২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
পাইকগাছায় সারের কৃত্রিম সঙ্কট

যথা সময়ে সার পাওয়া নিয়ে শঙ্কা

-

চলতি বোরো মৌসুমে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে খুলনার পাইকগাছায় সারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বিএডিসি ও বিসিআইসির ডিলাররা। এক দিকে করোনায় অর্থ সঙ্কট অন্য দিকে কৃষিতে সারের প্রয়োজন- দুইয়ে মিলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন কৃষকরা। প্রতিবাদ করলে ‘সার নেই’ ডিলারদের এমন সাফ জবাবে রীতিমতো দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে চাষাবাদের ভরা মৌসুমে সঠিক সময়ে জমিতে সার প্রয়োগ যেন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে কৃষকদের জন্য।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, কৃষকরা যাতে সময়মতো জমিতে সার দিতে পারেন সেটা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) সারা দেশের ডিলার নিয়োগের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে সার বিপণনের কাজটি করে থাকে। এ ছাড়া বিদেশ থেকে আমদানি করা সার বিপণনের জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও ডিলার নিয়োগ করে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সারা দেশের জেলা-উপজেলায় ‘সার-বীজ বিতরণ ও মূল্যায়ন কমিটি’ করে তার মাধ্যমে সার বিতরণ কার্যক্রম সমন্বয় করে। উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা পদাধিকার বলে এই মূল্যায়ন কমিটির প্রধান। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে পাইকগাছায় ডিলাররা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সারের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে কৃষকদের বেশি দামে সার কিনতে বাধ্য করছেন। এ ক্ষেত্রে মনিটরিং কমিটির কার্যত কোনো ভূমিকা দেখা যায় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সার ডিলারদের অনেকেই জানান, সারের পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় বিভিন্ন এলাকা থেকে অতিরিক্ত দামে সার কিনতে বাধ্য হওয়ায় সরকার নির্ধারিত মূল্যের বেশি দামে সার বিক্রি করতে হচ্ছে। তা ছাড়া এলাকায় চিকন দানার ইউরিয়ার চাহিদা বেশি থাকলেও মূলত তাদেরকে মোটা দানার ইউরিয়া সরবরাহ করা হয়। এ ক্ষেত্রে দাম বেশি দিলে জোটে চিকনদানার ইউরিয়া।
জানা যায়, সারের সরকার নির্ধারিত মূল্য হলো ইউরিয়া প্রতি বস্তা ৮০০ টাকা, এমওপি প্রতি বস্তা ৭৫০, ডিএপি প্রতি বস্তা ৮০০ এবং টিএসপি প্রতি বস্তা এক হাজার ১০০ টাকা। চাষিদের অভিযোগ, ডিলাররা বস্তাপ্রতি ইউরিয়ায় ১০০ টাকা, এমওপি ২০০ টাকা, ডিএপি ১০০ টাকা এবং টিএসপি প্রকারভেদে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত দাম নিচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে পাইকগাছায় বিএডিসি ও বিসিআইসি ডিলাররা মূলত তিনটি পরিবারের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হওয়ায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই তারা নিয়ন্ত্রণ করেন সার-বীজের বাজারদর।
সূত্র জানায়, ক্রেতাদের কেউ রসিদ দাবি করলে তাদেরকে সরকার নির্ধারিত দাম উল্লেখ করেই রশিদ দেয়া হচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করলে তার কাছে সার বিক্রি করা হচ্ছে না। বলছেন, অ্যানাউন্স বা বরাদ্দের সার শেষ, এখন যা আছে বাইরে থেকে অতিরিক্ত দামে কিনতে হয়েছে। কৃষক বা ক্রেতা বাঁচাতে তারা শুধুমাত্র উপকার করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডিলাররা তাদের নিজ নিজ দোকানে অল্প কিছু সার প্রদর্শনীর জন্য রাখলেও বেশির ভাগ ডিলার তাদের গুদাম থেকে গোপনে সার বিক্রি করছেন। অভিযোগে জানা যায়, পাইকগাছায় ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ১১ জন ডিলারকে মূলত কপিলমুনি কেন্দ্রিক দু’টি ও গজালিয়া কেন্দ্রিক একটি পরিবার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
এ প্রসঙ্গে পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম মোবাইল ফোনে বলেন, এই মুহূর্তে পাইকগাছায় সারের কোনো প্রকার সঙ্কট নেই। তবে বাজার মনিটরিংকালে বিভিন্ন সময় কৃষকদের অনেকেই তার কাছে অধিক মূল্যে সার বিক্রির বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। যদিও এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই ডিলারদের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, কৃষকদের একটি অংশ বাকিতে ডিলারদের কাছ থেকে সার কেনেন, সে ক্ষেত্রে দর-দামে কিছুটা তারতম্য থাকতে পারে। তবে উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় তিনটি পরিবার কর্তৃক বিসিআইসির ১১ জন ডিলারকে নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে তিনি বলেন, বেশ আগে থেকেই তারা ডিলার নিয়ে ব্যবসা করছেন। তবে বাজার মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে। কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) মহাব্যবস্থাপক গাজী আব্দুস সাত্তারের কাছে অধিক দামে সার বিক্রির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement