২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আলু নিয়ে মহাবিপাকে দিনাজপুরের চাষিরা

-

ফলন ভালো হলেও মহাবিপাকে পড়েছেন দিনাজপুরের আলু চাষিরা। কেননা দিনাজপুুরের বাজারে বর্তমানে আলুর দাম খুব কম। পাশাপাশি আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগারগুলোতে নেই পর্যাপ্ত জায়গা। তাই আলু চাষিরা এখন আলু নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিনাতিপাত করছেন।
দিনাজপুরে এ বছর ১০ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়েছে, যা চাহিদার চেয়ে পাঁচ লাখ টন বেশি। দিনাজপুরে মোট ১৩টি হিমাগারে এক লাখ ২৪ হাজার ৯৬০ টন আলু সংরক্ষণ করা যায়। এখন বাকি আট হাজার ৭৬ টন আলু কী করা হবে তা ভেবে কুল পাচ্ছেন না আলুচাষিরা। দিনাজপুরের মানুষের প্রায় পাঁচ লাখ টন আলুর চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত পাঁচ লাখ টন আলু জেলার বাইরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করার কথা। কিন্তু বাজারে দাম না থাকায় চাষিরা তা হিমাগারে রাখার কথা ভাবছিলেন। হিমাগারগুলোতে জায়গা না থাকায় চাষিরা বাধ্য হয়ে বিপুল পরিমাণ আলু লোকসানে বিক্রি করে দিচ্ছেন। কেউ কেউ দামের আশায় ক্ষেতের মধ্যেই আলু স্তূপ করে রেখে দিয়েছেন।
কৃষি বিভাগ জানায়, দিনাজপুরে যে জাতের আলু উৎপাদিত হয় তা বিদেশে রফতানিযোগ্য নয়। রফতানিযোগ্য আলু চাষ শুরু হলে এই সঙ্কট আর থাকবে না। দিনাজপুরের বিভিন্ন বাজারে উচ্চ ফলনশীল হিরা, আইলসা, পেট্রোনিস, মুল্টা, ডায়ামন্ট, কার্ডিনাল, মন্ডিয়াল, কুফরি সিন্দুরী, চমক, ধীরা, গ্রানোলা, ক্লিওপেট্রা, বারি টিপিক্রস-১, বারি টিপিক্রস-২, বারি আলু-১ (হীরা), বারি আলু-৪ (আইলসা), বারি আলু-৭ (ডায়ামন্ট), বারি আলু-৮ (কার্ডিনাল), বারি আলু-১১ (চমক), বারি আলু-১২ (ধীরা), বারি আলু-১৩ (গ্রানোলা), বারি আলু-১৫ (বিনেলা) কয়েক দিন আগে পাইকারি বাজারে ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এখন তা নেমে এসেছে ৯ টাকায়। পাশাপাশি দেশী জাতের আলু আউশা, চল্লিশা, দোহাজারী লাল, ফেইন্তাশীল, হাসরাই, লাল পাকরি, লালশীল, পাটনাই, সাদা গুটিশীল বিলাতি ও সূর্যমুখী আলু পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৩ টাকা দরে। এতে উৎপাদন খরচও উঠছে না চাষিদের।
দিনাজপুরের আলু চাষি আনসারুল ইসলাম জানান, ১৫ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন তিনি। প্রতি বিঘায় তার খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। আর প্রতি বিঘায় আলুর ফলন হয়েছে ১০০ থেকে ১১০ মণ। কয়েক দিন আগে তিনি উচ্চ ফলনশীল জাতের আলু প্রতি কেজি বিক্রি করেছেন সাড়ে ৯ টাকা দরে। এতে প্রতি বিঘায় তার লোকসান হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। দিনাজপুরের বিভিন্ন হিমাগারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ধারণক্ষমতা শেষ হয়ে যাওয়ায় ইতোমধ্যেই বুকিং নেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন হিমাগার মালিকরা।
বীরগঞ্জ উপজেলার মেসার্স হিমাদ্রী হিমাগারের ম্যানেজার সাদেক আলী জানান, তাদের হিমাগারের ধারণক্ষমতা ৮ হাজার ৮০০ টন। ইতোমধ্যে আলু বুকিং হয়ে যাওয়ায় তাদের হিমাগারে আর জায়গা নেই। এ জন্য বুকিং বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। একইভাবে বোচাগঞ্জ উপজেলার রাহবার হিমাগার প্রাইভেট লিমিটেডের ম্যানেজার শাহজাহান আলী বলেন, তাদের হিমাগারের ধারণক্ষমতা ১০ হাজার ৮০ টন।
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক তৌহিদুল ইকবাল বলেন, দিনাজপুর জেলায় চলতি মৌসুমে ৪৮ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে প্রায় ১০ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। দিনাজপুরে যেসব জাতের আলু উৎপাদন হয় তা বিদেশে রফতানি করা যায় না। তিনি আরো বলেন, বেসরকারিভাবে অনেকে উদ্যোগ নিয়ে বিদেশ থেকে বীজ আমদানি করছেন। আগামী এক-দুই বছরের মধ্যে দিনাজপুরে বিদেশে রফতানিযোগ্য আলু চাষ শুরু হবে বলে তিনি আশাবাদী। তখন আর আলু নিয়ে কৃষকদের বিপাকে পড়তে হবে না। কৃষক ভালো দামও পাবেন।


আরো সংবাদ



premium cement