২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

শুকনো মৌসুমেও মেঘনায় ভাঙন দিশেহারা হাতিয়াবাসী

-

দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার দক্ষিণে মূল ভূখণ্ড। উত্তরে হরনী ও চানন্দী ইউনিয়নের বিশাল জনপদ। মাঝে স্রোতস্বিনী মেঘনার মোহনা। মেঘনায় নদীর একূল ভাঙে ওকূলও ভাঙে। দ্বীপবাসীর দুঃখ নদীভাঙন। প্রায় ৭০ বছর ধরে নদীভাঙনে জর্জরিত দ্বীপটি। শুকনো মৌসুমেও হাতিয়ার উত্তরাংশ হরনী ও চানন্দী ইউনিয়নে নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে। শুকনো মৌসুমেও মেঘনার ভাঙনে দিশেহারা হাতিয়াবাসী। সাম্প্রতিক সময়ে মেঘনায় বিলীন হয়েছে ১৫টি মসজিদ, ১০টি বাজার ও ৩৭টি মাদরাসা। মাঠের পর মাঠ বিলীন হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। ভিটেমাটি হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় ২০ হাজার পরিবার। ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো বর্তমানে বিচ্ছিন্নভাবে পাশর্^বর্তী এলাকাগুলোর সড়কের পাশে বসতি স্থাপন করে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে।
তীব্র নদীভাঙনে গত সাত বছরে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে এখানকার ১০টি বিদ্যালয় ভবন-কাম ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র। এগুলোর মধ্যে রয়েছে চরবাসার, শেখ হাসিনা বাজার, আদর্শ গ্রাম, বাতানখালি, জয় বাজার, মুজিব বাজার, রেহানা বাজার, মসজিদ মার্কেট এম আলী, শাবনাজ বাজার হাজী গ্রাম ও কিল্লার বাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন-কাম ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র। জানা যায়, ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চানন্দী ইউনিয়নে নির্মিত হয়েছে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩০টি পাকা ভবন। যেগুলো ঘূর্ণিঝড়, বন্যা বা জলোচ্ছ্বাসের সময় আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হতো।
এ দিকে চানন্দী ইউনিয়নের জনতা বাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দোতলা ভবনটি দেড় মাস ধরে ঝুলে থাকার পর সোমবার মেঘনায় চিরতরে হারিয়ে যায়। ২০১৪ সালের দিকে স্থাপন করা হয় জনতা বাজার বহুমুখী আশ্রায়ণ কেন্দ্র ও প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনটি। বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ড সরকার এবং ইফাদের যৌথ অর্থায়নে চরউন্নয়ন ও বসতি স্থাপন প্রকল্প (সিডিএসপি-৪) কয়েক কোটি টাকায় নির্মাণ করে ভবনটি। নদীভাঙনের হুমকিতে রয়েছে পার্শ্ববর্তী হেমায়েতপুর ও ফরিদপুর এলাকার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র দু’টিও।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মুনির উদ্দিন জানান, ভাঙনকবলিত ভবনের সাথে বিলীন হয়ে যাচ্ছে প্রাথমিক পর্যায়ের হাজারো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন। ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসের সময় মানুষের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত এসব ভবনগুলো ছিল চরাঞ্চলের হাজার হাজার শিক্ষার্থীর বাতিঘর।
ভুক্তভোগীদের দাবি বর্ষার আগে হাতিয়ায় ভাঙনকবলিত এলাকায় নদীতীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা না হলে হাতিয়ার বিশাল আয়তনের এসব জনপদের সাধারণ মানুষের সহায় সম্পদ ধীরে ধীরে নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।
ফরিদপুর বাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জাফর ইকবাল বলেন, তার বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৭৬ এবং শিক্ষক আছেন চারজন। করোনাজনিত বন্ধের মধ্যে গত কয়েক মাসে মেঘনার ভাঙনে নদীটি বিদ্যালয়টির খুব কাছে চলে এসেছে। যেকোনো সময় বিদ্যালয়টি নদীতে ভেঙে পড়বে।
চানন্দী ইউনিয়নের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুর রহিম বলেন, ভবনগুলো সিডিএসপির মাধ্যমে করা হয়েছে, তাই আদালতের নির্দেশনা না থাকায় ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেখে নিলাম দেয়াও সম্ভব হচ্ছে না। এতে রাষ্ট্র হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, ভেঙে পড়া বিদ্যালয়গুলোর কর্মকাণ্ড অন্য কোনো জায়গায় অস্থায়ীভাবে স্থাপন করে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চালানোর পরিকল্পনা আছে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পরিচালনা কমিটিকে বলা হয়েছে।
হাতিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহবুব মোরশেদ জানান, নদীভাঙন রোধে তারা কাজ করছেন। একনেকে থাকা বিলটি পাস হলে দ্রুত ভাঙনরোধে কাজ শুরু করা হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement