২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মেহরপুরে বিএডিসির ধানে ব্লাস্ট রোগ : হতাশ কৃষক

-

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) দেয়া ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষ করে লোকসানের শিকার হচ্ছেন শত শত কৃষক। মেহেরপুর জেলায় যেখানেই রয়েছে আটাশ জাতের ধান সেখানেই ব্লাস্ট ভাইরাসের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ আবাদি ধান নষ্ট হয়ে গেছে।
মেহেরপুর কৃষি বিভাগ বলছে ব্রি-২৮ এবং ব্রি-৮১ জাতের বোরো চাষে কৃষকদের অনৎসাহিত করা হলেও বিএডিসির পরামর্শে তাদের চুক্তিবদ্ধ চাষিরা ওই ধানের চাষ করেছে। মেহেরপুর সদর উপজেলার রাজনগর গ্রামের প্রবেশ মুখেই রাস্তার বাম পাশে ধান ক্ষেতে বিএডিসির একটি সাইনবোর্ড দেয়া রয়েছে। মেহেরপুর কন্ট্রাক্ট প্রোয়ার্স জানের রঘুনাথপুর রকের মুচিখালি স্কিম এটি। ওই স্কিমে ব্রি-২৮ জাতের প্রত্যায়িত বজি নিয়ে মোট ১২ একর জমিতে ধান চাষ করা হয়। দূর থেকে ধান ক্ষেত দেখে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে সোনালি রঙ ধারণ করে ধান পেকে উঠেছে। ধান ক্ষেতে নেমে দেখা যায় প্রায় ৮০ ভাগ ধান ব্রাস্ট ভাইরাসের শিকার। ধানের শীষ পুরোটাই শুকিয়ে গেছে।
ব্লকের চাষি রাজনগর গ্রামের হাতেম আলী জানান, স্কিম লিডার বাদশা মিয়া এক হাজার ২০০ টাকা নিয়ে তাকে ২০ কেজি বিএডিসির প্রত্যায়িত ব্রি-২৮ জাতের বীজ সরবরাহ করে। যা দিয়ে তিনি দুই বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছেন।
স্কিম লিডার বাদশা মিয়া জানান, তার স্কিমে ১২ এক ধান চাষ হয়েছে। তবে তিনি নিজে চাষ করেছেন মাত্র দুই বিঘা। বাকি ধান চাষ করেছেন অন্য চাষিরা। বিএডিসি তা স্কিম থেকে ৬৫ কেজি ওজনের ৮০ বস্তা ধান কিনবে। কিন্তু স্কিমের আওতায় চাষ করা কোন কোনো চাষি তার কাছে ধান বিক্রি করলেও অনেকেই তা করেন না। তখন অন্য চাষি বা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ধান কিনে বীজের জন্য বিএডিসির কাছে সরবরাহ করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, যেসব চাষিরা একটু দেরিতে ধানের চারা রোপণ করেছেন তাদের জমিতে তেমন একটা ভাইরাস লাগেনি।
মেহেরপুর সদর উপজেলার আমকুপি, রাজনগর, উজলপুর, ঝাউবাড়িয়া, তেরঘারিয়া, শোলমারী, রুদ্রনগর, গাংনী উপজেলার ধানখোলা, খড়মপুর, মহিষাখোলা, পাকুড়িয়া, নিত্যানন্দপুর, চিৎলা মাঠসহ অন্যান্য মাঠে এ ভাইরাসের আক্রমণ দেখা দিয়েছে বলে চাষি ও কৃষি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক স্বপন কুমার খাঁ জানান, আমরা খবর পেয়ে বিভিন্ন মাঠ পরিদর্শন করেছি। বিক্ষিপ্তভাবে কোনো কোনো মাঠে বিশেষ করে ব্রি-২৮ ও ব্রি-৮১ জাতে ব্রাস্ট ভাইরাসের প্রাকোপ দেখা গেছে। তবে যারা সুষম সার প্রয়োগ করেছে তাদের তেমন সমস্যা দেখা যায়নি। তিনি আরো জানান, ব্রি-২৮ জাতটি ১৯৯৪ সালে উদ্ভাবিত। বয়স হওয়ায় এ জাতটির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকাংশে কমে গেছে। তাই ব্রি-ধান-২৮ চাষ না করার জন্য চাষিদের পরামর্শ দিয়েছি। পাশাপাশি নতুন উদ্ভাবিত ব্রি-৫৮, ব্রি-৬৬, ব্রি-৭৪, ব্রি-৮৪, ব্রি-৮৬, ব্রি-৮৮, ব্রি-৮৯, ব্রি-৯২ ও ব্রি-৯৬ জাতের ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করেছি। কিন্তু বিএডিসি আলাদা একটি প্রতিষ্ঠান। আটাশ ধানের চাহিদা থাকায় তারা তাদের চুক্তিবদ্ধ চাষিদের বীজ সরবরাহ করে চাষ করিয়েছে। এবারের আটাশ জাতের ধান থেকে যদি বীজ সংগ্রহ করা হয় তাহলে আদামী বোরো মৌসুমে ব্লাস্টের আক্রমণ আরো বেড়ে যেতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement