২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় ৪ ফেরি বিকল : দু’পাড়ে তীব্র যানজট

দৌলতদিয়ায় ফেরি পারের জন্য অপেক্ষারত ঢাকামুখী পণ্যবাহী যানবাহনের দীর্ঘ লাইন : নয়া দিগন্ত -

ফেরি স্বল্পতার কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যানবাহন পারাপার ব্যাহত হওয়ায় দৌলতদিয়ায় যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত তিন-চার দিন ধরে দৌলতদিয়ায় আটকে রয়েছে ঢাকামুখী হাজার হাজার যানবাহন। যাত্রীবাহী ও ছোট গাড়ি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার করা হলেও পণ্যবাহী পরিবহনকে নদী পাড়ি দিতে দুই থেকে তিন দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। শুক্র ও শনিবার দৌলতদিয়া ক্যানাল ঘাট এলাকায় এমন চিত্র দেখা যায়। ফেরির তীব্র সঙ্কট ও ফেরির যান্ত্রিক ত্রুটিসহ নানা জটিলতায় উভয় ঘাটে যানজট কাটছে না। যানজট কমাতে রাজবাড়ীর পুলিশ প্রশাসন ঘাট থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে গোয়ালন্দ মোড়-কুষ্টিয়া রোডে আরো দুই-তিন শ’ পণ্যবাহী ট্রাক দাঁড় করিয়ে রেখেছে।
বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট অফিস সূত্রে জানা যায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ছয় হাজারের বেশি গাড়ি ফেরি পারাপার হয়। কিন্তু এই রুটে প্রয়োজনীয় সংখ্যক রো রো (বড়) ফেরি নেই। চলাচলকারী ফেরিগুলো অনেক পুরনো। সার্বক্ষণিক চলতে গিয়ে অনেক ফেরি ঘন ঘন বিকল হয়ে পড়ছে। বর্তমান বহরে থাকা ১০টি রো রো ফেরির মধ্যে ভাষাশহীদ বরকত ও কেরামত আলী নামের দু’টি ফেরি বিকল হয়ে আছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয় সূত্র জানায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার নির্বিঘœ রাখতে ১০টি রো রো (বড়), সাতটি ইউটিলিটি (ছোট) ও একটি মাঝারি ফেরি চালু রাখা হয়। অনেক দিনের পুরোনো ফেরি হওয়ায় বেশির ভাগ ফেরির যন্ত্রাংশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ কারণে মাঝেমধ্যে বিকল হয়ে পড়ছে ফেরিগুলো। এতে ফেরির সংখ্যা কমে গিয়ে যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে।
সূত্রটি আরো জানায়, এক সপ্তাহের বেশি সময় আগে কেরামত আলী ও ভাষাশহীদ বরকত নামের রো রো ফেরি দু’টি বিকল হয়ে পড়ে। কেরামত আলী ফেরিকে পাটুরিয়ার ভাসমান কারখানা মধুমতিতে রেখে মেরামত করা হচ্ছে আর ভাষাশহীদ বরকত ফেরিকে মেরামতের জন্য নারায়ণগঞ্জের ডকইয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। ইদকে প্রপেলশানের পাখা ভেঙে যাওয়ায় গত মঙ্গলবার সকালে রো রো ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানকে মধুমতি কারখানায় রাখা হয়েছে। পরদিন বুধবার সকাল থেকে মাঝারি ফেরি ‘ঢাকা’ যান্ত্রিক ত্রুটিতে বসে আছে। চারটি ফেরি বিকল হয়ে পড়ায় এই নৌপথে ফেরিসঙ্কট তীব্র হয়ে উঠেছে। এদিকে এমন পরিস্থিতিতে আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ফেরি চালু করায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এই রুট থেকে ‘কপোতী’ ও ‘কেতকী’ নামের দু’টি ইউটিলিটি ফেরি সরিয়ে নেয়া হয়। এ কারণে ফেরিসঙ্কট আরো বেড়ে যায়। বর্তমানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে সাতটি বড় ও পাঁচটি ছোট ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।
দৌলতদিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ফেরিঘাট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ঢাকাগামী তিন কিলোমিটার লম্বা যানবাহনের লাইন। এর মধ্যে বেশির ভাগ পণ্যবাহী গাড়ি। অনেক গাড়ির চালক ও সহকারী গাড়ির ভেতর বসে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। খুলনা থেকে সরকারি পণ্যবাহী একটি ট্রাক নিয়ে গত সোমবার রাতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা করেছেন চালক মোতালেব হোসেন। তিনি বলেন, মোট তিনটি গাড়ি নিয়ে তারা রওনা করেন। সোমবার রাতে ঘাট থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে গোয়ালন্দ মোড়ে পৌঁছলে পুলিশ আটকে দেয়। দু’দিন থাকার পর আজ ভোরে তাদের ছেড়ে দেয়। কিন্তু ঘাটের কাছে এসেও আরেকবার লম্বা লাইনে আটকা পড়েন। প্রায় তিন দিন মহাসড়কে অপেক্ষা করতে করতে তার কাছে থাকা টাকা-পয়সা প্রায় শেষ।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক খোরশেদ আলম বলেন, ছোট-বড় মিলে ১৮টি ফেরি চলত। এর মধ্যে দু’টি ছোট ফেরি আরিচা-কাজিরহাট রুটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাকি ১৬টির মধ্যে চারটি বড় ফেরি যান্ত্রিক ত্রুটিতে বিকল হয়ে পড়ায় একটি ডকইয়ার্ডে ও বাকি তিনটি ভাসমান কারখানা মধুমতিতে রাখা হয়েছে। ফেরিস্বল্পতার কারণে যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (মেরিন) আবদুস সাত্তার বলেন, বেশির ভাগ ফেরির বয়স অনেক হওয়ায় যন্ত্রাংশ দুর্বল হয়ে গেছে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন একটানা চলতে গেলেও যন্ত্রাংশে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে কেরামত আলী, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ও ভাষাশহীদ বরকত ঠিক হয়ে নৌপথে যুক্ত হবে। ফেরিস্বল্পতা কেটে গেলে যানবাহন পারাপার অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে তিনি জানান।


আরো সংবাদ



premium cement