দৌলতদিয়ায় দালালের ভূমিকায় পুলিশ : পারাপারে ভোগান্তি চরমে
- মেহেদুল হাসান আক্কাছ গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী)
- ১১ এপ্রিল ২০২১, ০০:৫৯
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মূল প্রবেশদ্বার রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে গাড়ি পারাপারে দালালদের দৌরাত্ম্য অনেকটা কমলেও সেই জায়গা দখল করেছে ট্রাফিক পুলিশ। কাউন্টারগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও ট্রাফিক পুলিশের উৎকোচ এই দুই কারণে এই ঘটে ফেরি পারাপার এখন এক মহাদুর্ভোগের ব্যাপার। আর এই কাজে কাউন্টারের কর্মচারী ও ট্রাফিক পুলিশকে সহায়তা করে থাকে স্থানীয়রা প্রভাবশালীরা। স্থানীয়দের কথায় দালালের জায়গা এখন দখল করেছে পুলিশ। আর তাদেরকে সহযোগিতার মাধ্যমে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে একটি মহল।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, দৌলতদিয়া ঘাটে বিআইডব্লিউটিসির কাউন্টারে থাকা কিছু অসৎ কর্মচারী, ট্রাফিক পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় একটি দালাল চক্র গড়ে ওঠে। তারা সিন্ট্রিকেট তৈরি করে গাড়ির চালকদের জিম্মি করে টিকিটের মূল্য বাবদ অতিরিক্ত টাকা আদায় করে আসছিল। ওই চক্রের দাপটে ট্রাক চালকরা কাউন্টারের ধারে কাছে যেতে পারত না। কয়েক মাস আগে তৎকালীন রাজবাড়ী জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের নির্দেশে গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট পুলিশ বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের কড়া নজরদারি থাকায় ওই দালাল চক্রের সদস্যরা কাউন্টারে আসতে পারছে না। কিন্তু বর্তমান চক্রের লোকজন অভিনব কৌশলে ওই অনৈতিক কর্মকাণ্ড মোবাইলের মাধ্যমে চালিয়ে যাচ্ছে।
এর মাধ্যমে তারা দৌলতদিয়ায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ ও ফেরির কাউন্টারে থাকা কর্মচারীদের ম্যানেজ করে চালক ও হেলপারকে নির্দেশনা দিয়ে সিরিয়ালে থাকা গাড়ি বাম দিয়ে বের করে দেয়। বিনিময়ে চালক হেলপারকে গাড়িপ্রতি ৫০০-১০০০ টাকা অতিরিক্ত গুনতে হয়।
শুক্রবার বিকেলে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট গিয়ে জানা যায়, বড় গাড়ির টিকিট মূল্য ১৪৬০ টাকা লেখা থাকলেও ১৫০০-১৬০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। মাঝারি গাড়ির টিকিটের গায়ে ১০৫০ টাকা লেখা থাকলেও আদায় করা হচ্ছে ১১০০-১২০০ টাকা। ৭৫০ টাকার টিকিট নেয়া হচ্ছে ৯০০-১০০০ টাকা। এভাবে তারা প্রত্যেক গাড়ি থেকে ৫০-৫০০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত আদায় করে থাকে। চালক হেলপার অতিরিক্ত টাকা না দিতে চাইলে তাদের মারধর করার মতো ঘটনাও ঘটছে।
জানা গেছে, গত ২৯ মার্চ বিকেলে বিআইডব্লিউটিসির ফেরির কাউন্টারে টিকিট নিতে আসা দৌলতদিয়া ইউনিয়নেরই জামতলা হাট এলাকার লিটন শেখ (লিটু) নামে একজন চালক। সে অতিরিক্ত টাকা না দেয়ায় কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা কর্মচারী রাজু ও আমিনুল তাকে দূর থেকে আসা চালক মনে করে মারধর করে রক্তাক্ত করে।
দৌলতদিয়া ঘাটে প্রতিদিন দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেই মালভর্তি ট্রাকের লম্বা সিরিয়াল দেখা যায়। এ সময় পচনশীল ও অপচনশীল কাঁচা মালবোঝাই শত শত ট্রাক সিরিয়ালে আটকা পড়ে। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হওয়ার পর নাইট কোচ আসা শুরু হলে এ সিরিয়াল তখন আরো বেড়ে কয়েক মাইল এলাকাজুড়ে যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকে। তখন যাত্রীবাহী বাস ও কাঁচামালের ট্রাক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার করা হয়। অপচনশীল গাড়িগুলোকে ঘণ্টার ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। কাঁচামাল ভর্তি ট্রাক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার হওয়ার কথা থাকলে জ্যাম বাধার অজুহাতে আটকে রাখ হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেরির নাগাল পাওয়া ট্রাকের চালকরা নাম পরিচয় গোপন রাখার স্বার্থে আক্ষেপ করে বলেন, দৌলতদিয়া ঘাটে আমরা কখনো স্বাধীনভাবে পার হতে পারি না। আমাদের নিরাপত্তা দেয়ার কথা পুলিশের। কিন্তু পুলিশই তো আমাদের বড় সমস্যা করছে। কিছু বলতে গেলে ঘাটের মাস্তানদের মার খেয়ে নাক মুখ হারাতে হবে।
অপর একটি ফেরি থেকে নামা চালকরা অভিযোগ করে বলেন, কাউন্টার কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে গাড়ির কাগজপত্র চেকিংয়ের নামে অধিক সময় কাটিয়ে দিয়ে চালকদের হয়রানি করেন। ফলে সড়কের ওপর ট্রাকের সিরিয়াল থাকলেও ঘাটে গাড়ি লোড হওয়ার অপেক্ষায় খালি ফেরি দাঁড়িয়ে থাকছে।
দৌলতদিয়া পুলিশ বক্সের সামনে থেকে অনেকগুলো ট্রাক বাঁ দিয়ে বেড়িয়ে যেতে দেখা যায়। ওগুলো বামদিয়ে যাচ্ছে কেনো জানতে চাইলে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মিজান বলেন, ওগুলো কাঁচামালের ট্রাক, ওগুলো আগে যাবে। সব মালভর্তি ট্রাকই তো বামদিয়ে যাচ্ছে তবে ডাইনে ওগুলো আটকে রেখেছেন কেন এমন প্রশ্নের, কোনো উত্তর না দিয়ে তিনি সরে যান।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা