২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পাইকগাছায় নদী খননে অনিয়ম

পাইকগাছায় উলুবুনিয়া নদী খননের কাজ করছে স্কেভেটর : নয়া দিগন্ত -

খুলনার পাইকগাছা উপজেলার লতার উলুবুনিয়া নদী খনন করে সরু খাল নির্মাণ করা হচ্ছে। জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় মৎস্য অধিদফতরের বাস্তবায়নাধীন নদীটি খননে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে ফেলা হচ্ছে নদীর মধ্যেই। ফলে নদীর দুই তীরে বসবাসরত অবৈধ দখলদারদের স্থায়ী দখলের সুযোগ হচ্ছে। অন্য দিকে জোয়ার ও আসন্ন বর্ষা মৌসুমে পানিতে নদী বক্ষের মাটি ধুয়ে ফের ভরাট হয়ে যাবে ঐতিহ্যবাহী উলুবুনিয়া নদী। এমনটাই আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। বিস্তীর্ণ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশন ও জীবিকা নির্বাহের অন্যতম মাধ্যম এই নদী।
টেকসই মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং সরকারের দারিদ্র্যবিমোচন প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করা, পতিত জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করে পুষ্টির চাহিদা পূরণ, মাছ চাষের উন্নত প্রশিক্ষণ, সেবা সম্প্রসারণ এবং মৎস্য চাষের প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহের মাধ্যমে গ্রামীণ দরিদ্র মৎস্যচাষি, মৎস্যজীবী বেকার যুবক ও দুস্থ মহিলাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আয় বৃদ্ধি ও আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন, সমাজভিত্তিক মৎস্য চাষ ব্যবস্থার সূচনা করা, উন্নয়নকৃত জলাশয়ে সুফলভোগীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং পতিত জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে আবাসস্থল পুনরুদ্ধার করে পরিবেশবান্ধব মাছ চাষ এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে সরকার দেশের ৬১টি জেলার ৩৪৯টি উপজেলায় এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।
পাইকগাছা উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পবিত্র কুমার দাস জানান, প্রকল্পের আওতায় পাইকগাছা উপজেলার একটি নদী (বদ্ধ) ও তিনটি খালের মধ্যে দু’টি লতা ইউনিয়ন এবং দু’টি দেলুটী ইউনিয়নে অবস্থিত। লতার দু’টির মধ্যে একটি উলুবুনিয়া মরা নদী। যার আয়তন ১.৫৯৭ হেক্টর। শামুকপোতা আবাসন থেকে পুটিমারী মন্দির পর্যন্ত খালটি খননের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। অপরটি হচ্ছে গয়েশার খাল। শিব বাবুর বাড়ি থেকে শামছুর আলীর বাড়ি পর্যন্ত ১.৬২৫ হেক্টর খালটি খননে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৯ লাখ ৮২ হাজার টাকা। অন্য দিকে দেলুটীর দু’টি খালের মধ্যে একটি হচ্ছে গেওয়াবুনিয়া (বরোপিট), যার আয়তন ১.৬১ হেক্টর। ব্রজেন মণ্ডলের বাড়ি থেকে ক্ষীতিশ মণ্ডলের বাড়ি পর্যন্ত খালটি খননের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। পারমধুখালী খালটির ১.৬০ হেক্টর গৌরাঙ্গ ঢালীর বাড়ি থেকে রাধানগরের সীমানা পর্যন্ত খননে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৯ লাখ ৮১ হাজার টাকা।
তিনি আরো জানান, এ ধরনের প্রকল্প এলাকায় এটিই প্রথম। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ সংক্ষণের পাশাপাশি প্রদর্শনী খামারের কাজে ব্যবহার, মৎস্যজীবীদের জীবিকা নির্বাহের পথ উন্মুক্ত, দেশীয় প্রজাতির মাছের উৎপাদন ও সংরক্ষণ, কৃষিতে সেচের ব্যবহার ও পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা পুনরুদ্ধারসহ বিভিন্নভাবে নদী ও খালগুলো মানুষের উপকারে আসবে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পে উপজেলার চারটি খালের মধ্যে লতার উলুবুনিয়া নদী (বদ্ধ) ও দেলুটীর গেওয়াবুনিয়া খালের প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে লতার গয়েশার খাল ও দেলুটীর পারমধুখালী খালের খনন কাজও শুরু হবে। চলতি মাসের মধ্যে এর খননকাজ শেষ হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এ দিকে নদীর মূল প্রস্থের প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ মাঝ বরাবর দিয়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ফুট গভীরতায় খনন কাজ হচ্ছে। এতে নদীর দুই পাশের অবৈধ দখলদারদের স্থায়ী দখলের পথ প্রশস্ত হচ্ছে কি না সে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকল্পে নকশা অনুযায়ী তাদের কাজ করতে হচ্ছে। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের বিষয়টি তাদের নয়। সেটা দেখবে নদীর মালিক পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে বাস্তব অবস্থার আলোকে নদী খননে ঠিকাদারদের ৫ ফুটের বেশি গভীর ও প্রস্থ ৮০ ফুটের বেশি খননের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে মূল নকশার থেকে খননের দৈর্ঘতা কমে আসবে।
খননের স্থানে গিয়ে দেখা যায়, দু’টি শর্ট বুমের ছোট স্কেভেটর দিয়ে খননকাজ চলছে উলুবুনিয়া নদীর। এতে নদীর মাঝ বরাবর দিয়ে কোথাও ৭০ কোথাও ৭৫ ফুট প্রস্থে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ফুট গভীরতায় এগিয়ে চলেছে প্রকল্পের খননকাজ। এতে দু’পারের বিশেষ করে পশ্চিম পাশের দীর্ঘ দিনের অবৈধ দখলদারদের স্থায়ী ও টেকসই দখলে পরোক্ষভাবে সহায়তা হচ্ছে। এ ছাড়া নদীর মাটি কেটে নদীতেই ফেলা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় বিদ্যুৎ মল্লিক বলেন, নদীর মাটি কেটে নদীতে ফেলার কারণে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে উপরের অতিরিক্ত পানি ও জোয়ারের পানিতে নদীর খননকৃত মাটি ফের নদীতে পড়ে ফিরে যাবে আগের অবস্থায়। এভাবে নদী খননে সফলতা বহুলাংশে বাঁধাগ্রস্থ হবে বলেও আশঙ্কা তাদের।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী বলেন, খননকাজ সার্বিক তদারকি করা হচ্ছে। নদী ও খালগুলোতে খননকাজ শেষ হলে তা বিস্তীর্ণ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনস্থ উলুবুনিয়া নদীসহ পাইকগাছার চারটি খাল সংস্কারে মৎস্য অধিদফতরের এ খননকাজ সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে ঠিক কি ধরনের প্রভাব ফেলবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।


আরো সংবাদ



premium cement