২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চার বছর ধরে দুর্ভোগে লোহাগড়ার ৩০ গ্রামের মানুষ

-

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার সত্রহাজারী-ব্রাহ্মণডাঙ্গা সড়ক নির্মাণে দুই ঠিকাদারের অনিয়ম ও দুর্নীতিতে চার বছর ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে হান্দলা গ্রামসহ তিন ইউনিয়নের অন্তত ৩০ গ্রামের মানুষ। সড়কটি পাকাকরণের ক্ষেত্রে পোড়ামাটিসহ নিম্নমানের খোয়া ব্যবহার ও শিডিউল মোতাবেক কাজ না করায় এবার দুদকের একটি টিম সড়কটি পরিদর্শন করেছে। এ দিকে এলাকাবাসী দ্রুত সড়কটি পাকাকরণের কাজ সম্পন্নের মাধ্যমে দুর্ভোগ নিরসনের দাবি জানিয়েছেন।
এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে লোহাগড়া উপজেলার সত্রহাজারী-ব্রাহ্মণডাঙ্গা সড়কের হান্দলা থেকে ব্রাহ্মণডাঙ্গা পূর্বপাড়া মাদরাসা পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণের কাজ শুরু হয়। প্রথমে কাজটি করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হন ফরিদপুরের ঠিকাদার আকরাম হোসেন রাজা। তিনি প্রথমে রাস্তাটি খুঁড়ে রেখে ব্যবসায়িক সমস্যার কারণে কাজটি ফেলে রেখে চলে যান। এরপরই হান্দলা গ্রামসহ পাশের গ্রামবাসীর দুর্ভোগ শুরু হয়।
সড়কটি পুনরায় টেন্ডার হলে কাজ পান নড়াইলের ইডেন এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কাজটি কিনে নেন লাহুড়িয়া গ্রামের ঠিকাদার কামরুজ্জামান কোমর। এক বছর আগে কাজ শুরু করেই তিনি পোড়ামাটি ও নিম্নমানের খোয়া ব্যবহার শুরু করেন। স্থানীয় জনগণের বাধায় ছয় মাস কাজ বন্ধ থাকার পর তিনি নিম্নমানের খোয়া সরিয়ে নিয়ে নেন। পুনরায় গত বছরের ডিসেম্বর মাসে কাজ শুরু করেন ওই ঠিকাদার। রাস্তায় প্রথম স্তরে ১০ ইঞ্চি বালুর দেয়ার পর দ্বিতীয় স্তরে বালু খোয়ার সংমিশ্রণের কাজ শুরু হয়। অর্ধেক বালু ও অর্ধেক খোয়ার সংমিশ্রণে ছয় ইঞ্চি পুরু করার কথা থাকলেও সেখানে সর্বোচ্চ ২৫ ভাগ খোয়া এবং ৭৫ ভাগ বালু দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া যে খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে তা অত্যন্ত নিম্নমানের।
এ ব্যাপারে ঠিকাদার কামরুজ্জামান কোমর বলেন, কিছু খোয়া খারাপ এসেছে। রাস্তায় বালুর সাথে খোয়ার মিশ্রণ কম হয়েছে। তবে কাজ এখনো শেষ হয়নি। আরো খোয়া দেয়া হবে। খারাপ খোয়া যা এসেছে। এরপর থেকে ভালো খোয়া দিয়ে কাজ করা হবে।
এলজিইডির লোহাগড়া উপজেলা প্রকৌশলী অভিজিৎ মজুমদার বলেন, আধা কিলোমিটার অংশে খোয়া নিম্নমানের দেয়া হয়েছে। ওই খোয়া সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। মিশ্রণে খোয়ার পরিমাণও কম আছে। এ নিয়ে যথাযথভাবে কাজ করতে ঠিকাদারকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
এলজিইডি নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী সুজায়েত হোসেন বলেন, ঠিকাদারকে শিডিউল মেনে কাজ করতে হবে। খারাপ খোয়া সরিয়ে নিয়ে পুনরায় কাজ করার জন্য বলা হয়েছে। প্রয়োজনবোধে চুক্তি বাতিল করে পুনরায় টেন্ডার আহ্বান করা হবে। কিন্তু কাজের মান নিয়ে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।
এ দিকে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের একটি প্রতিনিধি দল সড়কটি পরিদর্শন করেছে। দুদকের যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাজমুচ্ছায়াদাতের নেতৃত্বে তদন্তকালে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। পরিদর্শনকালে উপপরিচালক মোহাম্মদ নাজমুচ্ছায়াদাত বলেন, দুদুকের হটলাইন ১০৬ নম্বরে অভিযোগের ভিত্তিতে ঢাকা থেকে সড়কটি পরিদর্শনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একদম পুরনো খুবই খারাপ ইটের খোয়া দেয়া হয়েছে। বালুর চেয়ে খোয়ার পরিমাণও কম। এগুলো তুলে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছি।
এলাকাবাসীর দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে খারাপ উপকরণ সরিয়ে নিয়ে কাজ চলমান রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।


আরো সংবাদ



premium cement