২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হুমকিতে কলাপাড়ার সবুজবেষ্টনী বেপরোয়া বনদস্যুরা

বন বিভাগের কলাপাড়া রেঞ্জ থেকে বনদস্যুদের কেটে নেয়া গাছের কিছু গুঁড়ি (বাঁয়ে); কেটে ফেলা গাছের গোড়া : নয়া দিগন্ত -

পটুয়াখালীর কলাপাড়া রেঞ্জের সবুজবেষ্টনী কিছু বনখেকোর কারণে হুমকির মুখে পড়েছে। বন বিভাগের কিছু কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় রাতের আঁধারে দিনে দিনে বনায়নের গাছ উজাড় করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও ভূমি অফিসের কিছু লোক এই কাজে জড়িত বলেও অভিযোগ রয়েছে। বন বিভাগের বিস্তীর্ণ জায়গা বেদখলে চলে গেলেও উদ্ধারে বন বিভাগের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় বনখেকোরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
বালিয়াতলী খেয়াঘাট এলাকার গোলপাতা বনটি কেটে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে দোকান। পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটার জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার পূর্ব দিকে বন উজাড় করে জমি বানিয়ে চলছে চাষাবাদ। ভূমি অফিসের অভিযুক্তদের কারণেও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে মধুখালীর ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। এসব বনাঞ্চল চাষযোগ্য জমি দেখিয়ে বন্দোবস্ত দেয়ায় সেখানে আরো ১০ বছর আগে থেকে প্রাচীন শত শত ছইলা, কেওড়া, বাইন গাছ কেটে উজাড় করা হয়েছে। সেখানে নির্মিত হয়েছে বসতবাড়ি।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, বনের বিভিন্ন স্থানে নামে-বেনামে বায়না মূল্যে জমি বেচা-কেনার সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়েছে। তারা এসব জমির মালিক কিভাবে হলেন তা নিয়েও প্রশ্ন স্থানীয়দের। স্থানীয় প্রশাসন গত ২৭ নভেম্বর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গঙ্গামতি ঝাউবাগান এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন বনদস্যুকে ঝাউগাছ কেটে নিয়ে যেতে দেখেন। গঙ্গামতি সংরক্ষিত বন থেকে ঝাউগাছ কাটার সময় শাহজাহান সিকদার ও লিটন প্যাদা নামের দু’জনকে আটক করে কুয়াকাটা নৌ-পুলিশ। একই সময় তাদের কাছ থেকে ছয়টি ঝাউগাছ উদ্ধার করা হয়।
সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৪ জানুয়ারি রাতের আঁধারে ৩০টি গাছ কেটে নিলে বন বিভাগ পরিকল্পিতভাবে বনায়ন উজাড়ের অভিযোগে ১৭ জানুয়ারি তৎকালীন বিট কর্মকর্তা পারভেজ বন আইনে কলাপাড়া থানায় একটি মামলা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে দ্বিতীয় দফায় চক্রটি আবার ২৭ জানুয়ারি একইভাবে ৩১টি কাজ কেটে নেয়। দেখা যায়, শত বছরের পুরনো বনটির এক- তৃতীয়াংশ সাগরে বিলীন হলেও বাকি অংশ বনদস্যুদের থাবায় উজাড় হতে বসেছে। সাগরের ভাঙনে উপড়ে পড়া গাছগুলো কেটে নিচ্ছে তারা।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, ১৯৬৭ সালে বাবলা ও কড়ই গাছ রোপণ করে গঙ্গামতি বনাঞ্চল সৃষ্টি করা হলেও আশির দশকে প্রাকৃতিকভাবে এ বনাঞ্চলে ছইলা, কেওড়া ও বাইনগাছ জন্মায়। প্রায় আট কিলোমিটারের এ বনাঞ্চলের এক- তৃতীয়াংশ সাগরের ভাঙনে বিলীন হলেও এখন উজাড় করছে বনদস্যুরা। রাতের আঁধারে গাছ কেটে কেরোসিন বা পেট্রল দিয়ে পুড়িয়ে সদ্যকাটা গাছের আলামতও নষ্ট করে দিচ্ছে তারা। অভিযোগ রয়েছে, ধুলাসার ও কুয়াকাটার একদল চিহ্নিত বনদস্যু গাছ কেটে নেয়ার সাথে জড়িত। এ বনাঞ্চল থেকে গাছ কেটে ট্রলারে করে সহজেই পাচার করছে বনদস্যুরা। ধুলাসার-গঙ্গামতি বিট কর্মকর্তা শহিদ উদ্দিন বলেন, ১২ নভেম্বর রাতের আঁধারে সঙ্ঘবদ্ধ একটি চক্র বনের মধ্য থেকে ঝাউগাছ কেটে নিচ্ছে এমন সংবাদে রাত ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে বন উজাড়কারী কাউকে পাওয়া যায়নি।
ধুলাসার ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল আকন বলেন, এ অঞ্চলের বন আমাদের পরিবেশ রক্ষাসহ প্রলয়ঙ্করী সিডর, আইলার মতো ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় থেকে আমাদের রক্ষা করে থাকে। তাই এ বন যারা উজাড় করছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রিকালচার অনুষদের ডিন ডা: মাইনুল হাসান বলেন, বাংলাদেশে জন্মে এমন প্রতিটি উদ্ভিদ প্রজাতিই দেশে ও জীববৈচিত্র্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের বর্ধিত জনসংখ্যার প্রয়োজন মেটাতে প্রতিনিয়ত দেশের জীববৈচিত্র্যের ওপর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে এবং বিলুপ্তির সম্মুখীন হচ্ছে। নানাবিধ মানুষ্য সৃষ্ট কারণ যেমন নির্বিচারে বনভূমি ধবংস, মাত্রাতিরিক্ত প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ, উদ্ভিদের আবাসস্থলের পরিবর্তন এবং প্র্রাকৃতিক কারণে বাংলাদেশের অনেক উদ্ভিদ প্রজাতির অস্তিত্ব বর্তমানে হুমকির মুখে পড়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement
গণকবরে প্রিয়জনদের খোঁজ কক্সবাজারে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, স্বজনদের হাসপাতাল ঘেরাও বঙ্গোপসাগরে ১২ নাবিকসহ কার্গো জাহাজডুবি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশকে ‘নেট সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ হিসেবে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র রাজশাহীতে তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি রাজশাহীতে টানা তাপদাহ থেকে বাঁচতে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা শরীয়তপুরে তৃষ্ণার্ত মানুষের মাঝে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ জামায়াতের এক শ্রেণিতে ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী নয় : শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নজিরবিহীন দুর্নীতির মহারাজার আত্মকথা ফতুল্লায় ১০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে নির্মাণকাজ বন্ধ, মারধরে আহত ২, মামলা পার্বত্যাঞ্চলে সেনাবাহিনী: সাম্প্রতিক ভাবনা

সকল