২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

কাজিরহাট-আরিচা রুটে ফেরি চালু হচ্ছে এ মাসেই

-

চলতি জানুয়ারির শেষ দিকেই পাবনার কাজিরহাট থেকে মানিকগঞ্জের আরিচা নৌরুটে চালু হচ্ছে ফেরি সার্ভিস। নৌ-মন্ত্রণালয় প্রায় দুই যুগ পর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মাত্র এক ঘণ্টায় নদী পার হওয়ার আনন্দ এখন উত্তরাঞ্চলের ১০ জেলায়। তবে যমুনা নদীতে ২০ থেকে ২৫টি চর ও প্রচণ্ড নাব্যতা সঙ্কট মোকাবেলা করে রুটটি সচল রাখা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, প্রায় ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীপথের দুই পাড়ে ফেরিঘাট নির্মাণ প্রায় শেষের পথে। এই রুটে ফেরি সার্ভিস চালু হলে যানবাহন চলাচলে সময় ও জ্বালানি সাশ্রয়ের পাশাপাশি লাখো যাত্রীর দুর্ভোগ লাঘব হবে।
পাবনা, নাটোর, রাজশাহী, চাঁপাইনবানগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের ১০ জেলার লাখ লাখ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজিরহাট থেকে স্পিডবোট ও শ্যালো ইঞ্জিন চালিত নৌকায় আরিচা হয়ে ঢাকা যাতায়াত করছে। বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে সড়কপথে ঢাকা পৌঁছাতে যেখানে ছয়-সাত ঘণ্টা সময় লাগে, নদীপথে সেখানে লাগে মাত্র তিন-চার ঘণ্টা। এ দিকে সেতুপথে ভাড়াও বেশি। তাই নিম্ন আয়ের মানুষেরা জীবনের ঝুঁকি সত্ত্বেও ট্রলারে নদী পার হয়।
বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক জানান, ফেরিতে এ পথ পাড়ি দেয়া যাবে এক থেকে দেড় ঘণ্টায়। চলতি মাসের শেষ দিকেই এ রুটে ফেরি সার্ভিস চালু করার আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সরেজমিন নগরবাড়ী কাজিরহাট ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯৬৪ সালে নগরবাড়ী-আরিচা রুটের ফেরিচলাচল শুরু হওয়ার পর থেকেই নগরবাড়ী বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এ ছাড়া উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাতি লাভ করে। প্রতিদিন নগরবাড়ী হয়ে দুই শতাধিক যাত্রীবাহী কোচ ও তিন সহস্রাধিক পণ্যবাহী ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন রাজধানী ঢাকাসহ পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় প্রবেশ করত। আবার প্রতিদিন যাত্রী ও পণ্য নিয়ে সমানসংখ্যক বাস-ট্রাক ঢাকাসহ পূর্বাঞ্চল থেকে আরিচা হয়ে উত্তরাঞ্চলে প্রবেশ করত।
ফেরি সার্ভিসকে কেন্দ্র করে নগরবাড়ীতে গড়ে উঠেছিল শতাধিক আবাসিক হোটেল, মোটেল, খাবার হোটেল, রেষ্টুরেন্ট, পান-বিড়ির দোকান। দোকান কর্মচারী, শ্রমিক, হকারদের জীবিকার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল এই ঘাট। এতে স্থানীয় আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটে। ১৯৯৭ সালে যমুনা সেতু চালুর পর নগরবাড়ী-পাটুরিয়া রুটে ফেরি সার্ভিস বন্ধ করে দেয়া হয়। বন্ধ হয়ে যায় ঘাটকেন্দ্রিক ব্যস্ততা। সুনসান নীরবতায় কর্মশূন্য হয় কয়েক হাজার মানুষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের অন্যতম নৌ-বন্দর নগরবাড়ী পূর্ব পাশে বিশাল চর জেগে ওঠে। ফলে নগরবাড়ীর দুই কিলোমিটার ভাটিতে কাজিরহাট থেকে পাটুরিয়া রুটে প্রায় এক যুগ পর ২০০৮ সালের ২ মে নগরবাড়ী-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়। বিকলের অজুহাতে চালুর ২৪ ঘণ্টা পর বন্ধ করে দেয়া হয় একমাত্র ফেরিটি। সেই থেকে এই রুটে ফেরি চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে।
নগরবাড়ীর ব্যবসায়ীরা জানান, যমুনা সেতুর চেয়ে স্বল্প খরচে ও সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও কাঁচামালবাহী এসব ট্রাক নগরবাড়ী ঘাট হয়ে রাজধানীর ঢাকার উদ্দেশে পাড়ি দিত। মানিকগঞ্জ জেলার ট্রাকচালক আজিবর রহমান জানান, যমুনা সেতু হয়ে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পথ ঘুরে উত্তরাঞ্চলে যাতায়াত করতে হয়। এতে সময় ও জ্বালানি খরচ বেশি লাগে। ফেরি সার্ভিস চালু হলে দুই পারের ব্যবসাবাণিজ্যে আরো প্রসার হবে। অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন এ অঞ্চলের কৃষক, পরিবহন মালিক-শ্রমিক, ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের মানুষ।


আরো সংবাদ



premium cement