১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনা নয়, নিম্ন আয়ের মানুষের আতঙ্ক লকডাউন

-

দেশজুড়ে করোনা পরিস্থিতির কারণে চলমান লকডাউন আরো বাড়ানোয় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। অন্য দিকে লকডাউনে রুজি-রোজগার বন্ধ। জীবন-জীবিকা নিয়ে তাই চিন্তায় পড়েছেন নি¤œ আয়ের মানুষ। তারা বলছেন, নি¤œ আয়ের মানুষ করোনাকে ভয় পায় না, ভয় পায় লকডাউনকে। চলতি লকডাউনের কারণে এমনিতেই বেশ কিছু দিন মানবেতর দিন পার করছেন তারা। এর মধ্যে আরও সাত দিনের লকডাউন বাড়ানোর ঘোষণা তাদের কাছে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে। চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহ অঞ্চলের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ জানান, জমানো টাকা যা ছিল, তা দিয়ে ও ধার করে লকডাউনের সাত দিন পার হয়েছে। আরও সাত দিন লকডাউন বাড়ানোয় সামনের দিনগুলো কীভাবে পার করবেন, তা ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছেন না। এখন পর্যন্ত কেউ নাকি সাহায্যেরও হাত বাড়ায়নি।
চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস করা বাসচালক, কন্ডাক্টর, অটোচালক, দিনমজুরসহ খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
চুয়াডাঙ্গার বাসচালক নিয়ামত আলী বলেন, ‘লকডাউনে অনেক চিন্তার মধ্যে দিন পার করেছি। কীভাবে চলব পরিবার-পরিজন নিয়ে। আমরা বাসচালকরা ‘দিন আনি দিন খাই’। আমাদের জমানো টাকা থাকে না। এ জন্য সমস্যায় পড়তে হয়। আরও সাত দিন লকডাউন বাড়ল। এখন কী খাব, কী করব কিছুই মাথায় আসছে না।’
অটোচালক সোহান বলেন, ‘কঠোর লকডাউনে প্রথম দুই দিন অটো চালিয়ে ছিলাম। কিন্তু পুলিশ আটকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করেছে। যাকে বলে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। এমনিতেই ভাড়া নেই, তার ওপর আবার জরিমানা গুনতে হলো। জমানো যা ছিল, তাও শেষ। এখন পরিবার নিয়ে কী খাব, সেটাই চিন্তা করছি।’
দিনমজুর আহম্মদ আলী প্রতিদিন সকালে চুয়াডাঙ্গা চৌরাস্তার মোড় থেকে শ্রম বিক্রির জন্য হায়ারে যান। ক’দিন ধরে সকালে আসলেও, লকডাউনে কাজ না থাকায় ফিরে যেতে হচ্ছে। দুঃখভারা মুখ নিয়ে তিনি বলেন, ‘কারো কাছে হাত পাততে পারি না। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সারাফাত হোসেন জানান, এক সপ্তাহ লকডাউন বাড়িয়ে আমাদের দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চলতি লকডাউন পার করতেই আমরা কাহিল হয়ে পড়েছি। সামনের এই এক সপ্তাহ কীভাবে চলবো তা নিয়ে খুব চিন্তায় আছি।
এই লকডাউনে মহাদুর্বিপাকে সবচেয়ে বিপন্ন অবস্থায় পড়েছে দৈনিক খেটে খাওয়া হতদরিদ্র মানুষ। অনাহারে, অর্ধাহারে নিত্যজীবন কাটানো এক দুঃসহ করুণ অবস্থা তাদের। গণপরিবহন চালক, রিকশা, ভ্যান ও অটোচালকরাও পড়েছে সঙ্কটাপন্ন পরিস্থিতিতে। প্রতিদিনের আয় না থাকায় জমাকৃত টাকা খরচ করেও তারা পার পাচ্ছেন না। এমন দুরবস্থায় সরকারি অর্থ ও খাদ্যপণ্য সহায়তা নেই। একজন নি¤œ আয়ের দিন আনা, দিন খাওয়া মানুষের পক্ষে বসে থেকে এক সপ্তাহ পার করা খুব দুর্বিষহ ব্যাপার। যেহেতু এক সপ্তাহ পার হয়েছে, আবার এক সপ্তাহ লকডাউন বাড়ানো হয়েছে। এখন নি¤œ আয়ের মানুষের ঘরে ঘরে খাদ্যসঙ্কট তীব্রভাবে দেখা দিয়েছে। তাদের দাবি, এই দুঃসময়ে সরকারি সহযোগিতার।


আরো সংবাদ



premium cement