১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা সোনার চর

-

অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় একটি দ্বীপের নাম ‘সোনার চর’। দ্বীপটির বুকে তেমন কোনো বসতি না থাকলেও রয়েছে পাখির কলরব আর সাগরের ঢেউয়ের গর্জন। সবুজ বনায়ন আর উত্তাল সাগরের আছড়ে পড়া ঢেউগুলো কোনো চিত্রশিল্পীর রঙ-তুলির পরশ মনে হয়। ফেনিল নোনা জলে ভেজা তটরেখায় চলে লাল কাঁকড়ার ছোটাছুটি। স্বর্ণময় রূপ নিয়ে বঙ্গোপসাগরসংলগ্ন রাঙ্গাবালীর সমুদ্রকোলে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য নিয়ে জেগে আছে চরটি। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ও নগর থেকে বহু দূরের এই সৈকতের সৌন্দর্য এখনো অনেকের কাছেই অজানা।
অনেকেরই হয়তো বা ম্যানগ্রোভ আর ঝাউবাগানের শোঁ শোঁ শব্দ নির্জন একাকিত্বে সৈকতের বালুতে বসে শোনা হয়নি। দেখা হয়নি ক্ষুব্ধ সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের দৃশ্য। ঘোরা হয়নি নির্জন পরিবেশে ঝাউবনের মধ্য দিয়ে যাওয়া দিঘল পথে। সেই সাথে সুযোগ হয়নি শিশিরভেজা বালুতে লাল কাঁকড়ার আঁকা অনাবিল আলপনা দেখার।
সোনার চরে রয়েছে প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত। সূর্যাস্ত আর সূর্যোদয়ের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে কোনো দর্শনার্থীকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ছুটতে হয় না। একই স্থানে বসে এ দৃশ্য উপভোগ করা যায়। আর দ্বিমুখী সমুদ্রের স্রোতের কারণে পানির নিম্নমুখী টান লক্ষ করা যায় না। এর ফলে পর্যটকরা এখানে থাকবেন নিরাপদে। সৈকতের গা ঘেঁষে জেগে থাকা ঝাউবন এখানকার সৌন্দর্য আরো অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে। হরিণ, বুনো মহিষ, মেছোবাঘ, শূকর, উদসহ নানা প্রজাতির প্রাণী রয়েছে এখানে।
সোনার চরে আসা কারো সকালে উঠতে ঘড়ির কাঁটা দেখতে হয়না। বনের পাখিরাই অপেক্ষমাণ সময়ের আওয়াজ তোলে সর্বদা। কখন রাত বারোটা বাজল, কিংবা কখন ভোর তা ঘড়ি দেখে কারো বোঝার দরকার হয় না। এই সময়গুলোতে পাখি একযোগে আওয়াজ তুলে প্রত্যাশিত সময়ের কথাই মনে করিয়ে দেয়। শীত মৌসুমে স্থানীয় পাখির দলে যোগ দেয় হাজারো অতিথি পাখি। সাইবেরিয়ান হাঁস, সরাইল, গাঙচিলসহ নানা জাতের পাখির আগমন ঘটে এ সময়।
প্রভাত আর গোধূলির সময়ই সোনার চরের অন্যতম আকর্ষণ। পূর্ব আকাশের দিগন্ত ছুঁয়ে উঁকি দেয় ভোরের নতুন সূর্য আর শেষ বিকেলে রক্তরঙ সূর্যটা রক্তিম আভা ছড়িয়ে সমুদ্রের কোলে নীড় খোঁজে। তখন সোনার চরের সাগরের নীল জল স্বর্ণালি হয়ে ওঠে। গোধূলির আচ্ছন্নতায় ম্লান হয় সোনার চরের আলো। নিজের রূপের আয়নায় ঘোমটা টেনে আরেকটি নতুন সকালের অপেক্ষায় ঘুমিয়ে পড়ে সমুদ্রের কোলে জেগে ওঠা সোনার চর।
ভূখণ্ড পরিমাপের হিসাবে সোনার চরের আয়তন ১০ হাজার একর। চরের পশ্চিম দিকটা সামান্য ভাঙনের মুখে থাকলেও পূর্ব দিকে অনেক বিস্তৃত হচ্ছে। ক্রমেই এর আয়তন বেড়ে চলছে। চরটি দেখতে অনেকটা বাদামের দানার আকৃতির মতো। সোনার চর ও এর পাশের চর আণ্ডার মাঝখানে একসময় বড় নদী ছিল। চর পড়ে সে নদী এখন ছোট হয়ে গেছে। শুকনো সময়ে হেঁটেই পার হওয়া যায়। সোনার চর চ্যানেল সরু হয়ে গিয়ে বনের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়াও অগণিত চ্যানেল রয়েছে সোনার চরের আশপাশে। পর্যটকরা ঘুরতে পারেন নৌকা অথবা ট্রলার নিয়ে। চ্যানেলের দুই পাশজুড়ে বহু পুরনো ম্যানগ্রোভ আর ঝাউবন।
সোনার চরে সরাসরি সড়ক কিংবা নৌপথে যোগাযোগব্যবস্থা আজো হয়ে উঠেনি। জেলা শহর পটুয়াখালী থেকে গলাচিপা উপজেলায় পৌঁছাতে হবে। সেখান থেকে যেকোনো ভাড়াকৃত মোটরসাইকেলে পৌঁছাতে হবে আগুনমুখা নদীর মোহনায়। আগুনমুখা নদী পারি দিয়ে পৌঁছাতে হবে রাঙ্গাবালী উপজেলায়। এর পরে উপজেলার গহিনখালীর খেয়াঘাট থেকে বুড়াগৌরাঙ্গ নদী পাড়ি দিয়ে ট্রলারে যেতে হবে সোনার চর। বিত্তবানরা যেতে পারেন স্পিডবোট নিয়েও।
সোনার চরে রাত্রিযাপনের জন্য নিরাপদ আরামদায়ক ব্যবস্থা এখনো গড়ে ওঠেনি। তবে প্রশাসনের উদ্যোগে পর্যটকদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ছোট্ট তিন কক্ষের একটি বাংলো। রয়েছে বন বিভাগের ক্যাম্প। এসব স্থানে রাতে থাকার সুযোগ রয়েছে। চাইলে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখে ইঞ্জিন-চালিত নৌকা বা ট্রলারে মাত্র আধা ঘণ্টার মধ্যে চরমোন্তাজ ইউনিয়নে গিয়ে থাকার সুযোগ রয়েছে। সেখানে রয়েছে বন বিভাগ, বেসরকারি সংস্থা স্যাপ-বাংলাদেশ ও মহিলা উন্নয়ন সমিতির বাংলো।

 


আরো সংবাদ



premium cement
বান্দরবানের কেউক্রাডং পাহাড়ে যৌথ বাহিনীর অভিযান : আটক ৮, অস্ত্র উদ্ধার স্বাধীনতা সূচকে ১৬৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪১তম নাটোর পৌরসভা কার্যালয়ের ভিতরে দুপক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত কাঁঠালিয়ায় মাঠে ছাগল আনতে গিয়ে বজ্রপাতে কিশোরে মৃত্যু সালমান খানের বাড়িতে গুলির ঘটনায় গ্রেফতার ২ আরো দুই সদস্য বাড়িয়ে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন রাবির নতুন জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক ড. প্রণব কুমার পাণ্ডে অপরাধ না করেও আসামি হওয়া এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে : মির্জা ফখরুল লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদে স্নানোৎসবে নেমে শিশুর মৃত্যু ধূমপান করতে নিষেধ করায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা বড় বোনের বৌভাতের গিয়ে দুর্ঘটনায় স্কুলছাত্র নিহত

সকল