২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তরমুজের রমরমা বাজারে ভাগ্য ফিরেছে চাষিদের

আমতলীর প্রধান বাজারের একটি আড়তে থরে থরে সাজিয়ে রাখা তরমুজ : নয়া দিগন্ত -

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে লকডাউনে সারা দেশের মানুষের আনন্দ উল্লাস অম্লান হলেও সচ্ছলতা ফিরেছে বরগুনার আমতলী উপজেলার তরমুজ চাষিদের। অনুকূল আবহাওয়া ও পরিবহন সঙ্কট না থাকায় ভালো দামে তরমুজ বিক্রি করেছেন তারা। বিগত বছরের চেয়ে চার গুণ বেশি লাভবান হয়েছেন চাষিরা। এতে পরিবারে বইছে খুশির বন্যা। এ বছর উপজেলার চাষিরা ২১০ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন বলে দাবি করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সি এম রেজাউল করিম।
আমতলী কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর আমতলীতে তরমুজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল এক হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে। ওই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। কৃষি বিভাগের হিসাব মতে, প্রতি হেক্টরে ৩৫-৪০ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদন হয়েছে। প্রতি টন ৩০ হাজার টাকা দামে ৬৯ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন তরমুজ বিক্রি হয়েছে প্রায় ২১০ কোটি টাকায়; যা গত বছরের চেয়ে ছিল চার গুণ। গত বছর দেড় হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছিল। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গত বছর তরমুজ চাষিরা লোকসান দিয়েছেন। এ বছর তরমুজের বাম্পার ফলন ও ভালো দামে তরমুজ বিক্রি করায় গত বছরের চেয়ে চাষিরা চার গুণ লাভবান হয়েছে বলে জানান চাষিরা। এ দিকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত ৫ এপ্রিল দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। লকডাউন ঘোষণার প্রথম তিন দিন তরমুজ ব্যবসায় ধস নেমে অর্ধেকে আসে দাম। কিন্তু অনুকূল আবহাওয়া ও পণ্য পরিবহন সঙ্কট না থাকায় তিন দিন পরই ঘুরে দাঁড়ায় তরমুজের বাজার। ব্যবসায়ী ও চাষিরা আবার লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। বর্তমান লকডাউনে তরমুজ চাষি ও ব্যবসায়ীদের ওপর কোনো প্রভাব ফেলছে না।
আমতলী বাঁধঘাট চৌরাস্তা, একে স্কুল ও গাজীপুর বন্দরের তরমুজ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, লকডাউনের মাঝে বাজারে বেশ ক্রেতা রয়েছে। মাঝারি ধরনের একটি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকায়। বড় ধরনের তরমুজ ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে; যা বিগত বছরের চেয়ে চার গুণ।
পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের চাষি মাহবুব মাতুব্বর বলেন, ১০ বছর ধরে তরমুজ চাষ করি। এ বছরের মত এত দামে তরমুজ বিক্রি করতে পারিনি। তিন লাখ টাকা ব্যয়ে ১২ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছিলাম, ওই জমির তরমুজ ১২ লাখ টাকা বিক্রি করেছি। তিনি আরো বলেন, প্রচণ্ড তাপদাহ থাকায় এবং লকডাউনের মাঝে তরমুজ পরিবহন সঙ্কট না থাকায় এত ভালো দামে তরমুজ বিক্রি করতে পেরেছি।
আমতলী বাঁধঘাট চৌরাস্তায় তরমুজ ব্যবসায়ী রিপন চন্দ্র মৌয়ালি ও বাবুল মৃধা বলেন, তরমুজের প্রচুর চাহিদা। চাহিদামতো ক্রেতাদের তরমুজ দিতে পারছি না। দামও অনেক বেশি। দাম বেশি হলেও ক্রেতারা অনায়াসে কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
আমতলী গাজীপুর বন্দরের তরমুজ ব্যবসায়ী সোহেল রানা বলেন, লকডাউনে তরমুজ পরিবহনে দু-তিন দিন সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু এখন আর সেই সমস্যা নেই। অবাদে তরমুজ বিক্রি করতে পারায় চাষিরা বেশি দাম পাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, অনুকূল আবহাওয়া, প্রচণ্ড তাপদাহ ও পরিবহন সঙ্কট না থাকায় এ বছর তরমুজের চাহিদা বেশি। ফলে কৃষক বেশি দামে তরমুজ বিক্রি করেছেন।
আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সি এম রেজাউল করিম বলেন, তরমুজের ভালো দাম থাকায় কৃষকরা অনেক লাভবান হচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, এ বছর উপজেলার চাষিরা প্রায় ২১০ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement