২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

একটি সেতু বদলে দিতে পারে ৩০ হাজার মানুষের জীবন

-

একটি সেতুর অভাবে যুগ যুগ ধরে সাঁকোতে পারাপার হয়ে আসছে ঘিওর উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। উপজেলার বানিয়াজুরি ও নালী ইউনিনের মধ্যকার সীমানা দিয়ে বয়ে গেছে খিড়াই নদী। দু’পাশে ২৫ গ্রামে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বসবাস, যারা বিভিন্ন প্রয়োজনে নিয়মিত এই সঁাঁকো দিয়ে পারাপার হন। আর বর্ষাকালে নৌকাই তাদের একমাত্র ভরসা। একটি মাত্র সেতু বদলে দিতে পারে দুই ইউনিয়নের মানুষের জীবন ও জীবিকা। কিন্তু স্থানীয়রা দীর্ঘকাল ধরে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে এলেও তা বাস্তবায়সন হচ্ছে না। বর্ষা মৌসুমে নৌকা এবং অন্য সময় বাঁশের সাঁকোই তাদের ভরসা।
কথা হয় ৬০ বছর বয়সী জাবেদা বেগমের সাথে। তিনি বলেন, ‘ভাঙাচোরা এই সাঁকো দিয়ে পার হতে খুব কষ্ট হয়। ভয়ে শরীর কাঁপে। সেতুটি কবে বানাবে সরকার। আমরা তো অসুখ হলে তাড়াতাড়ি হাসপাতালেও যাইতে পারি না। শুনছি দেশে কত উন্নতি হইতেছে। মরার আগে এই হানে সেতু দেখে যাইতে পারমু কি!’ সেতুর ছবি তুলতে গেলে সাংবাদিক দেখে আক্ষেপের সুরে তিন-চারজন কৃষক বলেন, ‘ছবি তুইলা আর কী অইবো? জন্মের পর থেইকা দেখছি মাপামাপি চলতাছে। কিন্তু আইজও তা অফিস পর্যন্ত যায় নাই। যতই ছবি তুলেন ব্রিজ আর অইবো না। আমাগো মতো গরিব মানুষের ডাক সরকারের কানে যায় না।’
স্থানীয়দের দেয়া তথ্য মতে, দুই ইউনিয়নের খিড়াই নদীর উপর বাঁশ ও কাঠের সাঁকো ব্রিটিশ আমল থেকে এলাকাবাসীর নিজেদের টাকায় নির্মিত হচ্ছে। এই সাঁকো দিয়ে বানিয়াজুরি ও নালী ইউনিয়নের গাংডুবি, দিয়াইল, শোলধারা, কেল্লাই, কাকজোর, বানিয়াজুরি, জোকা, নয়াচর, তারাইল, মাসাইল, চালিতাবাড়ী, নিমতা, কলতা, বুতুনি, বেজপাড়া, ধোলাকান্দা, কাছিধারা, ছোটবুতুনি, ইসারাবাজ, কোঠাধারা, বিলবৈড়ল, বিবিরাস্তি, শিমুলিয়া, খাইলসা, ফেচুয়াধারা, দোচুয়া, গালা, ডাকিজোড়া, পাড়াগ্রাম, ইন্তাজগঞ্জসহ ২৫ গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পারাপার হয়ে থাকে। ভোটের সময় এলাকায় এসে অনেকেই বলেন ভোটে পাস করলে এখানে সেতু দেবেন। কত নির্বাচন হলো, কত সরকার গেল-এলো, কেউ কথা রাখেননি।
এলাকাবাসী জানান, এ সাঁকো দিয়ে ভ্যান, মোটরসাইকেল, রিকশা, বাইসাইকেলসহ নানা ধরনের যানবাহন পারাপার হয়। মোটরসাইকেল পারাপারের সময় নিচে পড়ে আহত হওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। এত কিছুর পরও টনক নড়েনি জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট কারো। আর কত প্রাণহানি ঘটলে ব্রিজটি হবে এটাই এখন প্রশ্ন স্থানীয়দের ।
নালী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস মধু জানান, খিড়াই নদীর উপর সাঁকোর কারণে এলাকার কৃষকরা কৃষিপণ্য আনানেয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহান। একটি সেতু না থাকায় কৃষিপণ্য নিয়ে জেলা শহরে বা বানিয়াজুরি বাসস্ট্যান্ডে আসতে যেখানে ২০ টাকা লাগার কথা সেখানে ১৫-২০ কিলোমিটার ঘুরে এক শ’ টাকা খরচ করতে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে। এতে দরিদ্র কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী সাজ্জাকুর রহমান জানান, জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানটিতে একটি সেতু নির্মাণের জন্য প্রকল্প তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দফতরে জমা দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, নতুন সেতুর প্রকল্পটি প্রস্তাবনায় রয়েছে। প্রক্রিয়া শেষে অচিরেই সেতুটি বাস্তবায়ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement