১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিষখালী চরের মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়, হুমকিতে ৩ গ্রাম

রাজাপুরে বিষখালী নদী তীরের মাটি কেটে ট্রলারে ওঠানো হচ্ছে : নয়া দিগন্ত -

ঝালকাঠির রাজাপুরের দু’টি ইটভাটায় ব্যবহারের জন্য বিষখালী নদীর তীর থেকে মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে। অবৈধভাবে মাটি কেটে নেয়ার কারণে নদীর তীরবর্তী ভাঙনকবলিত চল্লিশকাহনিয়া, পালট ও বাদুরতলা নামের তিনটি গ্রাম হুমকির মুখে পড়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, উপজেলার সরকার দলীয় দুই শীর্ষ নেতা ভাটা দু’টির মালিকানায় থাকায় প্রভাব খাটিয়ে নদীর মাটি কেটে ইট তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। ভাটা দু’টি হচ্ছে রাজাপুরের বিষখালীর নদীর তীরে অবস্থিত বড়ইয়া ব্রিকস ও উত্তমপুর ব্রিকস।
বছরের ছয় মাস ইট উৎপাদন হয় এ দু’টি ভাটায়। প্রতিটি ভাটায় ছয় মাসে ২০ লাখ থেকে ৩০ লাখ ইট উৎপাদন হয়। দু’টি ভাটায়ই ইট প্রস্তুতের জন্য বিষখালী নদীর তীরের মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে।
উপজেলার সরকারদলীয় এই দুই নেতার প্রভাবে দু’টি ভাটায় সরকারি খাসজমি ও ব্যক্তি মালিকানা জমির মাটি কেটে ইট প্রস্তুত করা হচ্ছে। নদী তীরের জমি মালিকেরা ইটভাটার কাছে জমি ভাড়া দেন। জমি ভাড়া নিয়েও সেখান থেকে মাটি উত্তোলন করে ইট প্রস্তুত করা হয়। চল্লিশকাহনিয়া, বাদুরতলা ও বড়ইয়া ইউনিয়নের পালট গ্রামের ১০টি স্থান থেকে ইটভাটার জন্য মাটি কাটা হয়। প্রতি শতাংশ জমি পাঁচ হাজার টাকা করে ৮ থেকে ১০ ফুট গভীর করে মাটি কেটে নেয়ার জন্য ভাড়া নেয়া হয়।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিষখালী নদীর চল্লিশকাহনিয়া লঞ্চঘাট এলাকা, বাদুলতলা ও বড়ইয়া ইউনিয়নের পালট গ্রামের বিষখালী নদীর পাড়ে শ্রমিকরা মাটি কেটে ট্রলার ভরছেন। মাটি কাটার ফলে নদীর তীরে বিভিন্ন স্থানে গভীর গর্ত হয়েছে। এর প্রভাবে নদীর পাড়ের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। মাটিকাটার প্রমিক রমজান আলী বলেন, আমরা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে মাটি কাটি। ভাটা মালিকদের নির্দেশে নদী পাড়ের মাটি কেটে নিয়ে ইট তৈরির জন্য মজুদ করি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জমির মালিক বলেন, নদীর তীরের জমি সব সময় ভাঙনের আশঙ্কায় থাকে। তাই কিছু টাকা পাওয়ার আশায় জমির মাটি বিক্রি করেছি। আগামী বর্ষায় পলি পড়ে ওই স্থান আবার ভরে যাবে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও অভিভাবক ফেরদৌস হাওলাদার বলেন, রাজাপুরে বিষখালী নদীর অব্যাহত ভাঙনে ইতোমধ্যেই ঐতিহ্যবাহী মঠবাড়ি ইউনিয়নের পশ্চিম বাদুরতলা নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবনের কয়েকটি কক্ষ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। যেকোনো সময় হারিয়ে যাবে পুরো স্কুল ও স্কুলের পাশে থাকা জামে মসজিদ। এ ছাড়া বাদুরতলা-পুখরীজানা, মানকি সুন্দর সড়ক ও বাদুরতলা-চল্লিশকাহনিয়া সড়কটিও নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এই ভাঙনের মধ্যে ইটের ভাটায় নদীর পাড়ের মাটি কেটে নিলে ভাঙন আরো তরান্বিত হবে। পালট গ্রামের কৃষক শাহ আলম বলেন, খুব সকাল বেলা নদীর তীর থেকে অপরিকল্পিতভাবে মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে। গভীর করে নদীর তীর থেকে মাটি কাটার কারণে আশপাশের জমি ও স্থাপনা ভাঙনের হুমকিতে আছে।
এ বিষয়ে ভাটার মালিকরা জানান, মাটি ছাড়া ইট উৎপাদন সম্ভব নয়। আমরা কেনা জমি থেকে মাটি কেটে ইটের ভাটায় ব্যবহার করছি। তবে ঠিক নদীর পাড় থেকে মাটি কাটা হয়না। রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোক্তার হোসেন বলেন, সম্প্রতি বিষখালী নদীর তীর থেকে মাটি কাটায় উত্তমপুর ব্রিকসকে জরিমানা করেছি। এর পরেও বিষখালী নদীর মাটিকাটা বন্ধ না হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ভাটা বন্ধসহ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement