বিনা হালের রসুন চাষে শ্বেতবিপ্লব
- নাটোর সংবাদদাতা
- ২২ এপ্রিল ২০২১, ০২:১৩
নাটরে শ্বেতবিপ্লব ঘটেছে বিনা হালের রসুন চাষে। জমি থেকে রসুন সংগ্রহ এখন শেষের পথে। এ পদ্ধতির রসুন চাষে খরচ কম, সেচ কম ও সারের প্রয়োগ তুলনামূলক কম হওয়ায় চাষিদের আগ্রত বেড়েছে বহুগুণে। অনেকে রসুনের সাথে সাথী ফসল হিসেবে তরমুজ ও বাঙ্গি চাষ করে থাকে।
দেশের প্রধান রসুন উৎপাদনকারী জেলা নাটোরে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। করোনায় স্কুল বন্ধ থাকায় বাড়ির আঙিনায় স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ ব্যস্ত সময় পার করছে রসুন বাছাই করা ও সংরক্ষণের কাজে। বিনা হালের রসুন চাষের মাধ্যমে ইতোমধ্যে স্থানীয় আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে।
চলতি মৌসুমের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৬৪ জেলায় রসুনের আবাদি জমির পরিমাণ ৮৬ হাজার ৪৯৯ হেক্টর। দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ নাটোরে ২৫ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে রসুন আবাদ হয়েছে। অর্থাৎ দেশের রসুনের আবাদি জমির প্রায় ৩০ ভাগই নাটোর জেলায়। নাটোর জেলার মধ্যে আবার সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়ে বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর উপজেলায়। চলতি মৌসুমে নাটোরে রসুনের ফলন দুই লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে। নাটোরে উৎপাদিত রসুনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো বিনা চাষে রসুন উৎপাদন। প্রচলিত পদ্ধতিতে সারা দেশ বা পৃথিবীতে যখন জমি চাষ করে রসুন লাগানো হয়। সেখানে নাটোরের রসুনের আবাদি জমির শতভাগই বিনা চাষের রসুন।
১৯৯৪-৯৫ সালে জেলার সীমান্তবর্তী বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর উপজেলার কৃষকরা স্বপ্রণোদিত হয়ে বিনা চাষে রসুন আবাদ শুরু করেন। গুরুদাসপুর উপজেলার কাছিকাটা এলাকার কৃষক জেহের আলী কার্তিক মাসে বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর জমিতে রসুনের কোয়া লাগিয়ে বিনা চাষে রসুন উৎপাদনের প্রচলন করেন। এই পদ্ধতিতে রসুন আবাদে জমি চাষ করতে হয় না, সেচও লাগেনা। আগাছা থাকে কম এবং সারের ব্যবহার খুবই কম। উৎপাদন ব্যয় তুলনামূলক কম হওয়ার পাশাপাশি উৎপাদনের পরিমাণ বেশি হওয়ায় এই পদ্ধতি কৃষকদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। প্রসার ঘটে জেলার অন্যসব উপজেলা ছাড়িয়ে দেশের অন্য জেলাগুলোতে।
বড়াইগ্রাম উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শারমিন সুলতানা নয়া দিগন্তকে বলেন, কিছু ক্ষেত্রে রসুনের উৎপাদন কম হয়েছে। কারণ একই জমিতে বারবার রসুন চাষ এবং মাটিতে জৈব সারের ঘাটতির কারণে ক্ষেত্রবিশেষে এমন হতে পারে।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি অফিসার হারুনর রশীদ জানান, শুধু বিনা হালে রসুন চাষই নয়, রসুনের জমিতে সাথী ফসল হিসেবে তরমুজ ও বাঙ্গি চাষের উদ্ভাবনও এই এলাকা থেকেই হয়েছে।
কৃষিবিদ ড. আব্দুল মজিদ বলেছেন, বিগত দুই দশকে নাটোরে কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈচিত্র্যকরণ হয়েছে। কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং কৃষি বিভাগের নতুন নতুন প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণের সমন্বয়ে প্রচলিত শস্যের বাইরে কৃষকরা অপ্রচলিত কিন্তু লাভজনক শস্যের প্রতি ঝুঁকে পড়েছেন। এক্ষেত্রে রসুন অগ্রগামী শস্য। বর্তমানে রসুন চলনবিল অধ্যুষিত গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম এলাকার সবচেয়ে লাভজনক শস্য।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক সুব্রতকুমার সরকার বলেন, নাটোরে এবার রসুনের আশাতীত উৎপাদন হয়েছে। রসুনের বহুমুখী ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়াতে মৌসুমের শুরুতেই ঊর্ধ্বমুখী বাজার দর ভবিষ্যতে আরো বৃদ্ধি পেয়ে কৃষকরা অধিক লাভবান হবে বলে আশা করা যায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা