২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আবার ফেরির হর্নে সরগরম কাজিরহাট-আরিচা ঘাট

-

২০ বছর পর নতুন করে চালু হলো আরিচা-কাজিরহাট ফেরি সার্ভিস। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর ফেরি চলাচল উদ্বোধন করেন। এ ঘাট উদ্বোধন হওয়াতে যমুনা পাড়ের মানুষ আবার আশায় বুকবাধা শুরু করেছে।তারা দেখছে নতুন করে কর্মসংস্থানের সুযোগ।তাদের মধ্যে চলছে আনন্দের জোয়ার। আবার ফেরির হর্নে মুখরিত হবে আরিচা ঘাট, এটা তাদের নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে বলেও জানান স্থানীয়রা।
বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ও বেগম রোকেয়া নামের দু’টি ফেরি এই রুটে যুক্ত করা হয়েছে। বেগম রোকেয়া নামের ফেরিতে নৌপ্রতিমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্টরা কাজিরহাট পরিদর্শনে যান। মতিউর রহমান ফেরিটি ১৫টি ট্রাক নিয়ে আরিচা থেকে ছেড়ে যায়।
আরিচা-কাজিরহাট নৌপথের দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। আরিচা থেকে কাজিরহাট যেতে সময় লাগবে এক ঘণ্টা ৩০ মিনিট। নতুন ঘাট নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৪ কোটি টাকা। গত কয়েকদিন ধরেই মৃত আরিচা ঘাটে রাতে ফেরির সেই সার্চ লাইটের আলোর ঝলকানি, যাত্রী, হকার ও ফেরিওয়ালাদের হৈ-হুল্লোড় পড়ে গেছে। ফিরতে শুরু করেছে আরিচা নৌবন্দরের প্রাণচাঞ্চল্য।
জনশ্রুতি রয়েছে, ভারত-পাকিস্তান বিভাগের আগে থেকেই যমুনা নদীর পাড়ে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার আরিচা ঘাট ছিল দেশের একটি বড় নৌবন্দর। কলকাতা-আসাম রুটের জাহাজ স্টিমার এই ঘাটেই ভিড়ত। এখানে ছিল বড় বড় পাটের গুদাম। এই ঘাটকে ঘিরে আরিচায় গড়ে উঠেছিল জমজমাট ব্যবসা কেন্দ্র। পাকিস্তান আমলে এই ঘাটের গুরুত্ব আরো বেড়ে যায়।
জানা যায়, ১৯৬৪ সালে ঢাকা-আরিচা সড়ক চালু হওয়ার পর আরিচা থেকে যমুনা পার হয়ে নগরবাড়ি এবং আরিচা থেকে যমুনা-পদ্মা পার হয়ে গোয়ালন্দ ঘাটের সাথে চালু করা হয় ফেরি সার্ভিস। সেই সাথে আরিচা-নগরবাড়ি হয়ে ওঠে উত্তরবঙ্গ এবং আরিচা-গোয়ালন্দ হয়ে ওঠে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গের সড়ক যোগাযোগের অন্যতম প্রধান প্রবেশপথ।
১৯৬৩ সালে ৩১ মার্চ কর্ণফুলী নামে একটি ফেরি সার্ভিস দিয়েই আরিচা দৌলতদিয়া নৌরুটের যাত্রা শুরু হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দ্রুত বাড়তে থাকে আরিচা ঘাটের গুরুত্ব। একপর্যায়ে আরিচা ঘাটকে নৌবন্দরের মর্যাদা দেয়া হয়। এই ঘাট দিয়ে প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার যানবাহন পারাপার হতো। যাতায়াত ছিল গড় ৫০ হাজার মানুষের।
১৯৯৮ সালে যমুনা সেতু চালু হওয়ার পর আরিচা ঘাটের গুরুত্ব কমে যায়। তার ওপর আরিচা ঘাটের কাছে যমুনা নদীতে নাব্যতা কমে যায়। ২০০১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি নাব্যতা সঙ্কটের কারণে আরিচা থেকে ফেরিঘাট পাটুরিয়ায় স্থানান্তর করা হয়। মৃত্যু হয় এক সময়কার প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর আরিচা ঘাটের। শুধু রয়ে যায় কিছু লঞ্চ আর ইঞ্জিনচালিত নৌকা। তারপর থেকেই আরিচা ঘাটে নেমে আসে সুনসান নীরবতা। বন্ধ হয়ে যায় শত শত হোটেল-রেস্টুরেন্ট। ধস নেমে আসে বোর্ডিং ব্যবসায় আর বেকার হয়ে পড়ে শত শত কুলি। কিছুটা হলেও আবার স্বমহিমায় জেগে উঠবে আরিচাঘাটÑ এটাই এলাকাবাসীর প্রত্যাশা।নৌপ্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মানিকগঞ্জের আরিচা ও পাবনার কাজিরহাট নৌরুট আজ জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে পুনরায় ফেরি চলাচল শুরু হলো। শুষ্ক মৌসুমে ফেরি চলাচল শুরু হলেও আমাদের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বর্ষা মৌসুমে। নৌপথ ধরে রাখার জন্য শুষ্ক মৌসুমে কোনো সমস্যা হয় না। আমাদের বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগ শক্তিশালী থাকায় এ নৌপথ সচল রাখতে তারা সক্ষম হবে। ভবিষ্যতে চাহিদা অনুযায়ী এ নৌ রুটে আরো ফেরি যুক্ত করা হবে। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেনÑ সংসদ সদস্য এ এম নাঈমুর রহমান দুর্জয়, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক ও বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান সৈয়দ তাজুল ইসলাম, শিবালয় উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউর রহমান খান জানু প্রমুখ।


আরো সংবাদ



premium cement