২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অসময়ে ভাঙছে গড়াই নদী বিলীন বেড়িবাঁধ ও স্থাপনা

-

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত গড়াই নদীতে দেখা দিয়েছে অসময়ে ভাঙন। শুষ্ক মৌসুমে গড়াই নদীর ভাঙনে এক সপ্তাহের মধ্যে নদীতে বিলীন হয়েছে বেড়িবাঁধ, বসতভিটা, পাকা রাস্তা, কৃষিজমি ও পাকা স্থাপনা। প্রতি বছর গড়াই নদীর পাড় ভাঙছে। এই ভাঙনে নিঃস্ব হয়েছে শতাধিক পরিবার। তীব্র নদীভাঙনের আশঙ্কায় পড়েছে বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ও জঙ্গল ইউনিয়নের গড়াই পাড়ের কয়েক হাজার পরিবার। এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতি বছর গড়াই নদীর পাড় ভাঙে। সরকার ভাঙন রোধে স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ নেয় না। ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে পানি উন্নয়ন বোর্ড নামমাত্র কিছু জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করে। তাদের অভিযোগ এতে করে সরকারের লাখ লাখ টাকা ক্ষতি হচ্ছে। যা লোপাট করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
প্রতি বছর পানি বৃদ্ধি ও কমার সাথে সাথে গড়াই নদীতে ভাঙন দেখা দিলেও এ বছরের চিত্র পুরোটাই ভিন্ন। শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। ভাঙনে নদীপাড়ের মানুষ তাদের ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। ভেঙে গেছে জঙ্গল ইউনিয়নের সমাধিনগর-নারুয়ার বেড়িবাঁধ। পাঁচ শতাধিক বসতভিটা ও পাঁচ হেক্টর কৃষি আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ফলে দেশের পেঁয়াজ উৎপাদনের অন্যতম জেলা হিসেবে পরিচিত রাজবাড়ী জেলার এই নারুয়া ইউনিয়নের কোনাগ্রাম, জামসাপুর, চর-ঘিকমলার পেঁয়াজ চাষের ফসলি জমিও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহের ভাঙনে বেড়িবাঁধ, বাড়িঘর, রাস্তা, গাছপালা ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। উপজেলার সবচেয়ে বেশি ভাঙনের কবলে পড়েছে জঙ্গল ইউনিয়নের সমাধিনগর, আগ-পটোরা, পুষ-আমলা গ্রামসহ নারুয়া ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকা। সেই সাথে বেড়িবাঁধ সড়কের ৩০০ মিটার অংশ ধসে পড়ায় সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সতীষ মন্ডল বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই গড়াই নদীর বিভিন্ন অংশে ভাঙন ও নদীপাড়ের সড়কে ফাটল দেখা দেয়। এখনো নদীর পাড়ের অনেক জায়গায় নতুন করে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। ফলে সেখান থেকে বাসিন্দারা ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, গড়াই নদীর ভাঙনে সমাধিনগর-নারুয়া বেড়িবাঁধের ৩০০ মিটার ভেঙে গেছে। এতে করে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিকল্প সড়ক দিয়ে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও অটোভ্যান ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। অপরদিকে জঙ্গল ইউনিয়নের পুষআমলা গ্রামের বেশ কিছু বসতভিটা ও কৃষি আবাদি জমি কয়েকদিন আগে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। অনেকে নিজেদের রক্ষার জন্য ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে পাকারাস্তা ও পাকা স্থাপনা বিলীন হয়েছে।
ভাঙন এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, নদীভাঙনের তাণ্ডব শুরু হয়েছে নারুয়া ইউনিয়নের মরাবিলা খেয়াঘাট থেকে শুরু হয়ে নারুয়া গ্রাম পর্যন্ত। মরাবিলা গ্রামের বাসিন্দারা জানান, গড়াই নদী তাদের পূর্ব পুরুষের ভিটা মাটি গ্রাস করেছে। আর ঘিকমলা বাজার, থেকে মরাবিলা কোনাগ্রাম হয়ে নারুয়া বাজারের পাকা রাস্তাটির কিছু অংশ বিলীন হয়ে গেছে। মরাবিলা চর ঘিকমলার ফসলি মাঠে নদীর পানি প্রবেশ করলে ফসলি জমির উর্বরতা নষ্ট হবে। এ দিকে নারুয়া গ্রামের নদীসংলগ্ন বাড়িঘর এবারের নদী আগ্রাসনে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মরাবিলা গ্রামের বাসিন্দারা জানান, গড়াই নদী তাদের শত বছরের পুরাতন পূর্বপুরুষের ভিটামাটি গ্রাস করেছে।
এলাকাবাসীর জোর দাবি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে সমাধান করবে। তাহলেই বেঁচে যাবে নারুয়া ইউনিয়নের কয়েক গ্রামের কয়েক হাজার অসহায় মানুষের ভিটেবাড়ি ও ফসলি জমি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির কথা স্বীকার করে বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসীনতার কারণে নারুয়া ও জঙ্গল ইউনিয়নের শত শত ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। বালুর বস্তার পরিবর্তে তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করে অন্য স্থানে ঘর নির্মাণ করলে সরকারের অর্থ খরচ কম হবে এবং নদীপাড়ের মানুষও উপকৃত হবে।
নদীভাঙন কবলিত এলাকার বাসিন্দা কালিপদ বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন, কয়েক বছর ধরে নদীভাঙন অব্যাহত থাকলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড। বর্তমানে নদীপাড়ের শত শত স্থানে বড় আকারের ফাটল দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহে গড়াই নদীর আধা কিলোমিটার অংশ ভেঙে গেছে।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল আহাদ বলেন, গড়াই নদীর ভাঙনকবলিত সম্পূর্ণ অংশ মেরামত করা সম্ভব নয়। বর্তমান ভাঙনকবলিত স্থান পরিদর্শন করা হয়েছে। গুরুত্বপূূর্ণ ভাঙনকবলিত স্থানগুলো মেরামতসহ ভাঙনরোধে এক কোটি ১৭ লাখ টাকার চাহিদা দেয়া হয়েছে। সেটি অনুমোদন হলে ভাঙনরোধে কাজ শুরু হবে।


আরো সংবাদ



premium cement