বোরো চাষিদের সেচের মাধ্যমে এই প্রকল্পের পানি। শেষ মুহূর্তে এসে জমিতে পাম্প মেশিন বসিয়ে পানি সরবরাহ সম্ভব নয় বলে চাষিরা জানিয়েছেন। জিকে সেচ প্রকল্প সূত্রের জানা যায়, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার এক লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সেচ কার্যক্রম চলে এই প্রকল্পের মাধ্যমে। পদ্মার পানির ওপর নির্ভর এই সেচ প্রকল্পটি। এ জন্য পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে অন্তত ৩৪ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহ প্রয়োজন। চলতি মাসের গত ১৮ তারিখ থেকে পদ্মা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। গত বুধবার (২১ এপ্রিল) হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি ২৪ হাজার কিউসেক। জিকে সেচ প্রকল্পে পানি সরবরাহ চালু রাখতে প্রয়োজন ৩৪ হাজার কিউসেক। এ কারণে পানি না পেয়ে বন্ধ হয়ে গেচে জিকে সেচ প্রকল্পের পানি সরবরাহ।
এ দিকে প্রচন্ড রোদে জমিতে পানি না থাকায় শুকিয়ে গেছে জিকে সেচ প্রকল্পের আওতায় কুষ্টিয়ার মিরপুর-ভেড়ামারা বোরো ধান চাষিদের ক্ষেত। বেশির ভাগ ধানের জমিতেই পানির প্রয়োজন। পানি না থাকায় চিন্তায় পড়েছেন প্রকল্পের আওতাধীন সব কৃষকেরা।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কবুরহাট গ্রামের আবদুল জলিল বলেন, দুই বিঘা বোরো ধানের আবাদ করেছি। জিকে সেচ প্রকল্পে পানির সুবিধার কারণে এ্ই মাঠে সেচ পাম্প নেই। জিকে সেচ প্রকল্পের পানিতেই সেচ চলে। ক্যানেলে পানি যদি না আসে তাহলে ধান নষ্ট হয়ে যাবে।
কুষক মুসলিম আলী জানান, পানি না পেলে তো ধানই হবে না। আর হুট করে ক্যানেলে পানি বন্ধ, এখন তো মেশিন দিয়ে পানিও নিতে পারব না। কারণ পাইপ দিয়ে পানি নেয়া ঝামেলা, সারা বছর না নিয়ে দুই দিনের জন্য তো আর মেশিনের মালিক পানি দিতে চাইবে না। জমিতে পানির সঙ্কটের কথা উল্লেখ করে তিনি জানান ধানের জমি একদম ফেটে গেছে। এখনই একান্ত পানি প্রায়োজন।
এ বিষয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেন জানান, এই অঞ্চলে বোরো ধানের যে পর্যায়ে রয়েছে, তাতে পর্যাপ্ত পানির প্রয়োজন। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি যে, আপনারা নিকটস্থ স্যালো ইঞ্জিন চালিত পাম্প অথবা বৈদ্যুতিক মোটর কিংবা যেকোনো সেচ পাম্পের মাধ্যমে জমিতে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করবেন। যাতে করে বোরো ধানের জমিতে পানির অভাবে ধানের ফলনের কোনো ব্যাঘাত না ঘটে।
জিকে সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, বুধবার সকাল থেকে একই সাথে বন্ধ হয়ে যায় ১২টি বিভিন্ন ধরনের স্বয়ংক্রিয় সম্পুরক পাম্প। পাম্প হ্উাজের ইনটেক চ্যালেনে এখন মাত্র ৪ মিটার আরএল পানি পাওয়া যাচ্ছে। পানি সরবরাহ করতে ইনটেক পানি থাকতে হবে ১৪ দশমিক পাঁচ মিটার আ্রএল। পানি সরবরাহ চার দশমিক পাঁচ মিটার আরএলের নিচে নামলে পাম্প মেশিনে পানি তোলা যায় না। জিকে প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, এ বছর বৃষ্টি কম। বৃষ্টি হলে নদীতে পানির প্রবাহটা অব্যাহত থাকে। তখন পানি প্রত্যাহার হয়ে গেলেও পদ্মায় বৃষ্টির নাব্যতা থেকে জিকে পানি টেনে নিতে পারে। কিন্তু এবার তেমনটি হচ্ছে না। দুই –এক দিনের মধ্যে পদ্মার পানি বৃদ্ধি পেলে হয়তো সেচ পাম্প চালানো সম্ভব হতে পারে।
কুষ্টিয়া কৃষি সম্পসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক শ্যামল কুমার জানান, বোরো চাষিদের ধানে পানির প্রয়োজন রয়েছে। তবে আগাম ধানের জমিতে পানি না থাকলেও চলবে। এই সময় মাটি ফেটে গেলে ফলন কমে যেতে পারে এবং ধানের ক্ষতি হতে পারে।v


আরো সংবাদ



premium cement