২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জামালগঞ্জে ইজারার নামে জলমহাল সেচে মাছ লুট

জামালগঞ্জে মাছ ধরার জন্য পাইপ বসিয়ে সেচে ফেলা হচ্ছে একটি বিল : নয়া দিগন্ত -

সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে সরকারি ইজারাকৃত বিল সেচে বেপরোয়াভাবে মাছ লুট করা হচ্ছে। সরকারি নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মৎস্যজীবীদের কাছ থেকে কৌশলে সাবলিজ নিয়ে জলমহালের তলা শুকিয়ে মৎস্য নিধন করায় দেশী মাছের বংশ ধ্বংস হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী জলমহালের (বিলের) তলা শুকিয়ে মৎস্য নিধন গুরুতর অপরাধ। এমনকি ইজারা বাতিলের কথা উল্লেখ থাকলেও অদৃশ্য শক্তির জোরে ও অভিনব কৌশলে উপজেলার প্রায় প্রতিটি বিল শুকিয়ে মাছ নিধন করা হচ্ছে। এতে দেশী মাছের প্রজাতি নষ্ট হওয়ায় সচেতন মহল উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে উপজেলার ইজারাকৃত বিভিন্ন জল মহালে (বিলে) পাওয়ার পাম্প দিয়ে পানি সেচে মৎস্য নিধন করা হচ্ছে। জলমহাল সেচের ব্যাপারে উপজেলাজুড়ে যখন সমালোচনার ঝড় বইছে ঠিক সেই মুহূর্তে ইজারাদাররা অভিনব কৌশল নিয়েছে। তারা নিজেদের কয়েকজনকে কৃষিকাজে পানি দেয়ার নাম করে জলমহালে দিনের বেলায় ১-২টি পাম্প দিয়ে পানি সেচে নিচ্ছেন। আর রাতে ওই জলমহালে ৪-৫টি পাম্প বসিয়ে সারারাত ধরে পানি সেচে ফেলছেন। আবার ভোরে দু’টি ছোট পাম্প রেখে বাকি পাম্পগুলো সরিয়ে নিচ্ছে।
এমন কাণ্ড দেখা গেছে উপজেলা সংলগ্ন দেওতান জলমহালে। একটি মৎস্য সমিতির নাম দিয়ে শাহাপুর গ্রামের ওয়াসীম মিয়া পানি সেচ দিচ্ছেন। উপজেলা প্রশাসনকেও তারা মানছেন না। প্রতি বছরই এমন হীন কাজ করেন তিনি।
সর্বশেষ উপজেলার সদর ইউনিয়নের দেওথান জলমহাল, ফেনারবাক ইউনিয়নের লকড়ি জলমহাল, বেহেল ইউনিয়নের পুটি বিল ঘুরে দেখা গেছে এই বাস্তব চিত্র। জলমহালের নীতিমালা লঙ্ঘন করে মাছের বংশ ধ্বংস করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির বিষয়ে সমালোচনা চলছে। স্থানীয় প্রশাসন ও সচেতন মানুষের চোখে ধাঁ ধাঁ দিয়ে নিজেদের লোকজনকে ম্যানেজ করে বোরো জমিতে পানি দেয়ার মতো নিরেট মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে জলমহাল সেচে মাছের বংশ ধ্বংস করা হচ্ছে। তবে কোথাও কোথাও আবার এই অপরাধের জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে জরিমানা আদায়ও করেছে উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু অনেকেই বলছেন যে সামান্য টাকা জরিমানা করলেই তাদের শিক্ষা হবে না। জেল ও মোটা অঙ্কের জরিমানা করলে আইন ও নীতিমালার প্রতি শ্রদ্ধা আসতে পারে। দেওথান বিলের পানি সেচে মাছ ধরার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে ওয়াসীম মিয়া বলেন, জমিতে পানি লাগে, তাই পানি দিচ্ছি। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। যেই জমিতে পানি দেয়া হচ্ছে সেই জমিসহ আশপাশে আরো কয়েক একর জমি ঘুরে দেখা যায় জমিতেই পানির প্রয়োজন নেই। বিভিন্ন জমি ঘুরে সেই পানি নিষ্কাশন হচ্ছে অন্য এক ডোবায়।
এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুনন্দা রানী মোদক বলেন, কৃষি কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে জমিতে পানি দিতে চাইলে তাদের সাথে সমন্বয় করে প্রয়োজন মতো পানি দিতে হবে। জলমহাল সেচের কোনো নিয়ম নেই। জলমহালের তলা শুকিয়ে মৎস্য আহরণ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত দেব বলেন, ইতোমধ্যে জলমহাল শুকানোর অপরাধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। বিলের তলা শুকিয়ে কেউ মৎস্য আহরোন করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement